ঘোড়ার গাড়ি চালকের মেয়ে থেকে যেভাবে উত্থান ‘সেকেন্ড ডিসি’ সাধনা’র

প্রকাশিত: ৬:০১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০১৯

ঘোড়ার গাড়ি চালকের মেয়ে থেকে যেভাবে উত্থান ‘সেকেন্ড ডিসি’ সাধনা’র

Manual7 Ad Code

জামালপুর জেলা প্রশাসনের অফিস সহকারি সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা।জামালপুর শহরের পাথালিয়া গ্রামে সাধনার জন্ম। মা ফেলানী বেগম। বাবা অহিজুদ্দিন। বাবার পেশা ছিল ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে মালামাল পরিবহন করা। তীব্র অভাবের পিতার সংসারে সাধনার জন্মের ৭ দিনের মাথায় তাকে দত্তক দেন মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের সুখনগরী গ্রামের নিঃসন্তান খাজু মিয়া ও নাছিমা আক্তার দম্পতির কাছে। তাদের লালন-পালনে ধীরে ধীরে বড় হয় সাধনা। স্কুলের গন্ডি পার হবার আগেই তাকে বিয়ে দেয়া হয়। স্বামী ছিল একই উপজেলার জোনাইল গ্রামের বেসরকারি কোম্পানির কর্মচারী জাহিদুল ইসলাম। সে সংসারে জন্ম নেয় এক পুত্র সন্তান।

Manual5 Ad Code

সাধনার প্রথম স্বামী জাহিদুল ২০০৯ সালে মারা গেলে শিশু পুত্রসহ পালক পিতামাতার বাড়িতে ফিরে যান সাধনা। পরে টাঙ্গাইলের এক পুলিশ কনস্টেবলের সাথে পালিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। সাধনার উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপন ও অবাধ চাল-চলনের কারণে টেকে নি দ্বিতীয় বিয়েটিও। দ্বিতীয় বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর তিনি নিজ ঘরেই দোকান দিয়ে বিক্রি করতেন দেশি-বিদেশি প্রসাধনী।তাতে লাভ কম হওয়ায় ব্যবসা পরিবর্তন করে শুরু করেন হস্তশিল্পের ব্যবসা। এভাবে কেটে গেল আরো নয় বছর।

২০১৮ সালে উন্নয়ন মেলায় হস্তশিল্পের স্টল বরাদ্দ নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীরের সাথে দেখা করেন সাধনা। সে সময় সাধনার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিনামূল্যে স্টল বরাদ্দ দেন ডিসি আহমেদ কবীর। পরে উন্নয়ন মেলা চলাকালে আহমেদ কবীরের সঙ্গে সখ্যতা আরও গভীর হয়।

জানা গেছে, চলতি বছর জানুয়ারিতে ডিসি অফিসে ২৭ জনকে অফিস সহায়ক (পিয়ন) পদসহ ৫৫ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। সেই সম্পর্কের সূত্র ধরে ডিসি অফিসে পিয়ন (অফিস সহকারী) পদে নিয়োগ পান সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা। সেই সঙ্গে তার দুই আত্মীয় রজব আলী ও সাবান আলীকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পাইয়ে দেন।

Manual1 Ad Code

জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে সাধনা যোগ দেয়ার করার পর জেলা প্রশাসকের অফিস কক্ষের পাশে ‘খাসকামরা’ হয়ে ওঠে মিনি বেডরুমে। যেখানে খাট ও অন্যান্য আসবাবপত্র ‍দিয়ে সাজ-সজ্জা করা হয়। সে রুমেই চলত আহমেদ কবীর-সাধনার রঙ্গলীলা। অফিস চলাকালে তাদের রঙ্গলীলা অবাধ ও নির্ঝঞ্ঝাট করতে সেই কামরার দরজায় বসানো হয় লাল ও সবুজ বাতি। রঙ্গলীলা চলাকালে ‘লালবাতি’ জ্বলে উঠত।

Manual2 Ad Code

সে সময় দরজার সামনে পাহারায় থাকতেন তাদেরই বিশ্বস্ত কোনও অফিস সহকারী। লালবাতি জ্বলাকালীন সাক্ষাৎপ্রার্থী তো দূরের কথা কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও প্রবেশাধিকার নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ সময় তার অফিসের বাইরে ফাইলপত্র নিয়ে অপেক্ষায় থাকতেন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাক্ষাৎপ্রার্থীরা। লীলা শেষ করে পরিপাটি হয়ে যখন চেয়ারে বসতেন, তখন জ্বলে উঠত সবুজ বাতি। ‘সবুজ বাতি’ জ্বলে ওঠার পরই শুরু হতো তাদের দাফতরিক কার্যক্রম।

একপর্যায়ে সে সখ্য রূপ নেয় শারীরিক সম্পর্কে। সম্প্রতি সেই অবৈধ সম্পর্কের একটি ভিডিওচিত্র ভাইরাল হয়। তারপর থেকে ‘টক অব দি কান্ট্রি’তে পরিণত হন তারা। জামালপুর জেলা প্রশাসকের অফিসে দোর্দণ্ড প্রতাপে দাপিয়ে বেড়াতেন অফিস সহকারী (পিয়ন) সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা। তার প্রভাব এতটাই ছিল যে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকতেন সবসময় তটস্থ। শুধু কর্মচারীরাই নন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও পাত্তাই দিতেন না এ অফিস সহকারী।

ডিসি অফিসে গুঞ্জন রয়েছে- অবৈধ রঙ্গলীলার সুবাদে আর আহমেদ কবীরের আশকারা পেয়ে ‘সেকেন্ড বা দ্বিতীয় ডিসি’ হয়ে গিয়েছিলেন সাধনা। ডিসির প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন দফতরে বদলি, নিয়োগ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য করে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত কাজে স্বার্থসিদ্ধি হাসিলের জন্য সবার আগে সাধনাকে ম্যানেজ করতেন সুবিধাভোগীরা।

কিন্তু চাকরি হারানোর শঙ্কায় প্রতিবাদ করতে সাহস পেতেন না কেউ। তবে যৌন কেলেঙ্কারি প্রকাশের পর ২৫ আগস্ট ওএসডি করা হয় আহমেদ কবীরকে। তারপরে থেকেই ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। বের হয়ে আসছে একের পর এক আহমেদ কবীর-সাধনার নানা কীর্তি-কাণ্ডের কথা।ওই দিন থেকে গা ঢাকা দিয়েছে ঘোড়ার গাড়ি চালকের কন্যা সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা।এখানে বলে রাথা প্রয়োজন ‘সেকেন্ড বা দ্বিতীয় ডিসি’ বলে জেলা প্রশাসনে সরকারি কোন পদবি নেই।

Manual8 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

August 2019
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..