ভোলাগঞ্জের ‘জিরো লাইন’ থেকে রাতের আঁধারে পাথর লোপাটের অভিযোগ

প্রকাশিত: ৭:৩৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮

ভোলাগঞ্জের ‘জিরো লাইন’ থেকে রাতের আঁধারে পাথর লোপাটের অভিযোগ

ক্রাইম প্রতিবেদক :: সিলেটের ভোলাগঞ্জের ‘জিরো লাইন’ থেকে রাতের আঁধারে পাথর লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর যোগসাজসে পাথর খেকো চক্র জিরো লাইনে স্তূপীকৃত পাথর লুটপাটের জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। প্রতিদিন এ চক্র শতাধিক বারকি নৌকা নোঙর করে পাথর লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার বাণিজ্য হচ্ছে। এ ঘটনার জন্য অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং পুলিশের প্রতি। গত শুক্রবার ১৪৫টি নৌকা জিরো লাইন থেকে পাথর লোড (বোঝাই) করে নিয়ে গেছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় একটি সূত্র। এছাড়া, বৃহস্পতিবার শতাধিক নৌকা এবং গত বুধবার রাতে ১৭০ টি নৌকা জিরো লাইন থেকে পাথর লোড করে নিয়ে গেছে বলে ওই সূত্র নিশ্চিত করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বারকি শ্রমিক এ প্রতিবেদককে জানায়, রাতের আঁধারে প্রতিটি নৌকার জিরো লাইনের পাস হিসেবে পুলিশের জন্য ১ হাজার ও বিজিবির সদস্যদের জন্য ৩ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। এভাবে প্রতিদিন শতাধিক নৌকা থেকে প্রায় ৪-৫ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। স্থানীয় দয়ারবাজার এলাকায় হারুন নামের এক শ্রমিক জানান, জিরো লাইনে প্রতিদিন ১৫/২০টি নৌকা পাস হয়। সপ্তাহে ২/৩ দিন দেড় শতাধিক নৌকাও পাস হয়। নৌকা পাস বাবদ বিজিবি ও পুলিশের জন্য অর্থ আদায় করা হয় বলে জানান এ শ্রমিক। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যার আগেই শতাধিক নৌকা ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বর এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেয়। বিজিবির পক্ষ থেকে ‘গ্রীণ সিগন্যাল’ পেলেই তারা জিরো লাইনের দিকে ছুটে। কোনো কোনো দিন সন্ধ্যার পর থেকেই নৌকা জিরো লাইনে যেতে শুরু করে। যোগাযোগ করা হলে বিজিবি’র ল্যান্স নায়েক হাবিব জিরো লাইন থেকে পাথর চুরির বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দিলে তারা পাথর নেয়, না দিলে নেই।’ বর্তমানে পাথর দিচ্ছেন কি না জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে কোম্পানী কমান্ডারের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। যোগাযোগ করা হলে কোম্পানী কমান্ডার মনোয়ার হোসেন পাথর বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ থানার পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ থানার কনস্টেবল বাশারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিষয়টি তারা জানা নেই বলে জানান তিনি। ভারত থেকে নেমে আসা ধলাই নদীর জিরো পয়েন্ট এলাকা স্থানীয় ভাবে ‘সাদা পাথর’ এলাকা হিসেবে পরিচিত। বর্ষা মৌসুমে ঢলের সঙ্গে সীমান্তের ওপার ভারত থেকে নেমে আসে সফেদ পাথর। স্বচ্ছ জলরাশিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছোট-বড় পাথর জমে তৈরি হয়েছে পাথরের স্তূপ। সেই পাথর স্তূপের পাথর লুটপাটের চেষ্টা করছে একটি চক্র। সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ জয়নাল আবেদীন জানান, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের সাথে আঁতাত করে পাথরখেকোরা জিরো লাইনের পাথর নিয়ে যাচ্ছে। এতে পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকাটি তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। তিনি জিরো লাইনের পাথর রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। স্থানীয় বাসিন্দা আখতারুজ্জামান নোমান জানান, বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন জিরো পয়েন্টের পাথর দেখতে আসেন। তবে ভোলাগঞ্জের যাতায়াত সমস্যা দূর হলে এলাকাটিতে বেড়ানো আরও উপভোগ্য হবে বলে মনে করেন তিনি। সিলেটস্থ কোম্পানীগঞ্জ সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হক বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ‘সাদা পাথর’ এলাকাসহ ভোলাগঞ্জ হতে পারে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। এলাকাটিকে পর্যটনের আওতায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হলে দেশি ও বিদেশী প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটবে। তখন পাথর খেকোদের দৌরাত্মও কমবে। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ রাজস্বও আয় করতে পারবে সরকার। ইসলামপুর পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন জানান, আগে সিলেট-ভোলাগঞ্জ রাস্তা নিয়ে মানুষের অনুযোগ ছিল। এখন রাস্তা ভাল হওয়ায় ভোলাগঞ্জে প্রচুর পর্যটক আসছে। বিশেষ করে এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই ভোলাগঞ্জে পর্যটকরা ভিড় জমান। জিরো লাইনের সৌন্দর্য রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব। এলাকাটিকে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আবুল লাইছ বলেন, নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত ভোলাগঞ্জের জিরো পয়েন্ট, ধলাই নদীর উৎসমুখ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ ও পাথর উত্তোলন না করার ব্যাপারে ‘সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি’ জারি করা হয়েছে। তারপরও পাথরখেকোরা চুরি করে পাথর নিয়ে যাচ্ছে। তিনি পাথরখেকোদের হাত থেকে নান্দনিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এ এলাকাকে রক্ষায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2018
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

সর্বশেষ খবর

………………………..