তাহিরপুরে কাষ্টমস ইন্সপেক্টর মীর মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে নানামুখী অভিযোগ!

প্রকাশিত: ১০:৫৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩১, ২০১৯

তাহিরপুরে কাষ্টমস ইন্সপেক্টর মীর মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে নানামুখী অভিযোগ!

মীর মোয়জ্জেম হোসেন পাপ্পু। তিনি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বড়ছড়া স্থল শুল্ক ষ্টেশনে ইন্সপেক্টর হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। জাতীয় পতাকা বিধিমালা আইন লঙ্গন ও অবমাননার অভিযোগে ইতিমধ্যে ওই ইন্সপেক্টর ও দায়িত্বে থাকা সুপারিনটেন্ডেট’র বিরুদ্ধে কাষ্টটমস এক্সাইজ ভ্যাট ও কমিশনার সিলেটের পক্ষে যুগ্ন কমিশনার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে কারন দর্শানোর নোটিশ প্রেরণ করা হয়।

২৪ জুলাই প্রেরিত নোটিশে সাত দিনের মধ্যে কারন দর্শানোর সময় বেধে দেয়া হয়েছে বলে বুধবার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন কাষ্টটমস এক্সাইজ ভ্যাট ও কমিশনার সিলেটের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা।

অবশ্য বুধবার ওই ইন্সক্টেরের নিকট এসব বিষয় জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন যারা এসব বলছে সবই মিথ্যা। কিন্তু ওই অভিযোগের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের অভিযোগ উঠেছে, দায়িত্বপালনে ও কর্তব্যকাজে অবহেলাকারি দশমগ্রেডের চাকুরিরত ওই ইন্সপেক্টরের দাপুটে কথাবার্তা,অনৈতিক কর্মকান্ড ও অসামাজিক কার্যকলাপের কারনে আমদানিকারক,ব্যবসায়ী,শ্রমিক এমনকি খোদ কাষ্টমস অফিসে কর্মরতদের মধ্যে তীব্র অসন্তোস বিরাজ করছে।,

কাষ্টমসনের দায়িত্বশীল সুত্র জানায়. বিগত ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে কাষ্টমস এক্সাইজ ভ্যাট ও কমিশনার সিলেটের আওতাধীন সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বড়ছড়া স্থল ষ্টেশনে ইন্সপেক্টর পদে যোগদান করেন মীর মোয়েজ্জেম হোসেন পাাপ্পু।

উপজেলার বাগলী শুল্ক ষ্টেশনের আমদানিকারক,ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও বড়ছড়া স্থল শুল্ক ষ্টেশনে কার্যালয়ে কর্মরতরাসহ নানা শ্রেণিপেশার লোকজন গণমাধ্যমকে জানান, ওই ইন্সপেক্টর বড়ছড়া শুল্ক ষ্টেশনে যোদানেরপর বড়ছড়া, বাগলী শুল্ক ষ্টেশন বা কর্মস্থলে সহকর্মীসহ অন্যান্য লোকজনের নিকট রাজধানী ঢাকার মীরপুর ও গাজীপুর এলাকায় কয়েকটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী ,একাধিক বাসা বাড়ি মার্কেট ও বিলাসবহুল গাড়ির মালিক দাবি করে নিজের পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা চালান।

কাষ্টমস অফিসে ব্যবসায়ীক কাজে যাতায়াত করেন এমন ক’জন জানান, বড়ছড়া যোগদান করেই ওই ইন্সপেক্টর স্থানীয় এক বিতর্কিত নারী শিল্পী ও পাহাড়তলী গ্রামের অপর এক মোটরসাইকেল চালকের নব বিবাহিত স্ত্রীর সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেন।

সুপারিনটেন্ডেট’র অনুপস্থিতে প্রায় রাতেই ব্যাক্তিগত মোটরসাইকেলে চালকের মাধ্যমে ওই নারী শিল্পীকে নিজ কার্যালয়ে থাকা শয়ন কক্ষে নিয়ে আসতেন তিনি। এক রাতে গানের অনৈতিক আসর বসানোর পর এ নিয়ে কিছুটা বাক বিতন্ডতাও হয় অন্যদের সাথে। পরবর্তীতে ওই নারী শিল্পী ও মোটরসাইকেল চালকের স্ত্রীকে নিয়ে সিলেটের জাফলং সহ দেশের নানা স্থানে প্রমোদ ভ্রমনে ছুটে বেড়িছেন ওই দাপুটে ইন্সপেক্টর।

দিনেদিনে নিজ কার্যালয়, শুল্ক ষ্টেশন, সীমান্ত এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে নিজেকে বিমানের এক ডিরেক্টরের ভাতিজা, বিমান ছাড়া চলাফেলা করেন না, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা এক জাতীয় নেতার ভাতিজা, ১০০ ভরি স্বর্ণ দিয়ে বিয়ে করা, সেই বিয়েতে ১০০ গরু জবাই করে মেজবানীর পর মেহমানদের বাসায় ফেরারপথে ৩০ কেজি করে গোশত উপহার দিয়ে বিদায় দেয়া, নিজের বাসার দারোয়ানের বেতন দেন ৯৩ হাজার টাকা, তিনি বাদী হয়ে কারো বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে অনন্ত তিনি নিজে জামিনদার না হওয়া অবধি পাঁচ থেকে ছয় বছর সেই আসামীর জামিন না হওয়া সহ নানা দাপুটে গল্প করে বেড়াতে থাকেন তিনি।

অভিযোগ করেন স্থানীয় আমদানিরকারকরা, বাগলী শুল্ক ষ্টেশনে নিয়মিত দায়িত্বপালন করতে না গেলেও ওখানকার এক খাবার হোটেলে ঝগড়ার পর তিনি এক কিলোমিটার দুরের বাজারে গিয়ে দুপুরের খাবার খেতে দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় কাটাতেন। ফলে ওই সময় কয়লা চুনাপাথর বোঝাই সারি সারি ট্রাক আটকে থাকত জিরো পয়েন্টে।

অভিযোগ রয়েছে, মীর মোয়াজ্জেম হোসেন পাপ্পু’র দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বাগলী স্থল শুল্ক ষ্টেশনে জাতীয় পতাকা উক্তোলন না করার বিষয়টি ছবিসহ বিভিন্ন জাতীয়,স্থানীয় ও অনলাইন নিউজপোর্টালে প্রকাশিতহলে প্রকৃত ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তিনি নানামুখী অপতৎপরতা শুরু করেন।,

উপজেলার বাগলী শুল্ক ষ্টেশনের একাধিক কয়লা চুনাপাথর আমদানিকারক,ব্যবসায়ী,শ্রমিকরা জানান, বাগলী কয়লা ও চুনাপাথর আমদানিকারক সমিতির নেতৃবৃন্ধ,ব্যবসায়ী, শ্রমিকদের নিকট থেকে চাঁপের মুখে পতাকা টানানোর রশি ছিড়ে গিয়েছিলো এ অজুহাতে তার স্বপক্ষে স্বাক্ষর আদায় করতে গিয়ে তিনি শুল্ক ষ্টেশন বন্ধ করে দেয়ার হুমকি প্রদান করেন।,

পতাকা উক্তোলন না করায় নিজের দায় সাংবাদিকদের উপর চাপিয়ে দিতে তিনি ব্যবসায়ী, শ্রমিক, আমদানিকারকদের দিয়ে মানববন্ধন করানোর ফাঁদ তৈরী,তাদের নিকট থেকে স্বাক্ষর আদায়ে অপতৎপরতার পাশাপাশী নানামুখী হুমকি ধামকি প্রদান করেন।,

প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় বাগলী শুল্ক স্টেশনে চালু থাকা অবস্থায় গত ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি। এ নিয়ে জাতীয় পতাকা বিধিমালা লঙ্ঘন ও অবমাননার অভিযোগে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

একাধিক আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী জানান, এই শুল্ক স্টেশন দিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ভারত থেকে চুনাপাথর আমদানি শুরু হয়। এ সময় কাস্টমসের মনোগ্রাম খচিত নিজস্ব পতাকা এবং জাতীয় পতাকা কোনোটাই উত্তোলন করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অফিসে চালানপত্র গ্রহণে নিয়োজিত কাস্টমস সিপাহি বিশ্বজিৎ চক্রবতী জানান, শুল্ক স্টেশনে প্রতি কর্মদিবসে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল অবধি জাতীয় পতাকার পাশাপাশি কাস্টমস মনোগ্রাম খচিত পতাকা টানিয়ে রাখার নিয়ম রয়েছে।

বৃহস্পতিবার ইন্সপেক্টর মোয়াজ্জেম হোসেন সিলেটের বাইরে ছিলেন, আমিও পতাকা টানানোর বিষয়টি খেয়াল করিনি।,

এরপর ওই ইন্সপেক্টর সুপারিনটেন্ডেট’কে ম্যানেজ করে হাজিরা রেজিষ্টারে কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলেন গোপনে স্বাক্ষরের কাজটি সম্পন্ন করেন।

উপজেলার বাগলী কয়লা চুনাপাথর আমদানিকারক সমিতির সহ সভাপতি শেখ ওমর আলী বলেন, গত ১৮ জুলাই শুল্ক ষ্টেশনে চালু থাকা অবস্থায় জাতীয় পতাকা বা কাষ্টমসের নিজস্ব পতাকা কোনটাই শুল্ক ষ্টেশন কার্যালয়ের সামনে থাকা সম্মাননা প্রদর্শন স্থানে উক্তোলন করা হয়নি এরপর ওই ইন্সপেক্টর শনিবার শুল্ক ষ্টেশনে এসে পতাকাট টাঙ্গানোর খুটির রশি ছিড়া ছিল, এসব কথা বলে স্বাক্ষর আদায়ে আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন না হয় শুল্ক ষ্টেশন বন্ধ করে দেবার হুমকি দেন। এরপর তিনি আরো একদিন শুল্ক ষ্টেশনে গিয়ে নিজ কার্যালয়ে কয়েজনকে ডেকে নিয়ে ঠাকা পয়সা দিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করা ও মামলা করার উস্কানি প্রদান করেন।

অপর আরো কজ’ন ব্যবসায়ী জানান, কাষ্টমস ইন্সপেক্টর নিজের দায় এড়াতে আমাদের ভুল বুঝিয়ে কয়েজনের স্বাক্ষর নিয়েছেন।

বুধবার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাষ্টমস ইনপেক্টর মীর মোয়াজ্জোম হোসেন পাপ্পু সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে প্রথমে এ বিষয়ে কোন প্রকার কথা বলতে রাজি না হয়ে উল্টো এ প্রতিবেদকে লিখিত আকারে অফিসে এসে প্রশ্ন করার কথা বলেন। এরপর নারী শিল্পী, পাহাড়তলীর এক মোটরসাইকেল চালকের নববধুর সাথে কী ধরণের সম্পর্ক রয়েছে?, দাপুটে কথন, শুল্ক ষ্টেশন বন্ধ করে দেবার হমকি, মানববন্ধন, মামলা করানোর অপতৎপরতা, চাপে ফেলে ব্যবসায়ী, শ্রমিক, আমদারিকারকদের স্বাক্ষর আদায়ের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসব করিনি, এসব বলিনি, যারা এসব বলেছে সবই মিথ্যা।

অপর এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে নারী শিল্পী ও মোটরসাইকেল চালকের পরিবারের সাথে কোন প্রকার আত্বীয়তা রয়েছে কীনা জানতে চাইলেও তিনি কোন রকম সদুক্তর দিতে পারেনি।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..