সিলেট ২৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৮ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:৩৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩০, ২০১৯
খোঁজ মিলেছে সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই তরুণীর। ‘নিরাপদ হেফাজত’ থেকে পালিয়ে এখন ঢাকায় রয়েছেন তারা। এমন তথ্যই জানিয়েছে তাদের পরিবার ও পুনর্বাসন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। ৯ জুলাই খাদিমনগরে অবস্থিত পুনর্বাসন কেন্দ্রের দু তলার বাথরুমের এগজস্ট ফ্যান ভেঙে পালিয়ে যায় তারা। পলাতক দুই তরুণী হলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর টুকেরগাঁও বউ বাজারের আব্দুল মালেকের মেয়ে নাছমিন জান্নাত নাজরিন (১৮) এবং সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের আলাউদ্দিনের মেয়ে রুবিনা বেগম (২২)।
তরুণীদের পরিবার ও পুনর্বাসন কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জের উত্তর টুকেরগাঁয়ের বউ বাজারের নাছমিন কিশোরী বয়স থেকেই ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরণের নেশাজাতীয় দ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়ে। মাদকাসক্ত নাছমিন জড়িয়ে পড়ে অসামাজিক কর্মকান্ডেও। রাতে বিরাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেত সে। ফিরত পরদিন সকালে। পরিবারের লোকজনের সাথে চরম দুর্ব্যবহারও করত। এমন কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে এ বছরের ২৬ জুন এক আইনজীবীর মাধ্যমে নাছমিনকে খাদিমনগরের সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে আসেন তার বাবা আব্দুল মালেক ও মা রহিমা বেগম। এরপর থেকে সেখানেই ছিল সে।
ছাতক উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের আলাউদ্দিনের মেয়ে রুবিনা বেগমের কাহিনী একটু ভিন্ন। গ্রামের বাড়ি ছাতকে হলেও বর্তমানে সিলেট ক্যাডেট কলেজ সংলগ্ন শাহ জামালের বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছেন তার পরিবার। একবার বিয়েও হয়েছিল রুবিনার। সে সংসারে থাকাকালীন এক সন্তানের জন্মও দেয় রুবিনা। স্বামীর প্ররোচনায় পড়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয় সে। পাশাপাশি মাদকেও আসক্ত হয়ে পড়ে। বনিবনা না হওয়ায় একসময় স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসে রুবিনা। একমাত্র সন্তানকে বাবার বাড়িতে রেখে সিলেট শহরেই অন্যত্র থাকতো সে। অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত অবস্থায় এক রাতে শাহপরাণ থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সে। গত ৬ মার্চ সাধারণ ডায়েরীমূলে তারও স্থান হয় খাদিমনগরস্থ পুনর্বাসন কেন্দ্রে। সেখানেই গড়ে ওঠে নাছমিন ও রুবিনার সখ্যতা। ইয়াবায় আসক্ত নাছমিন ও রুবিনা পুনর্বাসন কেন্দ্রে বসেই ছক আঁকে পালানোর। পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করে ৯ জুলাই মধ্যরাতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৪৬জন ভিকটিম সম্পন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ভেতরে নেই কোনো সিসি ক্যামেরা। দায়িত্বরত কর্মকর্তা কর্মচারী থাকার কথা ১৪ জন। সেখানে রয়েছেন মাত্র ৮ জন। নিরাপত্তার জন্য নারী আনসার সদস্য মাত্র ৪ জন। নেই নৈশ প্রহরী। পেছন দিকের দেয়ালে কাটাতারের বেড়া থাকলে, তা সহজেই টপকানো যায়। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গত ৯ জুলাই রাত ৩টায় ডরমেটরির এগজস্ট ফ্যান ভেঙে ওড়না বেয়ে নিচে নেমে দেওয়াল টপকিয়ে পালিয়ে যায় দুই তরুণী। আশেপাশের বাড়িঘরের লোকজন ধপ্ করে কিছু একটা পড়ার শব্দ শুনলেও এতটা গুরুত্ব দেন নি। পরদিন সকালে পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা ব্যাপারটি বুঝতে পারেন। এ ব্যাপারে ১০ জুলাই শাহপরাণ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন পুনর্বাসন কেন্দ্রের সহকারী ব্যবস্থাপক, যুক্ত কেইস ওয়ার্কার লুৎফুর রহমান। পুনর্বাসন কেন্দ্র ও পরিবারের তরফ থেকে খোঁজ করা হয় সম্ভব্য সকল স্থানে। কিন্তু সন্ধান মেলেনি তাদের।
নিখোঁজের প্রায় এক মাস পর, চলতি মাসের প্রথম দিকে হঠাৎ একটি ফোনকল আসে রুবিনার মা লিজু বেগমের মোবাইলে। অপরপ্রান্ত থেকে শোনা যায় রুবিনার কন্ঠ। রুবিনা মাকে জানায়, সে এখন ঢাকায় আছে। নাছমিনও রয়েছে তার সঙ্গে। তারা ভালো আছে। তাদের যেনো খোঁজার চেষ্টা করা না হয়। এরপর থেকে সেই নাম্বার বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের হেড ওয়ার্ডার আবু সালিম একাত্তরের কথাকে জানান, ‘নাছমিন ও রুবিনার চালচলন ঠিক ছিল না। তাদের আচার আচরণে নিজেদের ঔদ্ধত্য প্রকাশ পেত। তাদের পালিয়ে যাবার ঘটনায় দুই নারী আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়। আমাদের অনুসন্ধান এখনো অব্যাহত আছে’।
রুবিনাকে নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দিতেও নারাজ মা লিজু বেগম জানান, রুবিনার কোনো খোঁজ নেই। প্রায় ২২ দিন আগে একবার আমার সাথে ফোনে কথা হয়েছিল। এরপর থেকে মোবাইল বন্ধ। তার বাচ্চাটা আমার কাছেই আছে।
এদিকে নাছমিনের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার বোন জানান, আমার বোন পালিয়েছে নাকি তাকে গুম করা হয়েছে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। তার সাথে এখনো আমাদের কোনো যোগাযোগ হয়নি। সরকারীভাবে নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও কেন এবং কিভাবে সে পালালো, এর কোনো সদুত্তর কর্তৃপক্ষ আমাদের দিতে পারে নি।
টুকেরগাঁওয়ের স্থানীয় ইউপি সদস্য বিল্লাল মিয়া জানান, নাছমিনের পরিবারের সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছে। তারা দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানতে পেরেছি।
এ ব্যাপারে সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের সহকারী ব্যবস্থাপক, যুক্ত কেইস ওয়ার্কার লুৎফুর রহমানের সাথে ফোনে আলাপ হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন, পরে কথা বলবেন বলে জানান।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd