সিলেট ৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১১ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:০৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : রিফাত হত্যার ঘটনায় প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামিদের মধ্যে কার কী ভূমিকা ছিল তা বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
১: রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী
রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্ত বয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে রিফাত ফরাজী ১ নম্বর আসামি। বরগুনা পৌরসভার ধানসিঁড়ি সড়ক এলাকার দুলাল ফরাজীর বড় ছেলে রিফাত ফরাজী। বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়ন বন্ডের ডান হাত হিসেবে কাজ করতেন রিফাত ফরাজী। বন্ড গ্রুপ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসাই ছিল তাদের মূল পেশা। রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাসহ বাস্তবায়নে সরাসরি অংশ নেয় রিফাত ফরাজী।
রিফাতের বিরুদ্ধে একাধিক ছিনতাই ও ছাত্রদের মেসে ঢুকে মুঠোফোন কেড়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় তরিকুল ইসলাম নামে এক প্রতিবেশীকে কুপিয়ে মারাত্মক যখম করেন রিফাত ফরাজী।
২: আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন
রাব্বি আকন কিশোর গ্যাং বন্ড গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। আসামি নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বন্ধুত্বের কারণেই তিনি মিন্নিকে আগে থেকেই চিনতেন। মিন্নি এবং নয়ন বন্ডের বিবাহের বিষয়েও তিনি জানতেন। হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি আগেই রিফাত ফরাজীর কাছ থেকে মোবাইলে জানতে পারেন। হত্যার দিন কলেজের মধ্যে সাইন্স ব্লিডিংয়ের সামনে আসামি রিফাত হাওলাদার, রিফাত ফরাজী, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ও রাব্বি আকন জড়ো হয়ে পুনরায় হত্যার পরিকল্পনা করেন। রাব্বি আকন বরগুনা সদর উপজেলার কেওড়াবুনিয়া গ্রামের কালাম আকনের ছেলে।
৩: মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত
মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত কিশোর গ্যাং বন্ড গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। রিফাত শরীফ হত্যার দিন কলেজের মধ্যে হত্যা পরিকল্পনার সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনার অংশ অনুযায়ী রিফাত শরীফকে কলেজ গেট থেকে কলার ধরে ক্যালিক্স একাডেমির দিকে নিয়ে যান। এরপর সেখানে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও রিশাণ ফরাজী তাকে এলোপাথারি কোপ ও মারধর করলে সিফাতসহ অন্য আসামিরা তাদের চারদিক দিয়ে ঘিরে রাখেন। যেন কেউ রিফাত শরীফকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে না পারেন। সিফাত বরগুনা পৌর শহরের কলেজিয়েট স্কুল রোডের মো. দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।
৪: মো. রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়
টিকটক হৃদয় বন্ড ০০৭ গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। এছাড়াও বন্ড বাহিনীর প্রধান নয়ন বন্ডের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হলেন টিকটক হৃদয়। বরগুনা সরকারি কলেজে পরিকল্পনার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যার দিন সকালে তিনি কলেজ গেটে অবস্থান নেন। আসামিরা যখন রিফাত শরীফকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল তখন তিনি সামনে থেকে সাধারণ মানুষজন সরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব পালন করেন। যখন আসামিরা অস্ত্র আনতে দৌড় দেন যায় তখন তিনি লাঠি নিয়ে আসেন। মো. রেজোয়ান আলী খান হৃদয় বরগুনা পৌর শহরের কলেজ রোড এলাকার রফিক আলী খানের ছেলে।
৫: মো. হাসান
রিফাত হত্যার ঘটনায় পাহাড়াদারের ভূমিকা পালন করেন মো. হাসান। রিফাত ফরাজী তাকে হত্যার পরিকল্পনা বুঝিয়ে দেয়ার পর হত্যার দিন সকালেই তিনি বরগুনা সরকারি কলেজের গেটে অবস্থান নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী রিফাত শরীফ যেন পালাতে না পারেন সে বিষয়ে সে নজর রাখছিলেন। হাসান বরগুনা পৌর শহরের উপকন্ঠে লাকুরতলা গ্রামের আয়নাল হকের ছেলে।
৬: মো. মুসা ওরফে মুসা বন্ড
মুসা বন্ড ০০৭ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। রিফাত ফরাজী ও নয়ন বন্ডের অন্যতম প্রধান সহচর। মুসা এলাকায় মাদক বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। রিফাত হত্যা মামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী এই মুসা। নয়নবন্ডের থেকে মুসা রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে অবগত হন। পরিকল্পনা অনুযায়ী রিফাত শরীফ যেন পূর্ব দিকে পালাতে না পারেন তার জন্য অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। মুসার নামে বরগুনা সদর থানায় একটি মাদক ও একটি অস্ত্র আইনের মামলা রয়েছে। মুসা বরগুনা পৌর শহরের ধানসিড়ি রোড এলাকার মো. কালাম খানের ছেলে। প্রাপ্ত বয়স্ক আসামিদের মধ্যে একমাত্র মুসাই এখনো পলাতক রয়েছেন।
৭: আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি
পুলিশের দায়ের করা চার্জশিট অনুযায়ী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফের হত্যার পরিকল্পনাকারী। প্রথমে এই মামলায় তাকে সাক্ষী রাখা হলেও পরে তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাকে আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়। মিন্নির পরিকল্পনায় আসামি নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। রিফাত শরীফ ও নয়ন বন্ডের সঙ্গে দ্বৈত প্রেমের কারণে মনোমালিন্য হওয়ায় এই হত্যার পরিকল্পনা করেন মিন্নি এমনটাই উল্লেখ করা হয়। ঘটনার সময় হত্যার অভিযোগ থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্য বাঁচানোর নাটক করেন বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়। মিন্নি নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী।
৮: রাফিউল ইসলাম রাব্বি
রিফাত হত্যা মামলায় প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেয়া নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাফিউল ইসলাম রাব্বি। হত্যাকাণ্ডের সময় সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ না নিলেও বিষয়টি জেনেও আসামি মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাতকে আশ্রয় ও পালাতে সহযোগীতা করেন রাব্বি। রাফিউল ইসলাম রাব্বি বরগুনা সদর উপজেলার ৯ নম্বর ইউপির উরবুনিয়া গ্রামের মো. আ. রহমানের ছেলে।
৯: মো. সাগর
মো. সাগর আসামি রিফাত ফরাজী ও নয়ন বন্ডের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এছাড়া বন্ড ০০৭ মেসেঞ্জার গ্রুপেরও একজন সক্রিয় সদস্য। পুলিশ চার্জশিটে তাকে হত্যায় প্ররোচনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেছে। কারণ হত্যার দিন সবাইকে কলেজে দেখতে চাই রিফাত ফরাজীর এমন পোস্টের পর তার সেখানে সাগর বিজয়সূচক চিহ্ন দিয়েছিলো। এছাড়াও হত্যার পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন। সাগর বরগুনা সদর উপজেলার ৯ নম্বর ইউপির নলী মাইঠা গ্রামের মো. আবদুল লতিফ খানের ছেলে। সাগরের নামে বরগুনা ও বরিশালে দুটি মামলা রয়েছে।
১০: কামরুল ইসলাম সায়মুন
কামরুল ইসলাম সায়মুন আসামি নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও রাব্বি আকনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়ে রিফাত শরীফকে হত্যার বিষয়টি জেনেও তার নিজের মোটরসাইকেল দিয়ে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগ তোলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। সায়মুন বরগুনা পৌর শহরের ডিশ ব্যবসায়ী কাওসার আহমেদ লিটনের ছেলে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd