দুই সহোদরের নেতৃত্বে চিকনাগুল এলাকায় চলছে টিলা কাটার মহোৎসব, প্রশাসন নিরব!

প্রকাশিত: ১১:০২ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২১

দুই সহোদরের নেতৃত্বে চিকনাগুল এলাকায় চলছে টিলা কাটার মহোৎসব, প্রশাসন নিরব!

Manual5 Ad Code

ক্রাইম ডেস্ক :: সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার ৬নং চিকনাগুল ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ৭নং ওয়ার্ডের করো মাটি গ্রামে রাতের আঁধারে এভাবেই টিলা কেটে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী টিলা খেকো বাহিনী। দিনে মানুষজন নেই, সুনসান। কিন্তু অন্ধকার নামলেই পাল্টে যায় পুরো দৃশ্যপট। বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে টিলার গায়ে, ওপরে, নিচে মানুষের পদচারণা। মানুষের হাঁকডাক, টিলার গায়ে অনবরত শাবল-বেলচার আঘাত, ট্রাকে করে টিলার মাটি নিয়ে যাওয়া—সব মিলিয়ে রাজ্যের ব্যস্ততা।

সিলেটের সম্প্রতি ভূমিকম্প দফায় দফায় হচ্ছে। আতঙ্কে রয়েছেন শহরতলীর বাসিন্ধারা। কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না মাঠি খেকোদের তান্ডব লীলা। জৈন্তাপুর উপজেলার ৬নং চিকনাগুল ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ৭নং ওয়ার্ডের করো মাটি গ্রামে কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে টিলা কাটা। দিন দিন বেপরোয়া হারে বাড়ছে টিলা কাটার মহোৎসব। মিডিয়ার তালিকায় যুক্ত হচ্ছে মাটি খেকোদের নিত্য নতুন নাম। ৬নং চিকনাগুল ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের করোমাটি গ্রামের সারোয়ার রহিম ও সোনাপরের বাড়ির লাল মাটির টিলা কাটছে একটি চক্র। এই চক্রের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

প্রথম প্রথম কিছুটা রাখডাক থাকলেও এখন পুরো এলাকায় বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু টিলা কাটা চক্রটি শক্তিশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদও জানায় না।

Manual4 Ad Code

জানা গেছে, চিকনাগুল ইউনিয়নের ঠাকুরের মাটি (করোমাটি) গ্রামের আহমদ আলীর দুই ছেলে খালেদ-মুহিব ও পশ্চিম ঠাকুরের মাটি গ্রামের মৃত কালাচান মেম্বারের ছেলে মতিউর রহমানের নেতৃত্বে করো মাটি গ্রামের লাল মাটির টিলা কাটার মহোৎসব চলছে। তারা বিগত কিছু দিন থেকে বেপরোয়া ভাবে কয়েকটি লাল মাটির টিলা কেটে মাটি নিচ্ছে। এরা প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত টিলা কাটছে। কিন্তু রহস্য জনক কারণে এই চক্রের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। যার ফলে প্রতি রাতে ১০-১৫টি ট্রাকে করে শাহপরাণ (রহঃ) থানাধীন শাহপরাণ (রহঃ) মাজারের ভিতর কয়েকটি প্লটেসহ বিভিন্ন স্থানে মাটি বিক্রি করছে এই চক্রটি।

Manual6 Ad Code

সিলেটের পরিবেশবিদরা এমনটাই দাবি করছেন টিলা গুলো কাটার কারণেই আজ বার বার ভূমিকম্প হচ্ছে। এতে টিলা কাটা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছেন তারা। এই টিলাগুলো হয়তো একদিন আমাদের সিলেটবাসীকে রক্ষা করবে।

এদিকে টিলা কাটার মহোৎসব চললেও অদৃশ্য কারণে স্থানীয় থানা পুলিশের নীরব ভূমিকায় জনসাধারণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

Manual5 Ad Code

এ বিষয়ে প্রতিবেদক টিলা খেকো চক্রের এক সদস্য খালেদের সাথে মাটির ক্রেতা সেজে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সে যা জানায় পাঠকের বুজার জন্য তা হুবুহু তুলে ধরা হলো, প্রতিবেদক জানতে চায় মাটি এক গাড়ি কতো? সে জবাবে বলে টিলার লাল মাটি প্রতি ট্রাক ২৩০০ টাকা। সে শাহপরান (রহঃ) থানাধীন বিভিন্ন প্লটে মাটি বিক্রির কথা স্বীকার করে জানায় আপনার কতো গাড়ি লাগবে? তার কথার জবাবে প্রতিবেদক জানায় ৭০ গাড়ি। সে বলে এ কোন ব্যাপার নয় দেওয়া যাবে আপনি চাইলে আজ রাত থেকেই আপনার প্লটে মাটি ভরাট শুরু করবো। প্রতিবেদক আবার প্রশ্ন করলো, আপনি জৈন্তাপুর থানা এলাকা থেকে যে শাহপরাণ (রহঃ) থানা এলাকায় টিলার লাল মাটি নিয়ে আসছেন এতে কি উভয় থানা আমার কোন সমস্যা করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে সে জানায়, আরে ভাই কি বলেন প্রশাসনের সাথে ভালো সম্পর্ক করেই এই ব্যবসায় করছি! তাদের সাথে সম্পর্ক না হলে কি শাহপরাণ (রহঃ) মাজারে ভিতরে এতো গুলো প্লটে মাটি দিতে পারতাম। আপনি এসব নিয়ে টেনশন করবেন না এসব আমার হাতের মুটোয় আছে। প্রতিবেদক সর্বশেষে থাকে জানালো ঠিক আছে আমি আপনাকে বুঝে জানাচ্ছি। তার সঙ্গে কথোপকথনের অভিও রেকর্ড প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

এর কিছু সময় পর আবার প্রতিবেদক উক্ত নাম্বার থেকে তার ব্যবহৃত নাম্বারে যোগাযোগ করে সাংবাদিক পরিচয়ে টিলার কাটা ও মাটির বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে সে সবকিছু অস্বীকার করে।

এখানেই শেষ নয় এর কিছুক্ষন পর শুরু হয় এক অবাক করা কান্ড! প্রতিবেদক কে ম্যানেজ করার জন্য টিলা খেকো খালেদের আপন বড় ভাই ওই এলাকার চিহ্নিত টিলা খেকো মুহিব অন্য এক সাংবাদিকের বরাদ্দ দিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে দেখা করে ম্যানেজ করার চেষ্টায় চালিয়েছেন। টিলা খেকো মুহিব কোন উপায়ে প্রতিবেদকে ম্যানেজ করতে না পেরে সর্বশেষে হুমকি দিয়ে বলেন, এসব ২০-৩০ টা নিউজ করে কি করবেন আমিও তা দেখে নিবো। এহেন হুমকিতে প্রতিবেদক মাটি খেকো মুহিবের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

Manual3 Ad Code

উল্লেখ্য, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করতে পারবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

তাই স্থানীয়, সচেতন মহল এই টিলা খেকোদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..