বাজার সিন্ডিকেটকে ক্রসফায়ারে দিতে বাধা কোথায় ?

প্রকাশিত: ৭:৩০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩, ২০১৯

বাজার সিন্ডিকেটকে ক্রসফায়ারে দিতে বাধা কোথায় ?

Manual5 Ad Code

ক্যাসিনোর সঙ্গে যারা যুক্ত, নানাভাবে জুয়া এবং মাদক, চাঁদাবাজির কাজে যারা লিপ্ত ও জড়িত, তারা সমাজের নষ্ট-ভ্রষ্ট।তারা যা করে, তা অন্ধকারেই সারে। প্রকাশ্যে তাদের এসব কাজ চলে না। চার দেয়ালের মাঝখানে এসব কাজের বেশির ভাগ সম্পন্ন হয়। জুয়ার সঙ্গে যারা জড়িত, তারা সমাজের খুবই সামান্য বা নগণ্য অংশ।কিন্তু বাজারের সঙ্গে শতভাগ মানুষ যুক্ত। যাদের পকেট অবাধে কাটছে বাজার সিন্ডিকেট।

Manual6 Ad Code

জুয়া সমাজকে যেন জড়িয়ে ফেলতে না পারে, সে জন্য আইন আছে। নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়িত্বশীল সংস্থা আছে। যে কারণে প্রকাশ্যে এসব চলে না। চলে অতি গোপনে, রাতের অন্ধকারে। এর সঙ্গে যারা যুক্ত, ইতিমধ্যে এদের কজনের কদর্য চেহারা এবং তাদের টাকা কামানোর অনৈতিক দিকগুলো জাতির সামনে চলে এসেছে।

খারাপ দিকগুলো সামনে চলে আসায় সরকার ও প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। ফলে এর সঙ্গে যুক্তদের টনক কিছুটা হলেও নড়েছে। পালাতে এমনকি দেশ ছেড়ে যেতে শুরু করেছে অনেকে। গডফাদার এবং রাগববোয়ালরা ধরা না পড়লেও তাদের যে ঘুম হারাম এবং তারাও যে ভয়ে লুকিয়েছে, সেটা অস্বীকারের উপায় নেই। তবে কাউকে কাউকে নিয়ে জনমনে প্রশ্ন থেকেই গেছে।

জুয়া চলে গোপনে, রাতের অন্ধকারে। আর খাদ্যপণ্য নিয়ে নৈরাজ্য ও জুয়া চলে দিবালোকে, প্রকাশ্যে। জুয়ার সঙ্গে জড়িতরা অনেকটা লুকিয়ে থাকে, খাদ্যপণ্য নিয়ে যারা বছরের পর বছর সাধারণ ক্রেতাদের পকেট কাটছে, তারা থাকে বহালতবিয়তে।দায়িত্বশীলদের হয় ম্যানেজ করে, না হয় তাদের চোখে ধুলো দিয়ে এবং বিবেকে পাথরচাপা দিয়ে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আর কত তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকবে!

দেশে কয়েক বছর যাবৎ গরুর গোশত, পিঁয়াজ, রসুন, আদাসহ কিছু খাদ্যপণ্য নিয়ে একটি মহল, যাদের সিন্ডিকেট বললে কমই বলা হবে; তারা ইচ্ছামতো নির্বিঘ্নে আখেরি কামাই করছে।তাদের দেখার, ধরার এবং শায়েস্তা করার মতো সরকারে এবং প্রশাসনে কেউ থাকলে, খাদ্যপণ্য নিয়ে নৈরাজ্য এতটা সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারত না। ওদের খুঁটির জোর কোথায়, তা কেউ বুঝতে পারছে না।

বাজারে পিঁয়াজ, রসুন, আদার ন্যূনতম ঘাটতি নেই কোথাও; ছিল না কখনো। অথচ দাম আকাশচুম্বি। একেবারে ১১০ টাকা কেজি পিঁয়াজ। যারা এটা করছে, এসবের সঙ্গে যুক্ত- সেই আমদানিকারক ও পাইকার- তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে না। তাদের ধরে গোড়া থেকে শুরু করে বিক্রি পর্যন্ত দরদাম অনুসন্ধানপূর্বক মিলানো না। ফলে তারা যেমনি খুশি কামিয়ে নিচ্ছে জুয়ার চেয়ে অনেক অনেক বেশি। অভিজ্ঞ মহলের মতে, মগের মুল্লুকেও যা সম্ভব ছিল না।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী দেশে পিঁয়াজের ঘাটতি নেই মোটেও, আড়ত ও বাজারে যার প্রমাণ মিলছে শতভাগ। তার পরও যারা সিন্ডিকেট করে মানুষের পকেট কাটছে- তারা জুয়াড়ি ও সন্ত্রাসীদের চেয়ে ভয়াবহ অপরাধী। সমাজে চাঁদাবাজ, মাদকের হোঁতা, সন্ত্রাসী ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের দমনে ক্রসফায়ারে একবার দেওয়া গেলে বাজার সিন্ডিকেটকে শতবার ক্রসফায়ারে দিলেও তাদের অপকর্মের সিকিভাগের দায় মোছন হবে না বলে মনে করেন ক্রেতা সাধারণ।

গোশত ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা কদিন আগে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, চাঁদাবাজি বন্ধ হলে গরুর গোশত ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি করা সম্ভব। এর আগে সংবাদ সম্মেলনে করে তিনি বলেছিলেন, রাজধানীর গাবতলী গরুরহাটে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে ২৫০ টাকা কেজি করা সম্ভব।সাধারণ ব্যবসায়ীরা যতই এসব কথা বলেন, এগুলো বাস্তবায়নের মতো প্রকৃত সুহৃদ খাদকরা সরকার ও প্রশাসনে এখন দেখেন না।

Manual1 Ad Code

ইতিমধ্যে যে বা যারা বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে, তারা তো চিহ্নিত। ওরা কারা, বের করার জন্য খুব বেশি দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার, দেশপ্রেমের, আন্তরিকতার। সাধারণ মানুষকে ভালোবাসার এবং ভালো রাথার মতো নিখুঁত মানসিকতা দরকার। আর সরিষায় ভুত থাকলে সে আন্তরিকতা তো অধরাই থেকে যাবে।

Manual5 Ad Code

সাধারণ মানুষকে ভালোবাসলে, সাধারণ মানুষের প্রতি ন্যূনতম দায় থাকলে; জনগণের প্রকৃত সেবক হলে বাজার জুয়াড়িদের হার মানাত না। বাজারের অস্থিতিশীল পরিবেশ, ভোক্তাদের যারপরনাই হতাশ করেছে। সঠিক নজরদারি, নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহিতার অভাবে এসব হচ্ছে বলে মনে করেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। বাজার সিন্ডিকেট থেকে সাধারণ মানুষ মুক্তি দেওয়া এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান সময়ের দাবি।

Manual7 Ad Code

প্রতিবেদক :মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..