গোয়াইনঘাটে প্রাথমিক শিক্ষার দৈন্যদশা

প্রকাশিত: ১২:৪২ পূর্বাহ্ণ, মে ৯, ২০১৮

মিনহাজ উদ্দিন, গোয়াইনঘাট থেকে :: গোয়াইনঘাটে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় দৈন্যদশা বিরাজ করছে। উপজেলার ১২৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অনুমোদিত ১২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে বিভিন্ন বিদ্যাপীঠে পরিত্যক্ত ভবনসহ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, কোনো কোনো বিদ্যালয়ে ভবন না থাকা কিংবা ভবন থাকলেও ঝড়ে বিধ্বস্ত, পরিত্যক্ত ভবনসমূহে বাধ্য হয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ের ভবনসমূহ নির্মিত হলেও খাবার পানি, শৌচাগার সুবিধা সংকট বিদ্যমান রয়েছে। এমন স্কুলের মধ্যে দেখা যায়, হাকুর বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লামাদুমকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের করুণঅবস্থা। হাকুর বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ২০১৭ সালের কালবৈশাখী ঝড়ে ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, উড়িয়ে নেয় মূল ভবনের ঢেউটিন।
ধুমড়ে মুচড়ে পড়ে ভবনটির অবকাঠামো। এমতাবস্থায় ১ বছরেরও অধিক সময় পার হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে উক্ত বিদ্যালয়ের ভবন মেরামত বা সংস্কার না হওয়ায় কোমলমতি অর্ধ সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর দৈনন্দিন পাঠদানসহ শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। দুর্ভোগের শিকার হয়ে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যসূচি সম্পন্ন করতে পারছে না। এমন করুণ অবস্থা থাকায় উক্ত বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে রোদ্রে পুড়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ায় নানা রোগ সুখে আক্রান্ত হয়ে পাঠ গ্রহণে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। এব্যাপারে কথায় হলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. তাজউদ্দিন জানান, ২০১৭ সালে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সংস্কার ও মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিতভাবে অবহিত করা হলেও এখনও পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ওই ভবন সংস্কারে কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় বিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ১৯৮৪ সালে স্থাপিত ওা িবিদ্যাপীঠে স্টিল এঙ্গেল টিনশেড ভবন নির্মিত হয়েছিল। বিগত ১৪-১৫ বছরেও উক্ত বিদ্যাপীঠের ভবন সংস্কারে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উপজেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার কাজের তালিকাভুক্ত করায় ক্রমিক তালিকায় নিচে নাম থাকায় মেরামত বা সংস্কার কার্যক্রম থেকে দূরে রয়েছে এই বিদ্যালয়ের ভবনটি। ফলে দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হয়ে। এলাকার সচেতন মহল ও অভিভাবকরাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবরে ওই ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি সংস্কারে বার বার ধরনা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। ১৮৭০ সালে স্থাপিত হয় লামাদুমকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বয়সের ভারে ন্যুব্জ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ওই বিদ্যাপিঠটি আতংকের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। আস্তর, প্লাস্টার খসে পড়ছে। একটু বৃষ্টি হলে ছাদ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি। বিকল্প ব্যবস্থাদি না থাকায় উক্ত ঝুকিপূর্ণ ভবনে অর্ধ সহস্রাধিক শিক্ষার্থীরা ঝুকিপূর্ণ ভাবে পাঠ গ্রহণ করছে। এ ব্যাপারে কথা হলে বিদ্যালয়ের সভাপতি সুবাস চন্দ্র দাস বলেন, ইতিপূর্বে উক্ত বিদ্যালয়ের ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। উপজেলা শিক্ষা কমিটির কার্য তালিকায় রেজুলেশন করে ১ বছর পূর্বে কর্তৃক পক্ষ বরাবরে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। দুঃখের বিষয় হল এখনও বিদ্যাপিঠটির সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উপজেলার হাওরাঞ্চল বেষ্টিত পন্নগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ঢাকঢোল পিটিয়ে গত বছর ২রা ডিসেম্বর ৮৯ লাখ টাকা ব্যায়ে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে নির্মিত ভবন উদ্বোধন করা হয়। হাওরবাসীর শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মনে শিক্ষাবান্ধব সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ভরে উঠলেও উক্ত বিদ্যালয়ে বেশ কিছু সমস্যা দৃশ্যমান রয়েছে। ৪০০ শিক্ষার্থীনির্ভর এ বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের সিংহভাগ হতদরিদ্র লোকজন। এই বিদ্যালয়ে নেই কোনো শৌচাগার। নেই এক ফোঁটা বিশুদ্ধ সুপেয় পানির ব্যবস্থা। বাধ্য হয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্থানীয় নালা ও খালের পানি পান করে পেটের পীড়াসহ নানা রোগশোকে ভোগে থাকে। শৌচাগার না থাকায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কর্তব্যরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও দুর্ভোগ-দুর্দশার অন্ত নেই। আশপাশের বাড়িগুলোতে গিয়ে শৌচাগার এবং পয় নিষ্কাশন কাজ সারতে হয় তাদের। শুধু এ বিদ্যাপীঠগুলোই নয়, এমতাবস্থায় উপজেলার অন্যান্য স্থানেও অগণিত বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসমূহ অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে কথা হলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আফজাল হোসেন জানান, উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসমূহের তালিকা প্রণয়ন করে এবং এসব বিদ্যালয়ে গণশৌচাগার এবং সুপেয় পানির সমস্যা তালিকা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে পাঠানো হয়েছে। সূত্র- মানবজমিন

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

May 2018
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..