সিলেট ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:৩৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল খন্দকার (র.) দাখিল মাদ্রাসার সুপারেনটেন্ট আনছার উদ্দিন শাহ জোড়পূর্বক একই প্রতিষ্ঠানের ৮ম শ্রেনীর ছাত্রকে বলাৎকারের ঘটনার দায় স্বীকার করে স্ব-ইচ্ছায় অব্যাহতি নেন। এর সপ্তাহ পার না হতেই স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের যোগসাজেসে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তিনি পুনরায় স্বপদে ফেরার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছেন। আর এতে স্থানীয়দের মধ্যে চাঁপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এদিকে মাদ্রাসা সুপারের পদ খালি হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত নতুন সুপার নিয়োগের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। উল্টো অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে পুনরায় স্বপদে বহাল করতে মাদ্রাসা কমিটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
জানা যায়, গত ১ ফেব্রুয়ারী দুপুরে মাদ্রাসার একটি ক্লাসরুমে একই প্রতিষ্ঠানের ৮ম শ্রেনীর ছাত্রকে জোড়পূর্বক বলাৎকার করেন। এতে শারিরীক এবং মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত ছাত্রটি তার বাবাকে গিয়ে ঘটনা বললে বিষয়টি তিনি স্থানীয়দের অবগত করেন। পরে গত ৩ ফেব্রুয়ারী (শুক্রবার) বাদ জুমআ স্থানীয়রা এই বিষয়ে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করেন। এক পর্যায়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারী মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে ঘটনার দায় স্বীকার করে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে ওই শিক্ষক অব্যাহতি নেন। এতে স্থানীয়রা কিছুটা স্বস্তি পেলেও তাঁর শাস্তি দাবি করেন। এমতাবস্থায় কিছুদিন যেতে না যেতেই শিক্ষক আনছার উদ্দিনকে পুনরায় মাদ্রাসায় আনার জন্য কিছু প্রভাবশালী কুটকৌশল অবলম্বন করছেন। কথাবার্তায়, আচার আচরনে ওই প্রভাবশালীরা শিক্ষকের উপর আনীত অভিযোগ মেনে নিতে পারছেন না। উল্টো ওই ছাত্র এবং তাঁর অভিভাবকের উপর বিভিন্ন অযুহাতে দোষ দেয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
এই বিষয়ে ভিকটিম ওই ছাত্রের স্বজনরা জানান, ছেলে গোসল করতে বাড়ির পাশে অবস্থিত মাদ্রাসার পুকুরে যায়। মাদ্রাসা বন্ধ ছিলো। এই সুযোগে মাদ্রাসার আনছার মোল্লা ছেলেটিকে জোরপূর্বক বালৎকার করেন। বাড়িতে এসে তার বাবাকে সব খুলে বললে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করে। এর আগেও অনেকের সাথে এই মোল্লা খারাপ কাজ করে পার পেয়ে গেছে। স্থানীয়রা বিচার সালিশ করে সমাধান করেছিলেন।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য আব্দুল জহুর ডেন বলেন, ঘটনা সত্যি। ঘটনা জানার পর এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় মুরুব্বিদের সমন্বয়ে বৈঠকে বসি। আনছার উদ্দিন নিজে থেকেই অব্যাহতি নিয়েছেন। বর্তমানে মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মাতাব সাহেব মাদ্রাসা সুপারের দ্বায়িত্ব পালন করছেন।
মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. আনার উদ্দিন বলেন, ঘটনা শতভাগ সত্য। আমরা এলাকার মুরুব্বিদের কাছে তিনি দায় স্বীকার করে অব্যাহতি নিয়েছেন।
মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান মো. বাছিদুর রহমান আনার বলেন, ঘটনা সত্য। ছেলেটিকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে জিজ্ঞাসা করেছি। সে অনৈতিক এই ঘটনার বর্ননা দেয়। পরে আমরা স্থানীয় মুরুব্বীদের সামনে দায় স্বীকার করে তিনি অব্যাহতি নিয়েছেন।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য মোতাহের হোসেন শিশু বলেন, ঘটনা আমরা দেখি নি। আল্লাহ দেখছেন। একপক্ষ বলছেন ঘটনা সত্য, অন্য পক্ষ বলছেন এটা ষড়যন্ত্র। শোনলাম ওই ছাত্র নাকি মাদ্রাসা থেকে অন্যত্র যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র চাচ্ছিলো। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষক আনছার উদ্দিন তাকে দিচ্ছিলেন না। এজন্য তাকে ফাঁসানোর জন্য এমন তকমা উঠেছে। কমিটি থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, উদ্বুগ্ধ পরিস্থিতি শান্ত করতে আমরা তাকে অব্যাহতি নিতে বলি। তাই তিনি নিজেই অব্যাহতি নিয়েছেন।
এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার বলেন, পরাম্পরে শোনেছি মাদ্রাসা সুপার অব্যাহতি নিয়েছেন। তবে কি কারনে নিয়েছেন তা জানি না।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী বলেন, ঘটনার জন্য কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd