দৌড়ে পালাচ্ছিল সবাই, মৃত্যুর মুখে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এএসআই ফিরোজ

প্রকাশিত: ৯:৪০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০১৯

দৌড়ে পালাচ্ছিল সবাই, মৃত্যুর মুখে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এএসআই ফিরোজ

Manual8 Ad Code

সোমবার বেলা সোয়া ১১টা। কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের কার্যক্রম চলছে। বিচারক বেগম ফাতেমা ফেরদৌস এজলাসের চেয়ারে বসা। ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামের আবদুল করিম হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আসামিদের ডাকা হয়।

Manual5 Ad Code

কিন্তু হঠাৎ ওই হত্যা মামলার ৬নং আসামি হাসান সবার সামনে পকেট থেকে ধারালো ছুরি বের করে একই হত্যা মামলার ৪নং আসামি ফারুকের পেটে ঢুকিয়ে দেন। জীবন বাঁচাতে দৌড়ে বিচারকের খাস কামরায় আশ্রয় নিলে সেখানে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করলে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন ফারুক। পরে কুমেক হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক আদালতের বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় আদালতের আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। কিন্তু কেউ ঘাতককে আটক করতে সাহস পেলেন না। এ সময় মাদক মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসা জেলার বাঙ্গরা বাজার থানা পুলিশের এএআই ফিরোজ আহাম্মদ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোরা চালানোর মুখে ঘাতকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। সেই সঙ্গে ঘাতক হাসানকে জাপটে ধরে আদালত পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।

Manual7 Ad Code

এএসআই ফিরোজের এই সাহসিকতার দৃশ্য এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই এই কাজের জন্য তাকে হিরো উপাধি দিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। কারণ ওই ঘাতককে তিনি আটক না করলে আরও একাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারতো বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আদালতের আইনজীবী শাহনেওয়াজ সুলতানাসহ অন্য আইনজীবীরা জানান, হঠাৎ এমন ঘটনা দেখে আদালতের বিচারক, কর্মকর্তা, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে চারদিকে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। ওই সময় দৌড়ে এসে ঘাতকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এএসআই ফিরোজ। ঘাতককে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা না গেলে হয়তো আরও কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটতো।

Manual2 Ad Code

comilla

ঘাতককে আটককারী বাঙ্গরা বাজার থানা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘আমি একটি মাদক মামলায় সাক্ষ্য দিতে ঘটনার সময় আদালত কক্ষে বসাছিলাম। আবদুল করিম হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু হলে একপর্যায়ে ঘাতক হাসান উন্মুক্ত ছোরা হাতে আসামি ফারুককে হত্যার চেষ্টা চালায়। কিন্তু আসামি ফারুক প্রাণ বাঁচাতে বিচারকের খাস কামরায় প্রবেশ করে বাঁচার আকুতি জানায়। এ সময় সেখানে গিয়ে ঘাতক তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। এতে আদালতের সবাই হতবিহ্বল ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কেউ তাকে নিবৃত্ত করার সাহস পাচ্ছিল না। তখন আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘাতককে জাপটে ধরি। এ সময় আদালতের বিচারক এজলাসে ছিলেন।’

Manual2 Ad Code

কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, এতোটা নিরাপত্তার মধ্যেও আসামি ছুরি নিয়ে কীভাবে আদালতের ভেতরে প্রবেশ করলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. সাখাওয়াৎ হোসেনকে প্রধান করে এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর এ-সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন ও ডিআইও-ওয়ান (পুলিশ পরিদর্শক) মো. মাহবুব মোর্শেদকে সদস্য করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর দায়িত্বরত কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঘাতক হাসানের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাসান জানিয়েছে, নিহত ফারুকের কারণে সে এই হত্যা (আবদুল করিম) মামলার আসামি হয়েছে। আদালতে আসার পর তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। তাই ক্ষোভ থেকে এ ঘটনা ঘটিয়েছে হাসান। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় আরেকটি হত্যা মামলা হয়েছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..