দক্ষিণ সুরমার নাছিমা বিয়ের ১০ মাসের মধ্যেই যৌতুকের বলি

প্রকাশিত: ১১:২৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩, ২০১৯

দক্ষিণ সুরমার নাছিমা বিয়ের ১০ মাসের মধ্যেই যৌতুকের বলি

Manual7 Ad Code

প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের পূবঝাপা গ্রামের মাসুক মিয়ার মেয়ে নাছিমা বেগম।

স্বপ্ন ছিলো ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাবেন। নাছিমার সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। যৌতুকের বলি হয়ে জীবন দিতে হলো।

গত ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বরে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলসান্দ খলাভাগ গ্রামের মৃত রাকিব আলীর ছেলে শাহীন এর সাথে বিয়ে হয় নাছিমা বেগমের। বেশিদিন সংসার করা হয়নি। মাত্র ১০ মাসের মধ্যেই নাছিমাকে যৌতুকের বলি হতে হলো।

গত ২৩ জুলাই স্বামীর ঘর থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় নাছিমার লাশ উদ্ধার করে গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ। স্বামীর বাড়ির লোকজনের দাবী নাছিমা আত্মহত্যা করেছে।

নাছিমার পিতা মাসুক মিয়ার দাবী যৌতুকে টাকা না পেয়ে তার মেয়েকে নির্যাতনের পর হত্যা করে গলায় কাপড় পেছিয়ে ঝুঁলিয়ে রাখা হয়।

নাছিমার ঝুঁলন্ত লাশ যখন গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ উদ্ধার করে তখন তার পা দুটি বিছানার সাথে লাগানো ছিলো, হাত দু’টি মুষ্টিবদ্ধ এবং ঘরের যে তীরের সাথে নাছিমার লাশ ঝুলানো ছিলো তার উচ্চতা অনেক বেশি।

মেয়ে হত্যার বিচারের দাবীতে নাছিমার পিতা মাসুক মিয়া ২৯ জুলাই আমল গ্রহণকারী ২নং আদালত সিলেটে ৪ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলায় নাছিমার স্বামী, ফুলসান্দ খলাভাগ গ্রামের মৃত রাকিব আলীর ছেলে শাহীন, শাহীনের মা খাতুন বেগম, তার ভাই নাছির উদ্দিন, নাছিরের স্ত্রী সুলতানা বেগমকে আসামী করা হয়েছে।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ড্রাইভার শাহীনের সাথে নাছিমার বিবাহ হয়। বিবাহের পর থেকেই বর্ণিত আসামীগণ নাছিমার কাছে লাইটেস গাড়ী ক্রয়ের জন্য টাকা দাবী করে।

Manual7 Ad Code

নাছিমার পিতা একজন কৃষক। তারা ৩ ভাই, ৩ বোন। সবার বড় নাছিমা। বাকী ৫ জন এখনো লেখাপড়া করছে। নাছিমার পিতা স্বচ্ছল না থাকায় তার পক্ষে যৌতুকের টাকা দেয়া সম্ভব হয়নি।

তাই আসামীগণ তার উপর শারিরীক ও মানসিক নির্যতান চালাতো। গত ২২ জুলাই রাতে আসামীগণ নাছিমাকে গাড়ী ক্রয়ের জন্য ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করলে নাছিমা অপারগতা প্রকাশ করলে আসামীগণ তাকে শারীরিক নির্যাতন চালায়।

মেয়েকে নির্যাতন করা হচ্ছে খবর পেয়ে মাসুক মিয়া ২৩ জুলাই বিকাল ৩টায় নাছিমার স্বামীর বাড়িতে গিয়ে পারিবারিক ভাবে বিরোধ মিমাংসা করে দেন।

Manual6 Ad Code

ওই দিন দিবাগত রাত ৪টায় নাছিমার ভাসুর নাছির উদ্দিন মোবাইল ফোনে বাদী মাসুক মিয়াকে জানায় তার মেয়ে নাছিমা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

২৪ জুলাই ভোর ৬টার সময় বাদী মাসুক মিয়া তার প্রতিবেশীদের সাথে নিয়ে আসামীদের বাড়ীতে গিয়ে দেখতে পান তার মেয়েকে ঘরের চালের তীরের সাথে শাড়ী গলায় পেছানো অবস্থা বিছানার উপর পায়ের পাতা ভর দেওয়া অবস্থায় দেখতে পান।

এ সময় নাছিমার গলায় তার দেয়া স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল ছিল না। ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে সামান্য রক্ত এবং বাম হাতের কব্জির উপরে ও কনুইর নিচে আচড়ানো রক্তাক্ত দাগ রয়েছে। বাদী ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর পুলিশকে খবর দেয়া হয়।

Manual1 Ad Code

খবর পেয়ে গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ বেলা ১১টায় এসে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে প্রেরণ করে।

Manual6 Ad Code

ময়না তদন্ত শেষে রাত ১০টায় নাছিমার পিত্রালয়ে জানাযা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়। জানাযায় নাছিমার স্বামী ও স্বামীর পরিবারের কেহই উপস্থিত হয়নি। মৃত্যুর পর থেকে নাছিমার স্বামী শাহীন পলাতক রয়েছে।

নাছিমা বেগমকে হত্যা করা হয়েছে এই অভিযোগ নিয়ে তার পিতা মাসুক মিয়া গোলাপগঞ্জ থানায় গেলে থানা মামলা গ্রহণ করেনি। থানা মামলা গ্রহণ না করায় মাসুক মিয়া বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার পর মাসুক মিয়া তার মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচারের দাবীতে গত ২৯ জুলাই সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে পৃথক আবেদন জানিয়েছেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

August 2019
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..