সিলেট নগরীর ব্যস্ততম এলাকা জিন্দাবাজার, চৌহাট্রা, নাইওরপুল, সোবাহানী ঘাট, জিতু মিয়ার পয়েন্ট, বন্দরবাজার ও সুরমা মার্কেট। এসব এলাকায় যানজট নিরসনের পাশাপাশি ট্রাফিকপুলিশকে যানবাহনের কাগজপত্র চেক করতে দেখা যায়। কাগজপত্রে ত্রুটি থাকলে, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট না থাকলে দেয়া হও মামলা। আটক করা হয় রেজিস্ট্রেশনবিহীন যানবাহন। ট্রাফিক সপ্তাহ কিংবা বিশেষ অভিযানে ধরপাকড় করার পরও ট্রাফিক আইন না মানায় ট্রাফিকপুলিশ হার্ডলাইনে হাঁটছে। যত্রতত্র মোটরসাইকেল পার্কিং করার দায়ে মামলা দেয়ার পাশাপাশি মালিক না পেলে গাড়ি থেকে প্লাগক্যাপ খোলে নেয়া হয়। আশানুরূপ ফল না হওয়ায় এবার ‘হেলমেট আছে পেট্রোল আছে’ এ স্লোগানে নতুন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ট্রাফিকপুলিশ। এ কর্মসূচির আওতায় হেলমেটবিহীন চালকরা পেট্রোল পাম্প থেকে তেল কিনতে পারবেন না।
গতকাল থেকে চালু হয় এ কর্মসূচির। কয়েকদিন আগে রেজিস্ট্রেশনবিহীন এক মোটরসাইকেল আটক করে ট্রাফিকপুলিশকে পড়তে হয় মহা বিপদে। মোটরসাইকেলের চালক কোনো এক পত্রিকার সাংবাদিক। নাম্বার প্লেটে সাঁটানো সাংবাদিক লেখা স্টিকার। দায়িত্বরত পুলিশ মামলা দিতে প্রস্তুত হলে তিনি পুলিশকে হাইকোর্ট দেখান। এমনকি এক সময় তার হয়ে কথিত সাংবাদিক নেতা ফোন করেন ওই পুলিশ অফিসারের কাছে। পুলিশ বলছে, এমন নানা ঘটনা নিত্যদিন ঘটছে। প্রত্যক্ষভাবে দেখা যায়, কাগজপত্রবিহীন অসংখ্য যান শহরের বাহিরে ব্যপরোয়া চলাচল করছে। বিভিন সংস্থার সাইবোর্ডধারী যানবাহন চোরাচালান, ছিনতাই, অপহরণ, মাদক পরিবহণসহ নানা অপরাধজনিত কর্মকা-ে জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের নজরধারী থাকায় প্রায়ই মাদক পাচার সহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত অপরাধীদের গাড়িসহ আটকের খবর পত্রিকায় আসছে। প্রশাসনকে ফাঁকি দিতে যানবাহনে বিভিন্ন সংস্থার নাম ব্যবহার করায় যেমনি দুর্নাম হচ্ছে ওইসব প্রতিষ্ঠানের তেমনি অপরাধী শনাক্তে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে তদন্তকারী সংস্থার। অপরাধীরা অপরাধ কর্মকা- পরিচালনার পর পার পেতে ব্যবহার করছে বর্ডার ক্রস ও চোরাই গাড়ি। মাঝেমধ্যে এ সব অবৈধ যানবাহন আটক করা হলেও গাড়ি ব্যবহারকারী বা তার মালিকের সন্ধান না মিলায় শনাক্ত হচ্ছে না রাগববোয়ালরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সার্জেন্ট, টিআই ও এটিএসআই বলেন, সাংবাদিক, আইনজীবী, ডাক্তার, সিটি কর্পোরেশন লেখা স্টিকার লাগানো মোটরসাইকেল থামালে চালকরা রাগান্বিত হয়ে কেউবা অশালীন ভাষায় কথা বলেন। তারা নিজেরা মনে করেন ওইসব স্টিকার লাগালে তারা আইনের উর্ধ্বে থাকা যায়। সাংবাদিক, পুলিশ, আইনজীবী, ডাক্তার, জরুরী বিদ্যুৎ, জরুরী গ্যাস, সিটি কর্পোরেশন, কাস্টমস লেখা সহ নানা নামের স্টিকার লাগানো কতটি মোটরসাইকেল রাস্তায় চলাচল করছে তার হিসেবে নেই কোন সংস্থার কাছে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সিলেট অফিস সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলায় রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আছে ৭২ হাজার ৫শ’ ৬৩টি মোটরসাইকেল। শুধু মেট্রোপলিটন এলাকায় চলাচল করছে ১০ হাজার ২শ’ ৮৩টি মোটরসাইকেল। আর জেলায় রেজিস্ট্রেশনবিহীন যানবাহন আছে ৭০ হাজার। তার মধ্যে শুধু সিএনজি অটোরিকশা’ই ৫০ হাজার, মোটরসাইকেল ৭ হাজার, বাকি অন্যান্য যানবাহন। অধিক সংখ্যক যানবাহন শহরের বাহিরে বেশি চলাচল করছে। বিআরটিএ আইন অনুযায়ী প্রাতিষ্ঠানিক গাড়ি ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়িতে পুলিশ, প্রেস, আইনজীবী, ডাক্তার ইত্যাদি লেখা বা স্টিকার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না কেউ। উল্টো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে প্রতিষ্ঠানের স্টিকার ব্যবহারের মাত্রা দিনদিন বাড়ছে। বেআইনি সুবিধা নিতে এ ধরণের স্টিকার লাগানো হয় বলে অনেকে মনে করেন। সাংবাদিক কিংবা প্রেস লেখা মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হচ্ছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। কখনো মাদক, অস্ত্র পরিবহন, অপহরণ আবার কখনো নাশকতা চালাতে অপরাধীরা ব্যবহার করছে নাম্বারবিহীন মোটরসাইকেল। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রেজিস্ট্রেশনবিহীন যানবাহন আটক করলেও বিআরটিএ’র কাছে তথ্য না থাকায় অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাহিরে। যারা জনসাধারণকে আইন মানাতে কাজ করেণ তারা সর্বপ্রথম আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরী। বিআরটিএ সিলেট অফিস সূত্র জানিয়েছে, তাদের কাছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এরই মধ্যে লিখিত পত্র দিয়েছে। সেখানে সিটি কর্পোরেশন লেখা বা স্টিকার সম্বলিত বেআইনি যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। অনেকে মনে করছেন সিটি কর্পোরেশনের মত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এমন প্রদক্ষ্যাপ গ্রহণ করলে ট্রাফিক আইন মানার প্রবণতা বাড়বে।