সিলেট ৩০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:২১ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩০, ২০১৯
বাংলাদেশে মানবপাচার ভয়ানক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশ্বের বিভিন্ন বিপদজনক পথ পাড়ি দিতে গিয়ে দেশের তরুন-যুবকদের অমানবিক পরিস্থিতির খবর উঠে আসছে। দুর্গম সীমান্তে বেঁচে কোন মতে কাক্সিখত দেশে প্রবেশ করতে পারলেও নানা জটিলায় ফের দেশে ফিরতে হচ্ছে অনেককেই। ফলে সব কিছু হারিয়ে একেবারেই নিঃ¯^ হয়ে যাচ্ছে তারা। অনেকেই আবার মধ্যস্ততাকারী বা ডাকাতের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। ফাঁদে পড়ে অনেকেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছে।
দেখা যায়, বর্তমান সময়ে তরুনদের মধ্যে নানা কারনে দেশ ছাড়ার প্রবণতা বাড়ছে। উন্নত জীবন এবং অর্থনৈতিকভাবে ¯^াবলম্বি হওয়ার ¯^প্ন নিয়ে তারা অনিশ্চিত গন্তব্যে পা বাড়াচ্ছে। আর এ সুযোগটি গ্রহণ করছে ওৎ পেতে থাকা কিছু দালালচক্র। তারা বিভিন্ন প্রলোভন এবং কৌশলে তরুণদের কব্জায় এনে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই দালাল চক্র মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে খুব সহজেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। এরপর চাহিদামতো সর্ব¯^ কেড়ে নিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বিপদজনক সীমান্তপথে। এরপর কেউ সবকিছু হারিয়ে বিরূপ অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে আসে। আবার কেউ দালালের খপ্পরে পড়ে মুক্তপণের টাকা দিয়ে কোনমতে বেঁচে ফিরে আসছে। কারো কারো সলিল সমাধি হয়ে নির্জন কোন জঙ্গলে।
সম্প্রতি সারাদেশের মতো নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় এ ধরনের ঘটনা ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। দালালদের খপ্পরে পড়ে জীবনের শেষ সম্বলটুকু হারানো মতো ঘটনা ঘটেছে অহরহ। লাশ হয়ে ফিরেছেন কয়েকজন। তবুও থেমে নেই অনিশ্চিত গন্তব্যে পাড়ি দেয়া।
সম্প্রতি এই উপজেলার বেশ কয়েকজন তরুন আমেরিকায় প্রবেশ করেও নানা জটিলতায় দেশে ফিরতে হয়েছে। এদের মধ্যে হাটগাঁও এলাকার কিরন, নদোনার আইয়ুব পাটোয়ারী ও নুরু, গজারিয়ার সুমন ও মিন্টুসহ প্রায় ১৫ জনের মতো তরুন দেশে ফিরেছে। এরা সবাই যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে বছরের অধিক সময় অমানবিক জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে এসেছে। এদের বেশীরভাগই অ্যাসাইলাম বাতিল হয়ে বা বন্ড প্রত্যাখান হয়ে ফিরে এসেছে। তবে তারা মধ্যস্তকারী বা নির্ভরশীল ব্যক্তির ত্রæটিজনিত কারনে ফিরতে হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, নানা জটিলতার মুখে পড়ে আরো বিশ জনের অধিক তরুন দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছে। তাদের মধ্যে সোনাইমুড়ী এলাকার আউয়াল, শাওন, রায়হান, নদোনা এলাকার শাওন, রিয়াজ, কৌশল্লাবাগের ফিরোজ, বগাবাড়িয়ার সুমন, আমিশাপাড়ার জাফর ও গজারিয়ার সাইফুলসহ বেশ কয়েকজন।
মারা যায় রাজন ও মিরাজ নামের দুই জন।
ফিরে আসা তরুনরা নিজের অভিজ্ঞতার কথা বর্ননা করে বলেন, ‘কলম্বিয়া তুরবো থেকে কাপুরখানা পর্যন্ত সাগর পাড়ি দেয়া খুবই ভয়ংকর। স্পিডবোটে করে লাইফ জ্যাকেট গায়ে জড়িয়ে সাত থেকে আট ঘন্টা সাগর পাড়ি দিতে হয়। এসময় প্রায় ট্রলার উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এছাড়া পানামার জঙ্গলে ভয়ানক অভিজ্ঞতা কখনো ভুলার নয়। বন্য প্রাণীর সাথে যুদ্ধ করে অনেকটা অন্ধকার রাত পাড়ি দিতে হয়। তাছাড়া নিকাাগুয়া এলাকায় মাফিয়াদের কবলে পড়ার আশংকা রয়েছে। এরপর মেক্সিকো প্রবেশ করে নতুর করে যুদ্ধের সম্মুখিন হতে হয়। এখানে শরনার্থি ক্যাম্প থেকে ১৫ দিনের কান্ট্রি আউট কাগজ ধরিয়ে দেয়া হয়। এই ১৫ দিনের মধ্যেই বাসে অথবা বিমানে করে মেক্সিকোর টেক্সার সীমান্তে পৌঁছতে হয়। এরপর নদী বা দেয়াল টপকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা হয়। তবে এই ধরনের ঝুঁকি না নেয়ার জন্য তারা দেশের তরুন এবং যুবকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
জানা যায়, আশংকাজনক হারে এই মানবপাচার বৃদ্ধি পাওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেট স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে বার বার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশকে টানা তৃতীয়বারের মতো টায়ার টু ‘নজরদারির’ তালিকায় রেখেছে দেশটি। ২০১৭ সালে প্রথম বাংলাদেশকে এ তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়। জুন মাসে প্রকাশিত ‘ট্রাফিকিং ইন পারসন ২০১৯’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd