তিনি গাজীপুরে যোগ দিয়েই পাল্টিয়ে দিতে শুরু করেছেন এখানকার সমাজ ব্যবস্থা। বিরল অসাধ্যটিকেই সত্যিতে পরিনত রুপরেখা করতে যাচ্ছেন গাজীপুরের নবাগত পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার চৌধুরী। এর আগে তার কর্মস্থল ছিলো চাঁদপুরে। সেখানকার সমাজ ব্যবস্থাপনা ও অস্থির জনপদে শান্তির সু-বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে গাজীপুরে এসেছেন। দেশের পুলিশ সম্পর্কে মানুষের অন্তরে জমে থাকা বিরূপ মন্তব্য আর কালো দাগ এবং ভয়কে জয় করে নগর থেকে দুর্গমঞ্চল পর্যন্তও ছড়িয়ে পড়েছিলো তার প্রশংসা।
ওই অঞ্চলে আজও কান পাতলে মানুষের কন্ঠে শোনা যায় এসপি শামসুন্নাহারের প্রশংসার বাণী। দায়িত্বপালন কালে তিনি যেমন পুলিশের আইনী সেবা মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছানোর মাধ্যমে চাঁদপুরে ইতিবাচক আইনি সু-শাসন প্রতিষ্ঠার ইতিহাস গড়েছিলেন তেমনি তার বদলিজনিত বিদায় বেলায়ও চাঁদপুরের অবহেলিত সর্বস্তরের জনগনও তাকে চোখের অশ্রু আর হৃদয়ের উজাড় করা বিরল ভালোবাসা দিয়ে সম্মানটুকু জানাতেও কার্পন্যবোধ করেনি।
গাজীপুরে যোগ দেয়ার এক মাস এখনো পুরোপুরি হয়নি অথচ সাধারণ মানুষের মুখে শুধু প্রশংসার বার্তা শোনা যাচ্ছে এবং বলে বেড়াচ্ছেন এসপি শামসুন্নাহার আবাসিক হোটেল বন্ধ করে দিয়েছেন। সমানতালে চলছে তার পুলিশি সুফল কর্মকান্ড। গাজীপুর বাসির মতে এসপি শামসুন্নাহার দায়িত্ব গ্রহণের পর গাজীপুরের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি-খুশি, আস্তা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে এসেছে।
আমজনতার মনে অনেক চাপা রাখা কথাটি সহজভাবে বলতে গেলে সত্যিকার অর্থে গাজীপুরে পুলিশের প্রতি গতকয়েক বছরে আস্থা ও বিশ্বাস সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এখানকার সাধারণ মানুষের সাথে পুলিশ বাহিনী বিশ্বাসঘাতকতা ও বেইমানি করেছে। মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পুলিশি নির্যাতন, ক্রসফায়ারের ভয়দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে পুলিশের উঠবস, জোড়পূর্বক ভাবে জমিদখল করা, পুলিশের নির্যাতনে অতিষ্ঠিত এ অঞ্চলের মানুষ, আবাসিক হোটেলগুলোতে রীতিমতো দেহব্যবসার পাশাপাশি মাদক ব্যবসা নানা অপরাধের সাথে খোদ পুলিশ জড়িত ছিলো। বেশ কয়েক বছরে সাংবাদিকদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হতো এবং অফিসে পুলিশ পাঠিয়ে ডেকে এনে নানা ভাবে হয়রানী করা হতো। পুলিশ সুপার হিসেবে শামসুন্নাহার দায়িত্ব গ্রহণের পর গাজীপুরের এমন চিত্র পুরোটাই বদলে যেতে শুরু করেছে।
তিনি গাজীপুর সকল আবাসিক হোটেল দেহব্যবসা বন্ধ করে গাজীপুর বাসির হারানো সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছেন। ভেঙে দিয়েছেন দেহব্যবসার দালাল সিন্ডিকেট। অতিঅল্প সময়ে এমন মহতি কাজ করে গাজীপুর বাসির হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন নবাগত পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার চৌধুরী। সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কালে পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন, কোনো পুলিশের সদস্য অন্যায় করলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না। তার এমন মানবতার ভূমিকা রাখায় মুগ্ধ গাজীপুরের সাধারণ মানুষ।
এসপি শামসুন্নাহারের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হলো, জন্মস্থান, ফরিদপুর সদর উপজেলাধীন চর মাধবিয়া ইউনিয়নের ইসমাইল মুন্সীর ডাঙ্গী। বাবা শামসুল হক ও মা আমেনা বেগম। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় শামসুন্নাহার। ২০০১ সালে বিসিএস পাশ করে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১১-২০১৪ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের শাখা অফিস ইতালীতে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯-২০১০ পর্যন্ত পূর্ব তিমুর জাতিসংঘ মিশনের মাধ্যমে পূর্ব তিমুর জাতীয় পুলিশের মানব সম্পদ উন্নয়ন কর্মকান্ডে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৭ সালে এমবিএ ডিগ্রী লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০০৫ সালে এমফীল, ১৯৯৮ সালে এমএসএস এবং ১৯৯৬ সালে বিএসএস ডিগ্রী লাভ করেন।
জাতিসংঘে দীর্ঘদিন উচ্চ পদে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি স্বরূপ ৭ বার জাতিসংঘ শান্তি পদক লাভ করেন। বাংলাদেশ পুলিশে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) প্রাপ্ত হন। এ ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি স্বরূপ ০৩ বার আইজি ব্যাজ পান।
২০১৫ সালের জুন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন শামসুন্নাহার। সৎ ও সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা বলেই তার সুনাম রয়েছে পুলিশ বাহিনীতে। চাঁদপুরে ইতিমধ্যে মাদক, বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতন রোধে গুরুত্ব দিয়ে ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
পুলিশ সপ্তাহ-২০১৬ প্যারেডে প্রথম নারী হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে ইতিহাস গড়েন এসপি শামসুন্নাহার। মহানগর পুলিশ, রেঞ্জ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও র্যাবসহ পুলিশের ১৩টি দলের সহস্রাধিক সদস্যের প্যারেডে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি দেশজুড়ে প্রশংসিত হন। ২০১৭ সালেও পুলিশ সপ্তাহ প্যারেডে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।