সিলেটে আতঙ্কের নাম “টিলাগড় ছাত্রলীগ”

প্রকাশিত: ৩:২০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯

সিলেটে আতঙ্কের নাম “টিলাগড় ছাত্রলীগ”

এহিয়া আহমদ :: টিলাগড় সিলেটে রাজনীতির “আতঙ্ক ও মার্ডারজোন” হিসেবে পরিচিত। টিলাগড় এলাকায় অবস্থিত সিলেট তথা দেশের প্রাচীন ও সুনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমসি কলেজ। এছাড়া রয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট সরকারী কলেজ, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ বেশকিছু নামীদামী প্রতিষ্ঠান। এসব মিলিয়েই একসময় শিক্ষারক্ষেত্রে বেশ আলোচনায় ছিল নগরীর টিলাগড় এলাকা। একসময় সিলেটের ছাত্র রাজনীতির পীঠস্থান বলে আখ্যায়িত করা হত এই টিলাগড়কে। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে টিলাগড় এলাকাটি তার আভিজাত্য ও সুনাম হারিয়ে এখন সিলেটজুড়ে এক “আতঙ্ক ও মার্ডারজোন” হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। হানাহানি ও গ্রæপিং এবং উপগ্রæপিংয়ের রাজনীতির প্রতিহিংসার কারণেই টিলাগড় “আতঙ্ক ও মার্ডারজোন” হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছে। দিন দিন টিলাগড় এলাকায় নোংরা রাজনীতির বংশ বিস্তার করছে এবং পাশাপাশি জনসাধারণের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। টিলাগড় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে সবসময়ই। যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে দুই গ্রæপের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। সিলেটে বহুধাবিভক্ত ছাত্রলীগের টিলাগড় গ্রæপ এখন এক আতঙ্কের নাম। অন্তত পাঁচটি গ্রæপ-উপগ্রæপে বিভক্ত টিলাগড় বলয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বেপরোয়া কর্মকান্ড এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে পুরো এলাকায় এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় এমসি কলেজ ও সিলেট সরকারি কলেজকে কেন্দ্র করে টিলাগড় থেকেই পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়েছে সিলেটে ছাত্রলীগের রাজনীতি। ঐতিহ্যবাহী এ দুই কলেজে পড়ালেখা করা অনেক ছাত্র নেতা জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে এখন এমসি ও সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের থাকতে হয় উৎকণ্ঠার মধ্যে। ছাত্রলীগের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী। মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক রণজিত সরকার টিলাগড়ের রাজনীতির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণকারী। অতীতে তারা দুজন একসঙ্গে রাজনীতি করলেও এখন তাদের মধ্যে বেশ দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে। সেই দূরত্বই টিলাগড়ে তৈরি করেছে বেশ কয়েকটি গ্রæপ ও উপগ্রæপ। এসব গ্রæপ ও উপগ্রæপের নেতাদের সঙ্গে জড়িত কয়েকশ কর্মী। গ্রæপ ও উপগ্রæপের নেতারা টিলাগড়ে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে ও কলেজ দুটিতে আধিপত্য বিস্তার করতে তাদের অনুসারী কর্মীদের নিয়ে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া, মোটর সাইকেল সোডাউন, মিছিল-মিটিং, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া দিয়ে থাকেন। উল্লেখ্য, আজ সোমবার (১৮ ফেব্রæয়ারি) এমসি কলেজে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং এতে ৪জন ফটো সাংবাদিকের উপর হামলা হয়। সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজে মোহনা বসন্ত উৎসব স্থলে চেয়ারে বসা নিয়ে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রæপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের উপর ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা চালান। আজ সোমবার (১৮ ফেব্রæয়ারি) সকাল ১০টায় মোহনা সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে শুরু হয় বসন্ত উৎসব। এ উৎসব চলাকালীন সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে চেয়ারে বসা নিয়ে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় সেখানে থাকা সাংবাদিকরা এগিয়ে গেলে তাদের উপরও হামলা চালায় স্থানীয় ওই গ্রæপের ছাত্রলীগ কর্মীরা। হামলার শিকার সাংবাদিকরা হলেন, দৈনিক সমকালের ফটো সাংবাদিক ইউসুফ আলী, দৈনিক ভোরের কাগজের ফটো সাংবাদিক অসমিত অভি, সিলেট ভয়েসের ফটো সাংবাদিক মিঠু দাস জয় ও সিলটিভির ক্যামেরা পার্সন কাওসার। এ ব্যাপারে দৈনিক ভোরের কাগজের ফটো সাংবাদিক অস্মিত অভি বলেন, “এমসি কলেজে মোহনা বসন্ত উৎসব স্থলে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রæপের সংঘর্ষ বাঁধে, পরে ফটো সাংবাদিক মিঠু দাস জয় এগিয়ে গিয়ে তাদের সংঘর্ষের ছবি তুলতে গেলে তার ওপর চড়াও হয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে অন্যান্য সাংবাদিকরা এগিয়ে গেলে তাদের উপরও হামলা করে ছাত্রলীগ কর্মীরা।” এ ব্যাপারে দৈনিক সমকালের ফটো সাংবাদিক ইউসুফ আলী বলেন, “ছাত্রলীগ কর্মীরা উপস্থিত সাংবাদিকদের উপর হামলা করেছে। হামলার সময় আমার হাতে থাকা ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সকলের উপস্থিতে পরে তা আর ছিনিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।” ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহপরান (র:) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন বলেন, “আমরা ঘটনাস্থলে আছি। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ব্যাপারটি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি।”

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2019
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
232425262728  

সর্বশেষ খবর

………………………..