সিলেট সাবরেজিস্ট্রি অফিসে টাকা দিলে রের্কড মিলে

প্রকাশিত: ৪:৫৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০১৮

সিলেট সাবরেজিস্ট্রি অফিসে টাকা দিলে রের্কড মিলে

Manual7 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার :: সিলেট সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের রের্কড রুমে প্রতিদিনই হয় কাঁচা টাকার বাণিজ্য। টাকা পেলে ঐ অফিসে উমেদারও হয়ে যায় রের্কডের মালিক। কিন্ত সরকারী বিধি অনুযায়ী রের্কড রুমের রের্কড কিপার বা সহকারী রের্কড কিপার ছাড়া কেউই রের্কড বালাম যাচাই করতে পারবেন না। তবে যদি রের্কড কিপার ও সহকারী রের্কড কিপার অনুমতি প্রদান করেন। তাহলে অফিসের সরকারীকাজে কর্মরত এমএলএসএস (পিয়ন) রের্কড বা বালাম বহি দেখতে পারবেন। কিন্তু এই বিধি বিধানের কোন তোয়াক্কা না করে প্রতিদিনই উমেদার হুসেন, জুয়েল, নবজিৎ, নাহিদ, রেজাউল, ওয়াহিদ, সুমন,সুকেশ দত্ত, বাবুল আহমদকে দিয়ে দলিলের বালাম বহি ও রের্কড রুমের গুরুত্বপূর্ণ কাগজ নাড়াছাড়া বা বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তর ও জায়গার মালিকের যাচাই করান সহকারী রের্কড কিপার প্রণয় কান্তি ঘোষ। যার ফলে সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে একের পর এক ঘটছে বালাম বহি পুড়ানো, বালাম বহির পাতা ছেড়া ও বালাম বহি ঘায়েব হওয়ার মত ঘটনা।

সূত্র জানায়, সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে বালাম বহি রক্ষণাবেক্ষণ করার দ্বায়িত্বে রয়েছেন রের্কড কিপার ও সহকারী রের্কড কিপার। তাদের সাথে সরকারীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত রয়েছেন কয়েকজন এমএলএসএস (পিয়ন)। তাদের কাজ হলো সাধারণ জণগণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বালাম বহি দেখে দলিল বা জায়গার মালিকানা যাচাই করা। কিন্তু এসকল রের্কড বা বালাম বহি দেখতে গেলে সহকারী রের্কড কিপার প্রণয় কান্তি ঘোষকে দিতে হয় ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। যদি এই টাকা পরিশোধিত হয়। তাহলেই রের্কড বা বালাম বহি যাচাই করা হয়। অনথ্যায় বালাম বহি পাওয়া যাচ্ছে না বলে দিনের পর দিন। মাসের পর মাস পার করা হয়। অথচ ঐ বালাম বহি বা গুরুত্বপূর্ণ রের্কডগুলো সহকারী রের্কড কিপার নির্ধারিত স্থানে না রেখে তিনি তা রাখেন তার বসার টেবিলের পাশের বাম দিকে একটি কাটের তৈরি তাড়িয়াতে। আবার কিছু বালাম বহি তিনি তার ডান পাশের ফ্লোরেও রেখে দেন। তাছাড়া যে সকল বালাম বহি বা রের্কড দেখার জন্য নির্ধারিত ফি পরিশোধ করা হয়। সেগুলো উমেদারদের দিয়ে যাচাই করানো হয়। অথচ সাব রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, উমেদারদের কাজ হলো রের্কড রুমের ময়লা আর্বজনা পরিস্কার করা ও বালাম বহি গুলো নির্ধারিত স্থানে সঠিকভাবে রাখা আছে কিনা তা দেখাশুনা করা। আর এমএলএসএস (পিয়ন) দ্বারা রের্কড বহি যাচাই বা বাধাই করা সহ যাবতীয় কাজ করানো।

Manual8 Ad Code

একটি বিশ^স্থ সূত্র জানায়, সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসের রের্কড রুমে বালাম বহি পুড়ানো, দলিলের পাতা বদল, জমির রের্কড বহির পাতা ছেড়া সব কিছুই করানো হয় টাকার বিনিময়ে। আর এই কাজগুলো করান রের্কড রুমের দ্বায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।

জানা যায়, গত কয়েক দিন থেকে দেড় কোটি টাকা মূল্যের ১২৫ ডেসিমেল জায়গার একটি প্রতিবেদন নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া এর পূর্বে সিলেট সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিলের বালামবহি পোড়ানো মামলায় প্রণয় কান্তি ঘোষ সিলেট সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের সহকারী রেকর্ডকিপার। গত বছরের ৯মে বিকেলে গ্রেফতার হন। এ নিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সিলেট সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দুই কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়েছিলেন। ঐ বছরের ২৫ এপ্রিল দিবাগত রাতে সিলেট সদর সাবরেজিষ্ট্রি অফিস সংলগ্ন নজির ভেন্ডারে অগ্নিকান্ড ঘটে। এতে সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের দলিলের একটি বালামবহিও ভষ্মীভুত হয়। এঘটনায় সিলেট সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের সাব-রেজিষ্ট্রার মো. আবু বকর সিদ্দীক বাদী হয়ে ২৬ এপ্রিল সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার একটি মামলা (নং-৩০(৪)১৭) করেন।

এদিকে, চলতি বছরের গত ১৬ অক্টোবর সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে একটি দলিল জালিয়াতির ঘটনায় দুই উমেদার ও দুই নকল নবিশকে সাময়িক বরখাস্থ করা হয়। একই সাথে তাদের সবধরনের অফিসিয়েল কাজ থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা দেন সদর সাব রেজিস্ট্রার। নগরীর মুমিন খলা মৌজার প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের ৩০ শতক ভূমির জাল দলিল সম্পাদন করা হয়। গটনার সাথে জড়িত বলে নকল নবিশ নুরুজ্জামানেরও নাম চলে আসে তখন। ঘটনাটি প্রকাশের পর একে অন্যের উপর দোষ চাপালেও মাহমুদ আত্মগোপনে চলে যায়। বিষয়টি নিয়ে রহস্য আরো ঘনিভুত হয়।

Manual7 Ad Code

এদিকে, কোন দলিলটির জন্য এতো লুকোচুরি চলছে- এই সিন্ডিকেট খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে মূল ঘটনা। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি উদঘাটনের উদ্যোগ নেন দলিল লেখক সমিতি, নকল নবিশ এসোসিয়েশন, রেকর্ডকিপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

Manual3 Ad Code

সে সময় দলিল লেখক সমিতি সিলেটের সভাপতি মাহমুদ আলী জানান, বলিয়ম বের করে এনে দেখা যায়, যে দলিলটির নকলের জন্য আবেদন করা হয়, সেটি ২০০৩ সালে সম্পাদিত । দলিল নং-১০৬৬৬। বলিয়ম নং ১২০ ও পৃষ্ঠা ২৯০। সিলেট নগরীর মুমিনখলা মৌজার ৩০ শতক জায়গায় দলিলটি সম্পাদিত হয়। তবে বলিয়ম বের করে দেখা যায়, বলিয়মে শেষের দিকে আরো পৃষ্ঠা থাকলেও ২৮৯ পৃষ্ঠায় বলিয়ম বন্ধ করে দেন সাব রেজিস্ট্রার। কিন্তু যে দলিলটির নকলের জন্য আবেদন করা হয়েছে, সেটি ২৯০ পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ। বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়, কোন নকলনবিশ সুকৌশলে সাব রেজিস্ট্রারের লেখা ঘঁষামাজা করে তুলে পৃষ্ঠা বাড়িয়ে দিয়েছে। আবার এই বলিয়ম যিনি লিপিবদ্ধ করেছিলেন, ঠিক হাতের লেখার অনুরূপ ঐ দলিলটি লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়। যেখানে কোন অবস্থাতেই একই নাম্বারে দুটি দলিল হয়না, সেখানে একই বছরে (১০৬৬৬) এই নাম্বারে অন্য একটি দলিল সম্পাদিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ঐ চক্রটি পরিকল্পিতভাবে বলিয়মে লিপিবদ্ধ করা থেকে নিয়ে নকল উত্তোলন পর্যন্ত সকল কার্য সুনিপুনভাবে করেছে। ঘটনাক্রমে সিনিয়র নকল নবিশ মুহিবুর রহমান জিলুর নামে আবেদন করে নকল তুলতে গিয়ে মূলত ধরা পড়ে দলিল জালিয়াতির এই বিষয়টি।

Manual4 Ad Code

সাবরেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড কিপার কামরান চৌধুরী জানান, উমেদারদের কাজ হলো রের্কড ওঠানো নামানো। তবে পিয়নের কাজও করতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উমেদাররা সরকারী চাকুরীজীবী নয়। তবে আইজিআরের নির্দেশে তার কাজ করছে। তাছাড়া এমএলএসএসরা রের্কড বহি দিলে উমেদাররা তা দেখে স্টিমিট দিতে পারে বা ইনডেস্ক দেখতে পারে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..