সিলেটে প্রতি বছর উৎপাদিত হয় দেড়শ’ কোটি টাকার সুপারি

প্রকাশিত: ১:১৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৭, ২০১৮

সিলেটে প্রতি বছর উৎপাদিত হয় দেড়শ’ কোটি টাকার সুপারি

Manual7 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটের ছোট বড় সবক’টি হাট-বাজারে এখন নতুন সুপারি বিক্রির ধুম চলছে। মৌসুম শুরুর পর থেকেই ছোট বিক্রেতা থেকে পাইকারি ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম এখন সুপারির বাজার। কৃষি বিভাগের ৩ বছর আগের হিসেবে দেখা যায়, সিলেটে প্রতি বছর দেড়শ’ কোটি টাকার সুপারি উৎপাদিত হয়। কৃষি বিভাগের কাছে এর আগের বা পরের কোন হিসেব পাওয়া যায়নি। সিলেটের অন্যতম অর্থকরী ফসলটির পরিসংখ্যান নেই জেনে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন এ ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা । কৃষি বিভাগের জবাব, কেন্দ্র থেকে সুপারির ব্যাপারে কোন তথ্য চাওয়া হয় না বলে তারা কোন তথ্য সংগ্রহ রাখেন না। এজন্য কোন পরিকল্পনা কিংবা সহায়ক প্রকল্পও নেই তাদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেটের এমন কোন বাড়ি নেই-যে বাড়িতে কোন সুপারি গাছ নেই। এখানকার বেশিরভাগ বাড়ির উঠান, পুকুর পাড়, রাস্তার পাশ, বাড়ির ঢাল সবখানেই সুপারির গাছ রয়েছে।

Manual7 Ad Code

যেকোন বাড়ির দিকে দূর থেকে তাকালে প্রথমেই চোখে পড়বে ২/১টি সুপারির গাছ মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মৌসুমের শুরু থেকে গাছে গাছে শোভা পায় দৃষ্টিনন্দন গাঢ় সবুজ কিংবা কমলা-হলুদ রংয়ের সুপারি।

সিলেট আঞ্চলিক কৃষি অফিসের ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগে মোট ২০ হাজার ৫শ’ ৬৯ মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদিত হয়। গড় বাজার মূল্য (প্রতি সুপারি ২৫ গ্রাম ধরে) যা প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, সুপারির ব্যবসা এর থেকেও অনেক বেশি। সিলেট বিভাগের মধ্যে সিলেটে ১২ হাজার ১১০ মেট্রিক টন, মৌলভীবাজারে ৫ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন, হবিগঞ্জে ৮৩৫ মেট্রিক টন এবং সুনামগঞ্জে ২ হাজার ২৭৪ মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদিত হয়। তবে, গত ৩ বছরের সুপারি উৎপাদনের হালনাগাদ কোন তথ্য নেই কৃষি বিভাগের কাছে। আবার এই পরিসংখ্যানের পূর্বের কোন তথ্যও পাওয়া যায়নি। এদিকে, সিলেট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে গিয়ে কেবল সিলেট জেলার ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের একটি পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। এতে দেখা যায়, শুধু সিলেটে গত বছরে সুপারি উৎপাদিত হয়েছে ২০ হাজার ৭২ মেট্রিক টন।
সিলেট আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আলতাবুর রহমান জানান, মন্ত্রণালয় থেকে চাওয়া হয় না বলে সুপারির হিসাব রাখা হয় না। মন্ত্রণালয় থেকে ফসলের যে তালিকা আসে-সেই ফসল গুলোর তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তবে, সিলেটে সুপারির উৎপাদন বাড়ছে। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মতো সিলেটে সুপারির বাণিজ্যিক উৎপাদন না থাকায় এ ব্যাপারে এখানে সরকারের কোন পরিকল্পনা বা সহায়তা প্রকল্প নেই। তবে এখানে কোন কৃষক সহায়তা চাইলে কৃষি বিভাগ সহায়তা করবে। তিনি বলেন, যে এক অর্থ বছরের হিসাব পাওয়া গেছে তাও হয়তো কোন বিশেষ কারণে সংগ্রহ করা হয়েছিল। সুপারি সম্পর্কে বলেন, সুপারি গাছ রোপণের প্রায় ৫ বছর পরে ফসল পাওয়া যায় এবং ৩০/৪০ বছর পর্যন্ত ফসল তোলা যায়। এছাড়া, সুপারি গাছ লাগাতে অতি অল্প জায়গা লাগে এবং এর নিচে অন্য গাছ লাগানো যায়। ফলে একই সাথে একাধিক ফসল উৎপাদন করা যায়। পাহাড়ি অঞ্চলে সুপারি বাগানের সাথে পান ও আনারস চাষ করতে দেখা যায়। তবে, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটের সুপারি উন্নত মানের বলে জানান তিনি।

সুপারি ব্যবসায়ীরা জানান, সিলেটের জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, সুরিঘাট, হরিপুর, গোয়ালাবাজার এবং মৌলভীবাজারের বড়লেখা ও শ্রীমঙ্গল থেকে সবচেয়ে বেশি সুপারি আসে। কানাইঘাটের সুরইঘাট সুপারির পাইকারী বাজার হিসাবে প্রসিদ্ধ। প্রতি শুক্র ও সোমবার সেখানে সুপারির বাজার বসে। সিলেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারী সুপারি ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে সুপারি সংগ্রহ করেন। এছাড়া, বিভিন্ন উপজেলা থেকে ছোট ছোট সুপারির চালান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মজুদ করে। মজুদ করা সুপারি তারা পাইকারী ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করেন। সুরইঘাট বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী ইমরান আহমদ জানান, তারা নিজস্ব বাগান এবং স্থানীয় ক্রেতাদের কাছ থেকে সুপারি সংগ্রহ করে বাজারে আনেন। পরে সিলেটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা এ বাজার থেকে সুপারি সংগ্রহ করেন। সুপারি প্রতি ভি (৪৪০টি) বাজার ভেদে ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় বলে জানান তিনি। তবে, সিলেটের অনেক এলাকায় ৪শ সুপারিতে এক ভি ধরা হয়।

সিলেটের পাইকারী ব্যবসায়ীরা জানান, তারা সুপারি ক্রয় করেন ভি (৪০০টি) হিসেবে। আবার সুপারি ভি হিসেবে ক্রয় করলেও বিক্রি করতে হয় কেজি হিসেবে। এক ভি সুপারি থেকে প্রায় সোয়া ২ কেজি শুকনা সুপারি পাওয়া যায় বলে জানান তারা। তবে, সুপারির মৌসুমে তাদের অনেক সময় ক্ষতিতে বিক্রয় করতে হয়। উৎপাদন মৌসুমে নিজস্ব গাছের উৎপাদিত সুপারির ফলে কমে যায় এ পণ্যের দাম। আবার মৌসুম ছাড়া সুপারি বাইরে থেকেও আমদানী করা হয়। মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সুপারি আমদানি হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

Manual2 Ad Code

সিলেটের সর্ববৃহৎ পাইকারী সুপারি বাজার খ্যাত পূর্ব কাজিরবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান বলেন, সিলেটের উৎপাদিত সুপারি ছাড়াও বিদেশ থেকে আমদানিকৃত সুপারি বাজারে রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকা থেকেও সুপারি এখানে আসে। কৃষি বিভাগ সুপারির হিসাব রাখে না জেনে বিস্মিত হন। তিনি বলেন, সুপারি উৎপাদন ও ব্যবসার সাথে অসংখ্য মানুষের জীবন জীবিকা জড়িত। তাই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা প্রয়োজন।

Manual8 Ad Code

যোগাযোগ করা হলে সিলেট চেম্বারের সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ বলেন, সুপারি আমাদের একটি অর্থকরী ফসল। কৃষি বিভাগের কাছে সুপারি উৎপাদনের হিসাব না থাকার বিষয়টি বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, সিলেটে দেড়শ’ কোটি টাকার সুপারি উৎপাদনের বিষয়টি আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫শ’ কোটি টাকায় উন্নীত করা উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে প্রতি বছর সুপারি আমদানি করা হয়। ব্যবসায়ীদের সহায়তা ও সুপারি উৎপাদন বাড়ানো গেলে আমদানী হ্রাস পাবে। এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।

Manual8 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..