নগরীতে বৃদ্ধি পেয়েছে যাত্রীবেশে ছিনতাই

প্রকাশিত: ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ, মে ২০, ২০১৯

নগরীতে বৃদ্ধি পেয়েছে যাত্রীবেশে ছিনতাই

সিলেটে অভিনব কায়দায় যাত্রীবেশে ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন নগরীতে বসবাসরত ও বিভিন্ন এলাকা থেকে নগরীতে আসা লোকজন। সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকদের যোগসাজেসে এসব ঘটনা ঘটছে। নগরীতে এমন ছিনতাইর ঘটনা নতুন নয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই একটি চক্র এ কায়দায় ছিনতাই চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত এরকম অভিনব ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও ছিনতাইকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে।

সম্প্রতি নগরীতে দিনদুপুরে ছিনতাইর শিকার হওয়া সুনামগঞ্জ দিরাইয়ের প্রবাসী আনছার আলী বলেন, জিতু মিয়া পয়েন্ট থেকে বন্দরবাজার যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় উঠেন। চালক ছাড়াও অটোরিকশায় আরো ৪ জন যাত্রী ছিলেন। বন্দরবাজার কুশিয়ার গেষ্ট হাউজের সামনে এসে চাল বলল আমি আর সামনে যাচ্ছি না। যার ফলে আনছার আলী নামে যান। এরপর তিনি পকেটে হাত দিয়ে দেখেন টাকা মোবাইল কোন কিছু নেই। তিনি আরো বলেন- এই ঘটনার শিকার হওয়ার পর অনেকের সাথেই বিষয়টি শেয়ার করেছি। দেখলাম শুধু আমি না, নগরীতে অনেক মানুষ একই কায়দায় ছিনতাইর শিকার হয়েছেন। ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিলে আরো অনেকেই এমন ঘটনার কথা তার স্ট্যাটাসের কমেন্টে তুলে ধরেন।

জানা যায়, সিলেটে এই পন্থায় সাধারণ মানুষের গুরত্বপূর্ণ জিনিষ নিয়ে চম্পট দেয় ছিনতাইকারীরা। সিলেট মহানগরীর বন্দরবাজার-মেজরটিলা, আম্বরখানা-মদিনা মার্কেট, বন্দরবাজার-হুমায়ুন রশীদ চত্বর, টিলাগড়-আম্বরখানা, উপশহর-সোবহানীঘাট-বন্দরবাজার, বন্দরবাজার-আম্বরখানা, সুরমা পয়েন্ট-ওসমানী মেডিকেল, মদীনা মার্কেট-ভার্সিটি গেইট প্রভৃতি এলাকায় নিয়মিত সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে থাকে।

এসব এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে ছিনতাইকারীরা আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকে। একেকটি অটোরিকশায় চালক ছাড়া আগে থেকেই দু’তিনজন ‘যাত্রী’ ওঠে বসে থাকেন। কোনো প্যাসেঞ্জার এলে তাকে অটোরিকশায় তুলে নেয়া হয়। এক্ষেত্রে আগে থেকেই বসে থাকা যাত্রীরা কৌশলে ওই ব্যক্তিকে পেছনের সিটে মধ্যখানে কিংবা তাদের সুবিধাজনক যায়গায় বসিয়ে দেয়। এরপর অটোরিকশা চলাকালে সুযোগ বুঝেই যাত্রীর জিনিষপত্র হাতিয়ে নেয় তারা। আর কাজ শেষ হলেই নানা কাহিনীর জন্ম দিয়ে ঔ যাত্রীকে নামিয়ে তারা পালিয়ে যায়।

কোন কোন সময় আরো বড় ঘটনাও ঘটায় তারা। অটোরিকশা চলাকালীন নিরাপদ স্থান বুঝে ছিনতাইকারীরা যাত্রী বেশ থেকে নিজেদের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ধারালো অস্ত্র কিংবা পিস্তল ধরে অটোরিকশার ঔ ব্যাক্তির কাছ থেকে টাকা, মোবাইলসহ সবকিছু কেড়ে নিয়ে তাকে নামিয়ে দিয়ে চম্পট দেয় তারা।

গত ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ভোর রাতে নগরীর চৌকিদিঘী মসজিদ গলি হইতে যাত্রী বেশে চাঁর ছিনতাইকারী হাউজিং এস্টেট যাবে বলে অটোরিকশা উঠে। পরে ওই ছিনতাইকারীরা মজুমদারি কুনাপাড়া এলাকায় ১০৬/১ বাসার সামনে গিয়ে সিলেট-থ ১১-৯৪-১৩ অটোরিকশাটি আটক রেখে ও চালক হরলালকে একটি হাউজিং এস্টেট ৪ নং রোডে স্টেইট কলেজের রান্না ঘরে চালককে বন্ধি করে ছিনতাকারিরা। চৌকিদিঘীর আঙ্গুর মিয়ার গলির বাসিন্ধা সিএনজি চালক হরলাল। পরে চালক ওই রান্না ঘরের পিছনের জানালা দিয়ে পালিয়ে আম্বরখানা ফাঁড়িতে চলে আসে। ফাঁড়ির টিএসআই নজরুল এক ছিনতাইকারীকে আটক করেন। আটককৃত ছিনতাইকারী গোয়াইটুলা এলাকার শেখ সেলিমের পূত্র মিলন কমিশনারের বাসার বাসিন্ধা শেখ মোঃ জীবন মিয়া (২৯)। ওই ছিনতাইকারির তথ্য অনুযায়ী ১০৬/১ বাসার সামন থেকে সিএজি উদ্ধার করা হয়।

এদিকে গত ১০ মে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দক্ষিণ সুরমার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তেতলী দারগা বাড়ীর সামনের রাস্তায় নির্জন এলাকা থেকে ডাকাতদের আটক করা হয়। ডাকাতরা চালককে হত্যার উদ্দেশ্যে হাত বেঁেধ মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে ধারালো চাকু দ্বারা হত্যার চেষ্টা করছিলো। এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পান ঐ চালক। এর আগে বিশ্বনাথে একইভাবে চালককে হত্যা করে গাড়ি ছিনতাইর ঘটনা ঘটে।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুসা জানান, ডাকাতদের কবলে পড়া চালক মো. ইরা মিয়া (৩০) সহ সিএনজিচালিত অটোরিকশাটিও উদ্ধার করা হয়েছে ওই দিন। তিনি জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তেতলী দারগা বাড়ীর সামনের রাস্তায় গত ১০ মে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১ টার দিকে টহল দিচ্ছিলো দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ। এসময় নির্জন স্থানে একটি সিএনজি অটোরিক্সা দাড়িয়ে থাকতে দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। সাথে সাথে এ্যাকশনে গেলে ৫ ডাকাতকে হাতেনাতে ধরে ফেলে পুলিশ সদস্যরা। তখন সিএনজি অটোরিক্সা চালক ইরা মিয়াকে হাত বাঁধা ও মুখে কাপড় গুঁজা অবস্থায় উদ্ধার করে। এসময় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি চাকু, রুমাল ও গামছা জব্দ করা হয় এবং ভিকটিমের ছিনিয়ে নেওয়া সিএনজি অটোরিক্সাটিও উদ্ধার করা হয়। তিনি জানান, এ চক্র প্রায়শ সিএনজি অটোরিক্সা চালকদের টার্গেট করে ডাকাতি করে। ৫ ডাকাত আটক হওয়ায় এ চক্রের সন্ধান বের করা আরো সহজ হবে বলে জানান তিনি। ভিকটিম গাড়ি চালক মো. ইরা মিয়া (৩০) জানান, গাড়িটি প্রথমে ভাড়া নেয়। এরপর হাত বেঁধে মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে ধারালো চাকু দ্বারা হত্যার চেষ্টা করে।

এ ঘটনায় আটককৃতরা হচ্ছে এয়ারপোর্ট থানার ধোপাগুল উমদারপাড়া (বর্তমানে ঘাসিটুলা কলাপাড়া চাঁন মিয়ার বাড়ী) এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে মো. জাকারিয়া (২১), তাহিরপুর উপজেলার রতনশ্রী গ্রামের (বর্তমানে ঘাসিটুলা কলাপাড়া নুর মিয়ার বাসা) সুহেল আহমদের ছেলে তুষার আহমদ (২০), একই উপজেলার কাউকান্দি গ্রামের (বর্তমানে শেখঘাট কলাপাড়া শওকতের বাসা) ফজলুল হকের ছেলে ছুফায়েল আহমদ (১৯), চাঁদপুর সদর উপজেলার ভিঙ্গুলিয়া গ্রামের (বর্তমানে ঘাসিটুলা কলাপাড়া, দূর্বার-৬৯/১) মঈনউদ্দিন খাঁনের ছেলে সাগর আহমদ (১৮) ও লাখাই উপজেলার বামুই গ্রামের (বর্তমানে ঘাসিটুলা লামাপাড়া, দূর্বার-৬২) মো. লায়েছ মিয়ার ছেলে খোকন আহমদ আব্দুল্লাহ (১৮)।

এদিকে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সিলেটের বিশ্বনাথে সিএনজি অটোরিকশা চালক কামরুল ইসলাম (১৯)’কে দক্ষিণ সুরমা এলাকায় নিয়ে গলা কেটে হত্যা করে গাড়ি ছিনিয়ে নেয় ডাকাত দল। পরে ধরা পড়ে ঐ ছিনতাইকারী চক্র। তারা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে জানায়, সিএনজি অটোরিকশা ছিনতাই করার জন্যই গাড়ির চালক কামরুল ইসলামকে গলা কেটে নির্মমভাবে খুন করা হয়।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..