নুসরাত হত্যা: আরও চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন

প্রকাশিত: ৮:৩৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০১৯

নুসরাত হত্যা: আরও চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন

Manual7 Ad Code

আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় আরও চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। রোববার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেন নুসরাতের সহপাঠী তাহমিনা আক্তার, বিবি হাজেরা, আলিম পরীক্ষার্থী আবু বকর ছিদ্দিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আকবর।

আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ বলেন, নুসরাত হত্যা মামলার ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩২ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালতে ২৭ জুন থেকে সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। আগামীকাল ২২ জুলাই সোমবার পুলিশ কনস্টেবল মো. রাসেল হোসেন, এসআই (শিক্ষানবিশ) ডি এইচ এম জহির রায়হান ও মো. আরিফুর রহমান, মো. আজহারুল ইসলাম এমরান ও মো. ওমর ফারুকের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আজ বেলা ১১টা থেকে সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রদান শেষে তাদের জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন পিপি হাফেজ আহাম্মদ, এপিপি এ কে এস ফরিদ আহাম্মদ হাজারী ও এম শাহজাহান সাজু।

আদালত সূত্র জানায়, নুসরাতের সহপাঠী তাহমিনা আক্তার ও বিবি হাজেরা তাদের সাক্ষ্যতে বলেন, ‘৬ এপ্রিল পরীক্ষা হলে কাগজ (খাতা) দেয়ার পর স্যার জিজ্ঞেস করেন- কে কাগজ পায়নি? তখনও স্যারের হাতে একটি কাগজ রয়েছে। প্রায় ১৫ মিনিট পর তাহমিনা আক্তারের সামনের বেঞ্চে বসা কামরুন নাহার মনি (মামলার অন্যতম আসামি) হলে প্রবেশ করেন। এ সময় হল সুপার বেলায়েত হোসেন তাকে প্রশ্ন করেন, তুমি দেরি করে এলে কেন? জবাবে মনি বলে, আমার পেটে ব্যাথা ছিল। এর কিছুক্ষণ পর শুনি মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নুসরাতের গায়ে কারা যেন আগুন দিয়েছে।’

Manual2 Ad Code

তারা আরও বলেন, ‘কামরুন নাহার মনি পরীক্ষার হলে দেরিতে এলেও শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়েছে।’

আলিম পরীক্ষার্থী (ঘটনার সময় পরীক্ষার্থী ছিলেন) আবু বকর সিদ্দিক সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেন, ‘যখন নুসরাতকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় নামাচ্ছিল তখন তার গায়ে কোনো কাপড় ছিল না। আমি আমার পাঞ্জাবি খুলে নুসরাতের গায়ে পরিয়ে দেই। তখন পাপোস ও পানি দিয়ে আগুন নিভানোর চেষ্টা করেছে মাদরাসার পিয়ন ও পুলিশ কনস্টেবল। আমি তার পরিচয় জানতাম না। পরে জানতে পারি সেও এই মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি।’

স্থানীয় ব্যাবসায়ী মো. আকবর বলেন, ‘২৭ মার্চ নুসরাতের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনার পর অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে সমাবেশ-মানববন্ধনে আমিও ছিলাম। সেখানে শাহাদাত হোসেন শামীমের সঙ্গে আমার দেখা হয়। পরবর্তীতে ৬ এপ্রিল নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়ার ঘটনার পর ওই দিন সকালে ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে শামীম আমাকে ফোন করে বলেন, হুজুরের বিরুদ্ধে মামলা করা মেয়েটি মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিজের গায়ে আগুন দিয়েছে। এ বিষয়ে আপনি কিছু জানেন কি? আমি বলি- এ বিষয়ে আমি জানি না। ঠিক আছে, খবর নিচ্ছি।’

Manual8 Ad Code

চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান তিনি।

Manual7 Ad Code

এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ জনের সর্বেচ্চ শাস্তির সুপারিশ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

Manual4 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..