সিলেট ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:৪৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৯
মো. আজমল আলী :: সিলেট নগরীর বিভিন্ন ব্যস্ততম রাস্তায় বসা হকার উচ্ছেদে ক’দিন ধরে বিরামহীন অভিযান চালাচ্ছেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কিন্তু তার কার্যালয়ে পাশে এবং জেলা পরিষদের সামনের ফুটপাত দখলে স্থায়ী কাপড় ব্যবসা। জেলা পরিষদের সামনে মাছ মাছ বিক্রেতাদের দীর্ঘদিনের দৌরাত্ম। মাছের পচা ও ময়রা পানিতে দুগ্র্ন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পথচারীদের জুড়ো ও কাপড় ভিজে যায়। এসকল অবৈধ মাছ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। অজ্ঞাতকারণে এই অবৈধ মাছ বিক্রেতাদের উপর নজর পড়ছে না আরিফের। এমন মন্তব্য নগরীর সচেতন মহলের।
এদিকে সুরমা মাকের্টের উত্তরা রেস্টুরেন্টের সামনে রাস্তায় ট্যাংকি দিয়ে হোটেলের সকল ময়লা জমিয়ে রাখে হোটেল মালিক। রাত হলেই ওই ময়লা পানি রাস্তায় ফেলে মানুষের চলাচলের অসুবিধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ সম¯্রা নিরসনে সুরমা মার্কেট থেকে সিটি কর্পোরেশনের কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত আবেদন করেও কোন প্রতিকার পান নি ব্যবসায়ী ও নাগরিকরা।
নগরীর প্রাণকেন্দ ও নান্দনিক সৌন্দর্য মন্ডিত সিলেট জেলা পরিষদ ও জালালালাবাদ পার্ক। যে জায়গাটি সব সময়ই জনগুরুত্বপূর্ণ এবং নগরীর প্রবেশদ্বার। দেশ-বিদেশের পর্যচকদের প্রথম পদচারনা এখানেই।
সেই জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবৈধ ভাবে মাছের হাট বসিয়ে মুনাফা নিচ্ছে একটি মহল। সে মহলে রয়েছে পুলিশ ও রাজনৈতিক লেবাসে থাকা কিছু নেতা ও হোতা। এ সকল অসাধু ব্যাক্তিদের কাড়ি কাড়ি টাকা আয় হলেও পরিবেশের জন্য এই অবৈধ মাছের হাট বয়ে আনছে ভয়াবহ বিপর্যয়। ফলে বিপর্যস্থ হচ্ছে পরিবেশ। নান্দনিকতা হারাচ্ছে পবিত্র এই নগরী।
সূত্র জানায়, প্রতিদিনই সিলেট নগরীর প্রশাসনিক এলাকা জেলা পরিষদ ও জালালাবাদপার্ক এবং জেলা প্রশাসকের বাস ভবনের সামনের রাস্তায় বসে মাছের অবৈধ হাট। এক কিলোমিটার জুড়ে সেই হাটটি বসে সন্ধ্যা থেকে। আর চলে রাত অবধি। এই অবৈধ মাছের হাটের কারণে ঐ এলাকা দিয়ে ছড়ায় প্রচুর দূর্গন্ধ। তাছাড়া মাছের পানি, বরফগলা ও নানা ধরণের আর্বজনা সৃষ্টি হয়ে বিপর্যস্থ হচ্ছে পরিবেশ। যদিও সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিছন্ন কর্মীরা প্রতিদিন তাদের ময়লা পরিস্কার করে। তবে তাতেও কোন ফল পাওয়া যায়নি। উল্টো আরো পানি থেকে দূর্ঘন্ধ সৃষ্টি হয়ে ছড়াচ্ছে নানা ধরণের বায়ু বাহিত রোগ বালাই। ফলে ঐ এলাকা দিয়ে যাতায়াতরত অনেককেই ভোগছিন নানা ধরণের ভাইরাস জনিত রোগে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাতদিন মাছির ভনভন কাদা ও ময়লাযুক্ত পানি লেগেই থাকে সিলেট জেলা পরিষদ ও সুরমা মার্কেটের সামনে। সন্ধ্যা হতেই রাস্তায় বসানো হয় দুই সারি মাছের হাট। মাছের পচা ও বরফের পানিতে তলিয়ে যায় পুরো রাস্তা। মেঘবৃষ্টি না হলেও বারমাস রাস্তা দিয়ে বয়ে যায় পচা পানি। পথচারীর জুতোর উপরে টপকে যায় মাছের পচা পানি। তাই অনেকে এ রাস্তা দিয়ে হাটতে গিয়ে পড়েন চরম বিপাকে। ফুটপাতে জেলা পরিষদ কবর্মচারীদের বসানো কাপড়ের দোকান থাকায় ফুটপাত দিয়েও চলাচল করা যায় না। শুকনো মওসুমের রাতের বেলা পানিতে রাস্তা ভেসে সকালে শুকায়। আর দিনের বেলা পুরো রাস্তা দখল করে নেয় মশা ও মাছি। মাছের পানি মাছির প্রধানখাদ্য বিধায় নগরীর নর্দমার মাছিগুলো এসে স্থান নেয় জেলা পরিষদের সামনের রাস্তায়। রাস্তা দিয়ে যাতায়াতরতরা নাকে রুমাল দিয়ে রাস্তার এ অংশ পার হতে হয়।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, আদালতের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্্য করে সিলেট জেলা পরিষদের এক একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদের সামনের ফুটপাত একসনা নজর দিয়েছেন হকারদের কাছে। এ নজরানার ভাগও পেয়ে থাকে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ এমনকি পুলিশ ও সিলেট সিটি কর্পেরেশনের কিছু কর্তাব্যাক্তি। ফলে জনচলাচলের ফুটপাতে সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা।
অভিযোগে আরো প্রকাশ, সিলেট জেলা পরিষদের সামনের রাস্তাটিতে দোকান প্রতি দৈনিক দুইশ’ টাকা হারে চাঁদায় মাছ ব্যবসায়ীদের বসায় বন্দরবাজার ফাড়ি পুলিশ। প্রায় দুশটি মাছের দোকান বসিয়ে দৈনিক ৪০হাজার টাকা আদায় করে নেয় বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ। ফাড়ি পুলিশের লাইনম্যান হয়ে জনৈক সুমন মাছ ব্যবসায়ী প্রত্যেক দোকানীর কাছ থেকে রোজানা দু’শ’ টাকা করে চাঁদা আদায় করে নেয়। ফাড়ি পুলিশের পক্ষে আদায়কৃত এ টাকার ভাগ এসএমপির পদস্থ কর্মকর্তাদেরও দেয়া হয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
সিলেটে সিটি কর্তৃপক্ষ-সহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নজরে বারবার আনা সত্বেও রাস্তার উপর থেকে মাছের হাট ও ফুটপাত থেকে কাপড়ের ব্যবসা না সরানোর ফলে নগরীর সৌন্দর্য ও নান্দনিরক পরিবেশ চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এব্যাপারে ভোক্তভোগীরা সরকার ও প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের আশু পদক্ষেপ ও দ্রুততর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সেলিম মিয়া জানান, তিনি বাজারটি সম্মন্ধে অবগত নন। তার কোন পুলিশও এটার সাথে জড়িত নয়। তবে তিনি বিষয়টি দেখবেন। আর যাতে করে এখানে কোন অবৈধ মাছের হাট না বসে সে লক্ষ্যে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা গ্রহণ করবেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শী ও সচেতন নাগরিকরা এ ক্ষেত্রে ওসিকে চোখ থাকতে অন্ধ বলে অভিহিত করছেন।
সিলেট জেলা পরিষদের সামনের ফুটপাত ও রাস্তা সম্পর্কে সিটি মেয়র আরিফুল হক জানান, আমি সবসময় হকার তাড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু জেলা পরিষদের কতিপয় কর্মচারী আমার অবর্তমানে তাদের বসিয়ে থাকে। এ স্থান হকারমুক্ত করার গুরুদায়িত্ব জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বলে জানান তিনি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd