লুটপাটে কোনঠাশা তৃণমূল আওয়ামীলীগ: গোলাপগঞ্জে নাহিদের বিশেষ প্রতিনিধি মিসবাহ অপ্রতিরোধ্য

প্রকাশিত: ১০:১০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০১৯

লুটপাটে কোনঠাশা তৃণমূল আওয়ামীলীগ: গোলাপগঞ্জে নাহিদের বিশেষ প্রতিনিধি মিসবাহ অপ্রতিরোধ্য

Manual6 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৬ আসনে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের অনুসারীদের হাতে জিম্মি প্রশাসন। নিয়ন্ত্রণ আর উন্নয়নের নামে লুটপাটের পাশাপাশি কোনঠাশা করে রাখা হয়েছে তৃণমূল আওয়ামীলীগকে। ক্ষোভে, দুঃখে, অপমানে প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতারা কেউ কেউ দল ছাড়ার প্রস্ততি নিচ্ছেন আবার কেউ কেউ চরম অবমূল্যায়ন, হয়রানি মামলায় জড়িয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের প্রভাবেই তার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মিসবাহসহ তার বলয়ের হাতে জিম্মি গোলাপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সব কয়টি সরকারি দপ্তর। সাবেক মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে যেনো তারাই স্থানীয় মন্ত্রী-এমপি। এমপি/মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন,অমুক-তমুক পরিচয়ে গুটিকয়েক ব্যক্তির দাপট, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অযাচিত আচরণ, প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ এবং উন্নয়নের নামে লুটপাটের স্বঘোষিত গডফাদার মিসবাহকে সহযোগীতা করেন পার্শ্ববর্তী বিয়ানীবাজারের নাহিদ বলয়ের কতিপয় কিছু নেতা। থানায় বসে নিজ দলের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা হয়রানী করে নিজের ক্ষমতা দেখাতে আর অর্থের বিনিময়ে ধরা-ছাড়ার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন মিসবাহ নিজেই।

গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ঘোগারগুল গ্রামের সৈয়দ কুতুব আলীর ছেলে মিসবাহ উদ্দিন উরফে সৈয়দ মিসবাহ’র কোন রকম ব্যবসা বানিজ্য না থাকলেও নাহিদের নাম-ই তার মুলপুঁজি। ২০০৩ সালে গোলাপগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হলে ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পরই তার ভাগ্যর চাকা খোলে যায়। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। সিলেট ও গোলাপগঞ্জ শহরে প্রায় ৫টি স্থানে রয়েছে মিসবাহ’র ব্যক্তিগত কার্যালয়। অনেকে তার কার্যালয় গুলোকে তাড়িয়া ছাড়া দোকান বলেই সম্বোধন করতে শুনা যায়। গোলাপগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা প্রতিষ্টান থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ এখন মিসবাহ ও তার অনুসারী আলিম উদ্দিন বাবলু, আরজুমন্দ আলী, সেলিম মেম্বার উরফে ছখাই সেলিম, ভাইস চেয়ারম্যান মনসুর, সুজন শর্মা, কাউন্সিলর রুহিন, সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদ আহমদ, ইসমাইল আলী, ওবায়দুল মেম্বার, নিরেশ বিশ্বাসের হাতে।

Manual2 Ad Code

এসব নেতারা রয়েছেন আবার বিভিন্ন দপ্তর দেখবালের দায়িত্বে। উপজেলা জুড়ে শত-শত কোটি টাকার দূর্নীতি করলেও সবাই ভয়ে নিশ্চুপ। কারণ মিসবাহ’র গাড়ে রয়েছে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদের হাত, আর অনুসারীদের উপরে রয়েছে মিসবাহ’র আর্শিবাদ। সম্প্রতি গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্তিতে। নুরুল ইসলাম নাহিদ নিজের বলয়ের নেতা মিসবাহকে সাধারণ সম্পাদক করতে না পারায় উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিকে ঝুলিয়ে রেখেছেন। কাউন্সিলে তার বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত সৈয়দ মিসবাহকে সাধারণ সম্পাদক করে সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি গঠনের চেষ্টা করলে উপজেলার তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তা মেনে নেননি। এ নিয়ে হট্টগোল শুরু হলে পুলিশি পাহারায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তিনি। মসজিদ-মন্দির-স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও রাস্তা সংস্কারের নামে বরাদ্দ। টিআর-কাবিখা-কাবিটা প্রকল্প বরাদ্দের ৫০ ভাগ লুটে খাচ্ছেন স্থানীয় এমপির বিশেষ প্রতিনিধি মিসবাহ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা। উপজেলায় বরাদ্দকৃত অর্থের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশেরই কোনো কাজ হয় না।

Manual4 Ad Code

টিআর ও কাবিখার বরাদ্দে উন্নয়নের নামে উপজেলা পর্যায়ে গড়ে উঠেছে ‘লুটে খা’ মিসবাহ সিন্ডিকেট। জানা গেছে, কমিউনিস্ট পার্টি থেকে নরুল ইসলাম নাহিদ আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার পর কোনঠাশা দলের প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাকর্মী। কোন্দলের আগুনে পুড়ছে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ। সদর থেকে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যন্ত নেতাকর্মীরা বহুধা বিভক্ত। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, যুবলীগ ছাত্রলীগেও একই অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হতাশার শেষ নেই। ২০০৪ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের পর আর কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিলেও শিক্ষামন্ত্রীর বিশেষ প্রতিনিধি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সৈয়দ মিছবাহ উদ্দিনের বাধার কারণে তা আটকে থাকে বছরের পর বছর। এতে পদবঞ্চিত হচ্ছেন দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা। দলের একটি সূত্র জানায়, সৈয়দ মিছবাহ উদ্দিনের নিজস্ব লোক নেই, তাই কোন্দলকে পুঁজি করে মন্ত্রীর বিশেষ প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে তিনি রাজনীতি করছেন। তিনি চান না দলের নতুন কমিটি গঠন হোক। একই অবস্থা করে রেখেছেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগেও।

Manual7 Ad Code

এরমধ্যে একযুগ পার হয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির। যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদের মধ্যে কেউ বিবাহিত, কেউ সন্তানের জনক। উপজেলা যুবলীগের মেয়াদ চলে গেছে ১৫ বছর আগে। নামে মাত্র আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে যুবলীগের কার্যক্রম। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নরুল ইসলাম নাহিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, ‘বর্তমানে বিশেষ সহকারী, আস্থাভাজন ও হাইব্রিডদের কাছে জিম্মি উপজেলা ত্যাগী পরিক্ষিত দলীয় নেতাকর্মীরা। কমিটি করতে চাইলেও এরা বাধা হয়ে দাড়ান। যার ফলে আওয়ামী লীগের কোন কমিটি নেই ১০ বছর যাবত। উপজেলা আওয়ামী লীগ এখন ধবংসের দ্বারপ্রান্তে। এমপির বিশেষ সহকারী, আস্থাভাজন ও হাইব্রিডরা লুটেপুটে খাচ্ছে সরকারে সকল বরাদ্ধ। তাই নাহিদ আওয়ামী লীগে যোগ দিলে দলে চরম কোণঠাসা হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুর আরেক ঘনিষ্ঠজন আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ বিয়ানীবাজারের শেখ ওয়াহিদুর রহমান ক্ষোভে তখন তিনি একটি গান লিখেছিলেন, ‘জাল টানে ওয়াহিদে, মাছ খায় নাহিদে’।

২০১৭ সালের ২৩ জুলাই এ সংক্রান্ত একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক যুগান্তর। কিন্তু নেওয়া হয়নি মিসবাহ গংদের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রদক্ষেপ। এদিকে সম্প্রতি সিলেটের সরকারি এলপি গ্যাস সিলিন্ডার জালিয়াতির মূলহোতা হিসেবে উঠে এসেছে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন ও তার ভাইয়ের নাম। সৈয়দ মিসবাহ নিয়ন্ত্রণ করতেন সিলেটের গ্যাস সিলিন্ডার জালিয়াত সিন্ডিকেট। পুলিশ তদন্তে সত্যতা পাওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে মামলা করতে সাহস পায়নি প্রশাসন। উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্টানের উন্নয়নের নামে চলছে হরিলুট। বাদ নেই শিক্ষক-চৌকিদার-পিয়ন নিয়োগ বানিজ্য কিংবা বদলী বাণিজ্য। গত বছরের ১লা মার্চ গোলাপগঞ্জ উপজেলার কালিকৃষ্ণপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ শরিফুল্লাহ সৈয়দ মিসবাহ’র লুটপাটের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ সম্মেলনে সব চিত্র তুলে ধরেন। মিসবাহ’র অনুসারী আরজুমন্দ আলী নিয়ন্ত্রণ করেন উপজেলার সব কয়টি জলমহাল,খাল-বিল। প্রতি বছর মিসবাহ’র শেল্টারে চলে হরিলুট। ফলে হাজার-হাজার মৎস্যজীবি মানুষ তাদের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সাবেক মন্ত্রীর বিশেষ প্রতিনিধি মিসবাহ’র নিয়ন্ত্রনে গোলাপগঞ্জের সুরমা নদীর বালু মহাল প্রতি বছর চলে অবৈধ ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন। এভাবে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় চলছে সৈয়দ মিসবাহ ও তার অনুসারীদের রাম-রাজত্ব।

Manual3 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2019
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  

সর্বশেষ খবর

………………………..