সিলেট ৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৯ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:৫১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সিলেট সফর করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। তাকে স্বাগত জানিয়ে হাজারো পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুনে সেজেছিল সিলেট নগর।
শোভন সিলেট ছাড়লেও ব্যানার-ফেস্টুন ঠিকই শোভা পাচ্ছিল নগরজুড়ে। কিন্তু দলীয় পদ হারানোর মাত্র ২৪ ঘণ্টায় সব পোস্টার, ব্যানার-ফেস্টুন এবং তোরণ উধাও হয়ে গেছে। অনেকে আবার ফেস্টুন উল্টিয়ে রেখেছেন। বিষয়টি বেশ আশ্চর্যের।
শনিবার রাতে যখন গণমাধ্যমে খবর আসে ছাত্রলীগের পদ হারালেন শোভন-রাব্বানী তখনও শোভন-রাব্বানীর ব্যানার-ফেস্টুন শোভা পাচ্ছিল নগরের মোড়ে মোড়ে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বদলে যায় দৃশ্যপট। শোভন-রাব্বানীর শুভাকাঙ্ক্ষী স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতকর্মীরা একে একে নামিয়ে ফেলেন স্বাগত জানিয়ে টাঙানো ব্যানার-ফেস্টুন। এখন দৃশ্যপট দেখে মনে হয় শোভন-রাব্বানী শত বছরের অতীত। কেউ কেউ বলছেন, এখন শোভন-রাব্বানীর পাশে কেউ নেই।
শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সদ্য সাবেক দুই নেতার ছবি সরিয়ে দিচ্ছেন নতুনদের ছবি। অভিনন্দন বার্তা তো আছেই।
এদিকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতির সঙ্গে সঙ্গে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা শীর্ষ এই দুই নেতার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা মন্তব্য করছেন। এর বেশির ভাগ পোস্টে দুই নেতার ব্যর্থতা আর নেতাকর্মীকে অবহেলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনা কর্তৃক দুই নেতাকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তকে যুগোপযোগীও বলছেন নেতাকর্মীদের কেউ কেউ।
দলটির কর্মী-সমর্থকদের এই মনোভাবকে ছাত্ররাজনীতির অবক্ষয় হিসেবে দেখছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, আগের ছাত্ররাজনীতি আর বর্তমান ছাত্ররাজনীতির মধ্যে বিস্তর ফারাক। আগে ছাত্ররাজনীতি ছিল সমাজের অগ্রপ্রতীক। কারণ ছাত্রসমাজ তাদের নেতা মনোনীত করতো। কিন্তু বর্তমানে নেতা হচ্ছেন টাকার জোরে কিংবা বলয়ভিত্তিক। এজন্য যারাই ক্ষমতায় আসছেন তারা দলীয় আদর্শকে একপাশে সরিয়ে ভাইয়ের আদর্শ ধারণ করছেন।
এই সুযোগে কথিত ‘বড় ভাই’ বা ‘ভাই লীগ’ ছেলেদের ব্যবহার করছে। এর প্রমাণই বর্তমানে দলটির কর্মকাণ্ড। কারণ সাবেক হওয়া মানেই সব শেষ হয়ে যাওয়া নয় কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সাবেক হয়ে যাওয়া মানে সব শেষ।
আশিক আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ফেসবুকে লিখেছেন, পদ হারানোর এক ঘণ্টার মধ্যে সব ব্যানার-ফেস্টুন গায়েব। আজ থেকে হয়তো নগরজুড়ে দেখা যাবে নতুন মুখের কারো ব্যানার-ফেস্টুন। সঙ্গে জুড়ে দেয়া হবে অদ্ভুত অদ্ভুত সব বিশ্লেষণ!
মারুফ খান মুন্না লিখেছেন, শোভনের জন্য সত্যিই দুঃখ লাগছে। সিন্ডিকেট ছাড়া এই প্রথম ছাত্রলীগের সভাপতি পেয়েছিল দলটি। সিন্ডিকেট ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে ডাকসু নির্বাচনেও হারতে হয়েছিল তাকে। জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী লৌহ মানবী হাসিনার অনেক ভরসা ছিল তাকে দিয়ে। শেষ পর্যন্ত বিতর্কমুক্ত থাকতে পারেননি তিনিও।
২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। এরপর ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ছাত্রলীগের কমিটি করা হয়।
কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ এক বছর না পেরোতেই তাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা ওঠে আসে।
এর মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা, অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতা, নেতাকর্মীদের প্রত্যাশিত মূল্যায়ন না করা অন্যতম। এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপেক্ষা, ফোন রিসিভ না করার অভিযোগও আছে।
এর বাইরে রাতজাগা ও দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা, কর্মসূচিতে বিলম্বে যাওয়া, প্রধান অতিথিদের বসিয়ে রাখা, জেলা সম্মেলন করতে না পারা ও বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি গঠনের বিষয়ও এ তালিকায় রয়েছে। এসব দেখে এবং শুনে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শনিবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিতে বলেন।
সবশেষে শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এ অবস্থায় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে আল নাহিয়ান খান জয় এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান লেখক ভট্টাচার্য।
ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসা জয়-লেখক এর আগে সংগঠনের প্রথম সহসভাপতি ও ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd