মোড়ে মোড়ে অবৈধ স্ট্যান্ড অতিষ্ঠ সিলেট নগরবাসী

প্রকাশিত: ৯:২০ অপরাহ্ণ, মে ২৯, ২০১৯

মোড়ে মোড়ে অবৈধ স্ট্যান্ড অতিষ্ঠ সিলেট নগরবাসী

ইয়াহইয়া ফজল, সিলেট :: সিলেটের বিমানবন্দর ভিআইপি সড়কের আম্বরখানা মাছবাজারের সামনের অংশ দেখলে মনে হতে পারে কোনো সিএনজিচালিত অটোরিকশা ‘টার্মিনালে’র ভেতর দিয়েই এ সড়ক। দুই লেনের সড়কের দুই পাশেই একাধিক সারিতে অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে রাখা। এর পর সড়কের অবশিষ্ট যে অংশটুকু থাকে তাতে কোনো মতে এক সারিতে যান চালাচল করতে পারে। তাতেও অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্ম্য। রাস্তার মাঝখানে অটোরিকশা থামিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ সেরে নেওয়া, যাত্রী ওঠানো-নামানোর কাজ অবলীলায় করে তারা। থোড়াই কেয়ার করে মানুষের ভোগান্তির কথা।

আম্বরখানা মাছ বাজারের সামনের সড়কের অটোরিকশা স্ট্যান্ডের দৃশ্য এটি। নগরের কোর্ট পয়েন্ট, ধোপাদীঘিরপাড়, মজুমদারী, ওসমানী হাসপাতালের সামনে, মদিনা মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় এ স্ট্যান্ডের দেখা মিলবে। এভাবে রাস্তা দখল করে স্ট্যান্ড বানিয়ে বছরের পর বছর ধরে তারা দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। নগরের কোনো সড়ক সম্প্রসারণ হলে যেন অটোরিকশাওয়ালাদেরই পোয়াবারো। ইচ্ছেমতো অস্থায়ী স্ট্যান্ড বানিয়ে নেওয়া যায়। যার সবচেয়ে উত্কৃষ্ট উদাহরণ নগরের আম্বরখানা পয়েন্ট। চার রাস্তার সংযোগস্থলের চারটি মোড়েই গড়ে উঠেছে চারটি অটোরিকশার স্ট্যান্ড। এর মধ্যে আম্বরখানা পয়েন্টের পূর্ব দিকে টিলাগড়-আম্বরখানা সড়কে অটোরিকশার স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। এখানে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যত্রতত্র অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে, চলতি রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলাসহ চালকদের দৌরাত্ম্যে সারা দিনই বিশৃঙ্খলার কারণে সড়কে যানজট লেগে থাকে। পথচারীরাও পোহায় বিড়ম্বনা। পাশেই পশ্চিম দিকে টুকেরবাজার-আম্বরখানা-বাদাঘাট রোডের অটোরিকশা স্ট্যান্ড। পয়েন্ট থেকে পশ্চিম দিকে পয়েন্ট ভিউ মার্কেটের সামনে কিছু জায়গা তাদের চিহ্নিত করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু সেই জায়গার পাশাপাশি তারা একেবারে পয়েন্ট পর্যন্ত এলাকা দখল করে রেখেছে। একই অবস্থা পয়েন্টের দক্ষিণ দিকে বন্দরবাজার-আম্বরখানা রোডের অটোরিকশা স্ট্যান্ড এবং উত্তর দিকে আম্বরখানা-বিমানবন্দর সড়কে আম্বরখানা মসজিদের সামনেও স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। এসব স্ট্যান্ডের চালকরা কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র দাঁড় করিয়ে রাখে অটোরিকশা। কখনো কখনো রাস্তার অর্ধেক দখল করে দুই সারি দাঁড় করিয়ে রাখতে দেখা যায়। এই চারটি স্ট্যান্ড ছাড়াও বিমানবন্দর সড়কে আম্বরখানা মাছ বাজারের সামনে প্রতিদিন শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুই সারিতে দাঁড় করিয়ে রাখে চালকরা। এতে করে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সড়ক সম্প্রসারণ করা হলেও তার কোনো সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী।

নগরের মজুমদারী এলাকার বাসিন্দা মাসুক খান বলেন, ‘রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য সিটি করপোরেশন চেয়েছিল। আমরা তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিজেদের মূল্যবান জায়গা কোনো বাক্য ব্যয় ছাড়াই ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু তাতে রাস্তা বড় হলেও কোনো লাভ হয়নি। সম্প্রসারিত অংশ চলে গেছে অটোরিকশাচালকদের দখলে। ফলে যানজট সমস্যার কোনো অগ্রগতি হয়নি।’

যত্রতত্র স্ট্যান্ডের পাশাপাশি অটোরিকশাচালকদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ আম্বরখানার ব্যবসায়ীরাও। আম্বরখানা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী দিলওয়ার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পুরো আম্বরখানা এলাকাটাই যেন সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড। দোকানের সামনে, রাস্তায় যেখানে খুশি তারা অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে রাখে। কিছু বলতে গেলে তেড়ে আসে। তাদের যন্ত্রণায় ব্যবসা চালানো দুষ্কর হয়ে পড়ে।’ একই অভিযোগ নগরের ধোপাদীঘিরপাড়, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রোডের ব্যবসায়ীদের।

সিলেট জেলা মাইক অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজিকুল ইসলাম রানা বলেন, ‘নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে গড়ে উঠেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড। তারা নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো অটোরিকশা দাঁড় করাচ্ছে। মার্কেটগুলোর সামনের জায়গা তারা দখল করে রাখে, ফলে কাস্টমাররা গাড়ি নিয়ে এলে তা রাখার জায়গা পান না। কেউ তাদের অটোরিকশা সরাতে বললে দুর্ব্যবহার করে। এ নিয়ে প্রায়ই বাগিবতণ্ডা থেকে শুরু করে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।’

বিআরটিএ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং নগর কর্তৃপক্ষ এর দায় কোনোভাবে এড়াতে পারে না বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘হাজার হাজার অটোরিকশা রাস্তায় চলছে। কোনো পরিকল্পনা না থাকায় ভবিষ্যৎ চিন্তা না করেই এসব অটোরিকশার অনুমোদন দিয়েছে বিআরটিএ। অনুমোদন নেই এমন অটোরিকশাও কয়েক হাজার সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন, সড়ক সম্প্রসারণ হলে তা তো যানবাহন স্ট্যান্ডের দখলে চলে যাচ্ছে। জনগণের কোনো কাজে আসছে না। যানজট তো থেকেই যাচ্ছে।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের জায়গা থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। মেয়রের নেতৃত্বে প্রায় প্রতিদিন নগরে অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু এটা আমাদের একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।’ স্ট্যান্ড সরালে এত অটোরিকশাকে জায়গা দেওয়ার মতো স্থান সিটির নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিআরটিএ’রও দায় আছে। তারা এতো সিএনজিচালিত অটোরিকশার পারমিট দেয় কিভাবে। তা ছাড়া পুলিশ প্রশাসনেরও ভূমিকা রাখা জরুরি।’

দায় এড়ানোর সুযোগ নেই মেনে নিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সিলেটের উপপরিচালক মুহা. শহীদুল্লাহ কায়সার বলেন, ‘এত পরিমাণ অটোরিকশার অনুমোদন দেওয়া ঠিক হয়নি। গত বছরের মাঝামাঝি আমি সিলেটে উপপরিচালক হিসেবে যোগদানের পর দেখেছি প্রায় ১৮ হাজার অটোরিকশার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যেখানে ঢাকা-চট্টগ্রামে ১০ হাজার অটোরিকশার অনুমোদন দেওয়ার পর বিষয়টিতে কড়াকড়ি করা হয়েছে, সেখানে সিলেটে সংখ্যাটা বেশি।’ প্রায় দেড় যুগ আগে সিলেটে সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন এই কর্মকর্তা। সেই সময়ের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন ৯-১০ হাজার অনুমোদন দেওয়ার পর আমি তা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে পদোন্নতি পেয়ে আমি চলে যাওয়ার পর সে ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি।’ এই সমস্যার সমাধানে বিআরটিএ, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা মিলে একটা পথ বের করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

এসব বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ বলেন, ‘এসব বিষয়ে অভিযোগ পেলে আরো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সূত্র- কালের কণ্ঠ/ ক্রাইম সিলেট ডেস্ক/ এস এইচ

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..