সিলেটের বিশ্বনাথে স্কুলছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের দায়ে ভ্রাম্যমান আদালতে ৯মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডপ্রাপ্ত মনির মিয়ার পরিবার অভিযোগ করেছে ওইস্কুল ছাত্রী ও তার মায়ের অনৈতিক কাজে বাঁধায় দেয়ায়ই তারা ইভটিজিং নাটক সাজিয়ে নিরপরাধ মনিরকে ফাঁসিয়েছে। এমন অভিযোগ এনে গত বৃহষ্পতিবার সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কাছে এবং রবিবার সিলেটের ডিআইজি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত দিয়েছেন দন্তপ্রাপ্ত মনিরের বড়বোন উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের কর্মকলাপতি (মাধবপুর) গ্রামের মৃত আবদুল ছত্তারের মেয়ে ছালিমা আক্তার। একই গ্রামের মৃত ছিকন্দর আলীর ছেলে মতব্বির আলী, মোয়াজ্জিন আলী, ওয়াহিদ আলীর ছেলে হেলাল মিয়া, কয়েছ মিয়া, ইছহাক একাডেমীর শিক্ষক কাউছার আহমদ, নিজাম উদ্দিনের স্ত্রী নেহার বেগম, মেয়ে মাসুমা বেগম ও ফাহিমা বেগম অভিযুক্ত করে তিনি এই লিখিত অভিযোগ দেন। গত ১২ মে রবিবার পাশ্ববর্তী ঘরের নাতনি, স্থানীয় ইছহাক একাডেমীর ছাত্রীকে উত্যক্তের দায়ে ৯ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন ভ্রাম্যমান আদালতের হাকিম, বিশ্বনাথের উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেমাতুজ জোহরা। এর আগে থানা পুলিশ অভিযোগ পেয়ে শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মনিরকে তার বসতঘর থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
লিখিত অভিযোগে ছালিমা বেগম উল্লেখ করেন, তার পিতা মৃত আবদুল ছত্তার জীবিত থাকাকালিন সময় থেকে অভিযুক্তদের সাথে জমি-জমা সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধ চলে আসছে। তার পাশ্ববর্তী ঘরের ভাতিজা নিজাম উদ্দিন দীর্ঘ ২৫ ধরে কাতারে বসবাস করায় তার স্ত্রী নেহার বেগম ও বড় মেয়ে মাসুমা অনৈতিক কাজে লিপ্ত রয়েছে। প্রাইভেট পড়ানোর নাম করে মাসুমার স্কুল ইছহাক একাডেমীর শিক্ষক জামায়াত নেতা কাউছার আহমদ দিনে-রাতে, সময়ে-অসময়ে তাদের ঘরে আসা-যাওয়া করেন এবং মাসুমার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেন। এতে বাঁধা হয়ে দাড়ায় তার ছোট ভাই মনির মিয়া। সে শিক্ষক কাউছারকে মাসুমাদের ঘরে সময়ে-অসময়ে আসতে নিষেধ করে। এতে ওই শিক্ষক আসা-যাওয়ার পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিয়ে প্রকাশ্যে বেহায়াপনা শুরু করলে প্রায় তিনমাস পূর্বে আবারও তাকে নিষেধ করে মনির। একইভাবে মাসুমাকেও ওই শিক্ষককে বাড়িতে আসতে বারণ করতে বলে। এমন নিষেধাজ্ঞা পেয়ে শিক্ষক কাউছার মনিরকে দেখে নেয়ার, পুলিশ দিয়ে হাড় ভেঙ্গে দেয়ার ও জেলে পাঠানোর হুমকী দেন। মাসুমাও একইভাবে মামলা-পুলিশের হুমকী দেয়। এ নিয়ে মনির ও মাসুমার মধ্যে বাকবিতন্ডাও হয়। এরপর অভিযুক্তরা বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মুজাহিদের উপস্থিতিতে তার প্রতিষ্ঠিত ইছহাক একাডেমীতে গোপন বৈঠকে বসে তাদের (ছালিমাদের) পরিবারকে ফাঁসানোর জন্যে। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মনির পাশের ঘরের নাতনী মাসুমার সাথে ইসহাক একাডেমীর সামনে ইভটিজিং করেছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। গত ১১ মে শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় তাদের বাড়িতে থানা পুলিশের এসআই দেবাশীষ শর্ম্মাসহ ১০/১২জন পুলিশ উপস্থিত হয়ে বাংলো ঘরের দরজা ভেঙ্গে জোরপূর্বক প্রবেশ করে তার ছোট ভাই মনির মিয়াকে বেধড়ক পিটিয়ে টেনে হিচঁড়ে ঘর থেকে বের করে। বাড়ীতে ডাকাত ঢুকেছে এমন খবরে তার ভাগিনা নজরুল দৌড়ে উপস্থিত হয়ে ঘটনা জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা অভিযুক্তদের নির্দেশে পুলিশ তাকেও মারধর করে। পরে মনির মিয়াকে পিটাতে পিটাতে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে নিয়ে রাতভর মারধর করার কারণে তার শরীর রক্তাক্ত জখম হলে পরনের লুঙ্গি রক্তে ভিজে যায়। রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে থানা পুলিশের গাড়িতে করে তার ভাইকে তাদের কর্মকলাপতিস্থ বাড়ির সামনে নিয়ে আসা হয়। এ সময় ভ্রাম্যমান আদালতের হাকিম ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেমাতুজ জোহরা তাৎক্ষণিক আদালত পরিচালনা করে মনির মিয়াকে ৯ মাসের কারাদন্ড প্রদান করেন।
ছালিমা তার লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, টাকা দিয়ে মিথ্যা ও সাজানো ঘটনায় তার ভাইকে জেলে দেয়ার পর থেকে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন। প্রতিদিন অভিযুক্তরা তাদের ঘরের দরজা-জানালায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। দরজায় দাঁড়িয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, বাড়ি ছাড়তে হুমকি-ধামকিসহ তাদেরকে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়ে আসছে। যে কারণে জানমাল নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছে তার পরিবার। তিনি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক তাদের জানমালের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় মর্জি কামনা করেন।
Sharing is caring!