নারীরা সৌদি আরব যেতে চাইলে আমরা বাধা দিতে চাই না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৭:২০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০১৯

নারীরা সৌদি আরব যেতে চাইলে আমরা বাধা দিতে চাই না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

Manual5 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : একটু ভালো থাকার আশায় গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে যাচ্ছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। কিন্তু ধর্ষণসহ নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরে আসছে তাদের বড় একটি অংশ। নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যাও করছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে সৌদি আরবে নারীকর্মী পাঠানো বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন মানবাধিকার কর্মী ও অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।

তবে ফেরত আসা ও মারার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য নয় জানিয়ে সরকার বলছে, সৌদি আরবে নারীকর্মী পাঠানো বন্ধ করার পরিকল্পনা নেই।

বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, নারীদের আমরা পেছনে ফেলে রাখতে চাই না। আমরা বৈষম্য করতে চাই না। নারীরা সৌদি আরব যেতে চাইলে আমরা বাধা দিতে চাই না। কারণ, আমাদের দেশে নারী-পুরুষ সমান। প্রধানমন্ত্রী নারীদের যেভাবে উৎসাহ দিয়েছেন, তাদের আমরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে রাখতে চাই না।

সৌদিতে কাজ করতে গিয়ে নারীরা ধর্ষিত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অন্দরমহলে কাজ করেন তারা সেখানে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তখন তারা অভিযোগ করলে আমরা সৌদি সরকারকে জানাই। তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু অনেক সময় অভিযোগটা সেখানে তারা বলে না।

ড. মোমেন বলেন, সৌদি আরবে আমাদের অনেক লোক গেছে। কিছু কিছু লোক নির্যাতিত হচ্ছে। তাদের জন্য আমরা হাউজিংয়ের (সেফ হাউস) ব্যবস্থা করেছি। কিছু কিছু ফেরতও এনেছি।

Manual4 Ad Code

নারী নির্যাতন বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব যদি হয় আমরা সৌদি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করব, তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবে। অনেক সময় এসব তথ্য সেদেশে থাকতে পাওয়া যায় না। কর্মীরা দেশে ফিরে অভিযোগ করেন।

অভিযোগ করার মতো সুযোগ সেখানে থাকে না সাংবাদিকদের এমন কথার প্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, এ তথ্য সত্য নয়। সেখানে আমাদের সেফ হোম আছে, দূতাবাসের কর্মকর্তারা আছেন।

কিছু নারী ভিক্টিমাইজ হচ্ছে শিকার করে ড. মোমেন বলেন, সেসব অভিযোগ পাওয়ার প্রেক্ষিতে আমরা সৌদি সরকারকে জানাচ্ছি। তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে। এজন্যই তো নারীরা চুক্তি শেষ হওয়ার আগে দেশে ফিরতে পারছে। অন্যথায় চুক্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশে ফিরতে পারতো না।

তিনি বলেন, তারাও (সৌদি) স্বীকার করেছে, কিছু কিছু ভিক্টিমাইজ হচ্ছে। ব্যক্তিবিশেষের কারণে হচ্ছে। সরকার তো তাদের ভিকটিম বানাচ্ছে না।

Manual3 Ad Code

সৌদিতে মারা যাওয়া কর্মীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে চ্যালেঞ্জ করা হয় কিনা জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত মন্ত্রী বলেন, কীভাবে আপনারা জানেন চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। যেকোনো কর্মী মারা গেলে সাথে সাথে আমরা সৌদি সরকারকে জানাই। আমাদের কী পাবলিককে এসে বলতে হবে যে, আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি? না, আমরা এভাবে বলি না!

Manual7 Ad Code

তিনি বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ প্রবাসী আছে। এদের অনেকের মৃত্যু হয়। দেশে থাকলেও তো মৃত্যু হয়। ১ কোটি ২২ লাখের ১ শতাংশ মারা গেলেও ১১ হাজার হয়। নর্মাল প্রসেসেও অনেকে মারা যান।

উল্লেখ্য, ব্র্যাক অভিবাসন বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম নয় মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ১২১ নারী গৃহকর্মীর মরদেহ ফিরেছে। এর মধ্যে ৩৬ জনই আত্মহত্যা করেছেন। গত তিন বছরে বিদেশে আত্মহত্যা করা নারীর সংখ্যা ৭২।

Manual4 Ad Code

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সৌদি যায় ৭৩ হাজার ৭১৩ নারী কর্মী। ২০১৭ সালে ছিল ৮৩ হাজার ৩৫৪। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সৌদি আরবে গেছেন ৪৪ হাজার ৭১৩ জন।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালেই প্রতি মাসে গড়ে ২০০ নারী শ্রমিক দেশে ফিরেছেন। একই সঙ্গে সৌদি আরবের রিয়াদ ও জেদ্দায় সেফহোমগুলোয় গড়ে ২০০ জন নারী শ্রমিক আশ্রয় নিয়েছেন। গত দু-তিন বছরে অন্তত পাঁচ হাজার নারী সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। এসব নারীর একটি বড় অংশ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..