তাহিরপুরে খাস কালেকশনের নামে হরিলুট : রাজস্ব বঞ্চিত সরকার

প্রকাশিত: ৫:১৭ অপরাহ্ণ, জুন ১৯, ২০২৩

তাহিরপুরে খাস কালেকশনের নামে হরিলুট : রাজস্ব বঞ্চিত সরকার

Manual2 Ad Code

তাহিরপুর সংবাদদাতা : তাহিরপুরের অন্যতম চার নৌকাঘাট মামলা থাকায় ইজারা দেওয়া হয়নি। স্থানীয় প্রশাসন এসব ঘাটে খাস কালেকশনে নামলেও ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এ কারণে গত এক মাসে সরকার কমপক্ষে ২০ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারিয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৪২৯ বাংলা সনে তাহিরপুরের পাতারগাঁও নৌকাঘাট থেকে ৪১ হাজার ৮৬৮ টাকা, ঘাগড়া হতে লাউড়েরগড় নৌকাঘাট ৮৮ লাখ ৯ হাজার ৬৫০ টাকা, ডাম্পের বাজার নৌকাঘাট থেকে ১৮ লাখ, বাদাঘাট বাজার নৌকাঘাট থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার এবং শ্রীপুর বাজার নৌকাঘাট থেকে ৮০ লাখ ৩৮ হাজার ৫শ’ টাকা ইজারা আদায় করা হয়েছিল। গত চৈত্র মাসে এসব নৌকাঘাটের ইজারা মেয়াদ শেষ হলে পুনরায় ইজারার জন্য দরপত্র আহবান করা হয়। কিন্তু আগ্রহী দরদাতা না পাওয়ায় এবং মামলা জটিলতা থাকায় শেষ পর্যন্ত ইজারা দেয়া হয়নি। ফলে খাস কালেকশনের মাধ্যমে টোল আদায় চলছে।

Manual5 Ad Code

অভিযোগ রয়েছে, খাস কালেকশনের জন্য উন্মুক্ত নিলাম পদ্ধতি অনুসরণ করেনি প্রশাসন। কথা ওঠেছে, প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজসে খাস কালেকশনের নামে অতিরিক্ত টোল আদায় হচ্ছে এসব ঘাট থেকে। আদায়কৃত টোল সরকারি কোষাগারে নামমাত্র জমা করে এর সিংহভাগই চলে যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের পকেটে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে সরকার।

Manual7 Ad Code

ঘাগড়া-লাউড়েরগড় নৌকা ঘাট দিয়ে প্রতিদিন সহতাধিক মালবাহী নৌকা চলাচল করে। এখানে মালামাল বহনকারী নৌকা থেকে ন্যূনতম একশ’ থেকে সর্বোচ্চ ৭শ’ টাকা টোল আদায় করার কথা। কিন্তু প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে নৌকা বা বাল্কহেড প্রতি ৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। নৌকাঘাটে প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকার টোল আদায় করা হলেও সরকারি কোষাগারে গত এক মাসে জমা হয়েছে এক লাখ ৩৭ হাজার টাকা। একই চিত্র উপজেলার খাস কালেকশনকৃত অন্য নৌকাঘাটগুলোরও।

শ্রীপুর ডিহিবাটী তহশিল অফিস সূত্রে জানা যায়, শ্রীপুর বাজার নৌকাঘাট থেকে গত এক মাসে ৯২ হাজার টাকা এবং ডাম্পের বাজার নৌকাঘাট থেকে ৩৫ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। পাতারগাঁও ঘাটে কোন আদায়ই হয়নি।

Manual2 Ad Code

শ্রীপুর ডিহিবাটী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার রুহুল আমিন বললেন, আমাদের জনবল কম। এজন্য খাস কালেকশনে স্থানীয়দের সহযোগিতা নিতে হচ্ছে। তাহিরপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার রাজর্ষি রায় বললেন, অফিসে তিনজনের পদ থাকলেও একা কাজ করছি। ইউএনও স্যারকে জানিয়েই কালেকশন আদায়ে স্থানীয় কিছু লোকজনের সহায়তা নিয়েছি।

জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি তাহিরপুরের বাসিন্দা সেলিম আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রভাব খাটিয়ে নিজের অনুসারীদের দিয়ে এসব নৌকাঘাটে খাস কালেকশনের নামে অতিরিক্ত টোল আদায় করাচ্ছেন। এতে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে।
উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, স্থানীয় প্রশাসন উন্মুক্ত নিলাম না দিয়ে রাজনৈতিক চাপের মুখে নামমাত্র টাকায় ব্যক্তি বিশেষকে খাস কালেকশনের দায়িত্ব দিয়েছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।

এদিকে, অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা বলেন, প্রশাসণের লোকজন দিয়েই খাস কালেকশন করা হচ্ছে। এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। এ ধরণের কোন অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, কাগজপত্রে খাস কালেকশনে তহশিলদারের নাম থাকলেও শোনা যাচ্ছে এসব ঘাটগুলোতে অর্থ আদায় করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সুনামগঞ্জ জজ কোর্টের জিপি এডভোকেট আক্তারুজ্জামান সেলিম বলেন, মামলায় জড়িত ঘাট নিয়ম অনুযায়ী খাস কালেকশন হতে পারে। কিন্তু এখানে ব্যক্তি পর্যায়ের কেউ টোল আদায়ের সুযোগ নেই।

সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, খাস কালেকশনে আমার লোকজন জড়িত নয়। আমি সবসময় ঘাটে চাঁদাবাজি-ধান্ধাবাজির বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, নদীতে নৌ-পুলিশ আছে, তারা এসব চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কী করছে। তিনি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

Manual5 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

June 2023
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930

সর্বশেষ খবর

………………………..