সিলেট ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৯ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:৪৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩, ২০১৯
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আ’লীগ প্রার্থী লিয়াকতের গত ১০ বছরে আয় বেড়েছে ২২ গুণ এবং সম্পদ বেড়েছে ৯২ গুণ। ২০০৮ সালে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় হলফনামায় দেয়া সম্পদ এবং ২০১৯ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামায় দেয়া সম্পদের তথ্যে এই চিত্র বেরিয়ে আসে।
২০০৮ সালে তার বার্ষিক আয় ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দেখানো হলেও ২০১৯ সালে দেখানো হয় ৫২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৮ টাকা, যা ১০ বছরে বৃদ্ধি প্রায় ২২ গুণ। অন্যদিকে ২০০৮ সালে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ৩ কোটি ৪০ লাখ ৫৯ হাজার টাকা যা ১০ বছরে বেড়েছে প্রায় ৯২ গুণ। তবে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নোটিশ পেয়ে ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের যে হিসাব জমা দিয়েছিলেন সেখানে উল্লেখ করেন ২ কোটি ১৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৭ টাকা। পরে দুদকের অনুসন্ধানে অতিরিক্ত প্রায় ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ মেলে।
১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রমনা থানায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করে। দুদকের অনুসন্ধানে লিয়াকত আলীর মোট স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হওয়ার কথা ৪ কোটি ৭৩ লাখ ৩৯ হাজার। কিন্তু তিনি তার হলফনামায় ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কথা উল্লেখ করেন। গত বছর দুদক কার্যালয়ে দেয়া সম্পদের চেয়ে এই অর্থ ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা বেশি। কিন্তু হলফনামায় বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন প্রায় ৫২ লাখ। প্রশ্ন হচ্ছে বাকি টাকা এলো কোথা থেকে।
লিয়াকতের বিরুদ্ধে করা দুর্নীতি মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক সাইদুজ্জামান বলেন, মামলা হয়েছে, খুব শিগগিরই তদন্ত শুরু হবে। প্রাথমিক তদন্তে যে পরিমাণ সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে তা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্তে উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নের সঙ্গে জমা দেয়া হলফনামাসহ সব বিষয় যাচাই করা হবে।
হলফনামায় থাকা অতিরিক্ত সম্পদ এবং সম্পদ বৃদ্ধির কারণ জানতে লিয়াকত আলীর সঙ্গে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। ফোন ধরে বিষয়টি শুনে তিনি জানান, তিনি গাড়িতে থাকায় কথা শুনতে পাচ্ছেন না। ১০ মিনিট পর কথা বলার অনুরোধ করেন। ১০-১৫ মিনিট পর কথা বলার চেষ্টা করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
জৈন্তাপুর উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক, রাজাকার ওয়াজিদ আলী টেনাইয়ের পুত্র লিয়াকত আলী ২০০৮ সালে দেয়া অস্থাবর সম্পদ বিবরণীতে মোট অস্থাবর সম্পত্তি ১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা উল্লেখ করেন। যার মধ্যে নিজ নামে নগদ ২০ হাজার, স্ত্রীর ৩ ভরি স্বর্ণ- যার মূল্য ২১ হাজার টাকা, আসবাবপত্রের মূল্য ৫০ হাজার টাকা, বার্ষিক মূলধন ১ লাখ এবং নগদ ও ব্যাংকে জমা ২ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে মোট ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়। যার মধ্যে যৌথ মালিকানায় ১ বিঘা কৃষি জমি, যাতে তার নিজের অংশ ০.০৬ শতাংশ, নিজ নামে আধাপাকা একটি টিনশেড ঘর যার আনুমানিক মূল্য দেখানো হয় ১ দশমিক ৫ লাখ টাকা এবং ১০ হাজার টাকা মূল্যের একটি বাড়ি। কোনো ঋণ ছিল না তার। বার্ষিক আয় উল্লেখ করা হয় ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, যার মধ্যে কৃষি খাত থেকে আনুমানিক ৫০ হাজার এবং ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। নির্ভরশীলদের কোনো আয় ছিল না। এর মধ্যে ৮৫ হাজার টাকা বার্ষিক ব্যয় উল্লেখ করেন।
২০১৯ সালে মোট অস্থাবর সম্পত্তি উল্লেখ করেন প্রায় ১ কোটি ৪৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। যার মধ্যে নিজের নামে নগদ ৫০ হাজার, স্ত্রীর নামে নগদ ২০ হাজার টাকা। নিজ নামে ব্যাংকে জমা ৪ লাখ ২২ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে ৫ লাখ টাকা। নিজ নামে সঞ্চয়পত্র ১ লাখ টাকা এবং স্ত্রীর নামে স্থায়ী আমানত ৮ লাখ টাকা। নিজ নামে ২টি ট্রাক ও একটি মোটারসাইকেল যার আনুমানিক মূল্য ৪২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, নিজের নামে স্বর্ণ ৮ তোলা যার মূল্য ৮০ হাজার টাকা, নিজের নামে ইলেকট্রনিক সামগ্রী ১ লাখ ১০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে ৭০ হাজার টাকা, নিজের নামে না থাকলেও স্ত্রীর নামে ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। নিজ নামে বার্ষিক মূলধন রয়েছে ৫৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা, নিজের জীবন বীমার প্রিমিয়াম ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা, স্ত্রীর প্রিমিয়াম ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। মোট স্থাবর সম্পত্তি উল্লেখ করা হয়েছে ১ কোটি ৯১ লাখ টাকা, যার মধ্যে নিজ নামে ৮ দশমিক ৮৫০ একর কৃষি জমি, যার দাম ৬৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে কৃষি জমি ৯ দশমিক ১৯০ একর, যার মূল্য ১৯ লাখ ৭ হাজার টাকা, নিজ নামে রয়েছে ৬৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ০.৫৮৭০ একর অকৃষি জমি, আবাসিক দালান যার দাম ২৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ১০ লাখ ৭২ হাজার টাকা মূল্যের মৎস্য খামার। আয়ের উৎস হিসেবে কৃষি খাত থেকে নিজের বার্ষিক আয় ৭০ হাজার টাকা, স্ত্রীসহ নির্ভরশীলদের আয় ৭৯ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া নিজের ৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে নিজের বার্ষিক আয় ১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা, নির্ভরশীলদের আয় ৪ লাখ টাকা। মৎস্য খাত থেকে নিজের আয় ৪০ লাখ টাকা উল্লেখ করেন লিয়াকত আলী। হলফনামায় ব্যক্তিগত ঋণসহ অন্যান্য খাতে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৪২ হাজার টাকা দেনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কথা হয় জৈন্তাপুর উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল আহমেদ বলেন, আসলে লিয়াকত আলীর কত সম্পদ তা হয়তো সে নিজেই জানেন না, অবৈধ সম্পদের তো হিসাব থাকে না। তিনি বলেন, জৈন্তাপুর উপজেলাসহ সিলেটের প্রায় সবারই জানা আছে তার অতীত। এক সময়ের নৌকার মাঝি এখন কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। কিভাবে হয়েছে তাও সবার মুখে মুখেই। তবে এবার আর ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু দীর্ঘদিন পরে হলেও দুদক প্রাথমিক তদন্তে তার অবৈধ সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে, আমরা আশা করি পুরো তদন্ত শেষ হলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
সৌজন্য:দৈনিক যুগান্তর
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd