সিলেট ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:০২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৮
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর বি-ব্লকের বনরূপা ভবন। ভবনের নীচ থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত সিঁড়ির মধ্যে নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন। এ ভবনের চতুর্থ তলায় বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর অফিস। এ অফিসে রয়েছে প্রি-পেইড মিটারে রিচার্জ নামে এক সোনার হরিণ। এটা সিলেটের একমাত্র বিদ্যুৎ ক্রয় কেন্দ্র বা ভেন্ডিং স্টেশন। এখানে রাখা সোনার হরিণ সময়মত হাতে না পোঁছালে ঘরের বাতি নিভে যায়। পাখাও ঘুরে না।
নগরীর মেন্দিবাগের সফি উদ্দিন সুমন। তার বাসার প্রি-পেইড মিটারে লোড শেষ পর্যায়ে। রিচার্জ করার জন্য গত শনিবার সকাল ১০টায় উপশহরের ভেন্ডিং স্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তার সামনে আরো শ’খানেক লোক হবে। চতুর্থ তলায় অফিস। তিনি লাইনে দ্বিতীয় তলার অন্ধকার গিঞ্জি সিঁড়িতে দাঁিড়য়ে আছেন। ঘামে শরীর জবুতবু। সুমনের ভাষায়-যে পদ্ধতিতে প্রি-পেইড মিটারে রিচার্জ করা হচ্ছে; তা গ্রাহককে এক ধরনের পানিশমেন্ট দেয়া। প্রি-পেইড মিটার আসার পর থেকে প্রতি মাসে আমি ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা এই পানিশমেন্ট পাচ্ছি।
রিচার্জ করতে আসা খরাদি পাড়ার মনিকা রানী দাশ জানান, ‘বিদ্যুৎ বিল প্রি-পেইড হচ্ছে জেনে প্রথমে খুশি হয়েছিলাম। প্রি-পেইড মিটার হওয়ার পর থেকে শুধু লাইনে দাঁড়ানোর ভোগান্তি নয়, নানা প্রকার ভোগান্তিতে পড়েছি। তিনি বলেন-আমার মনে হয় বিদ্যুৎ অফিসের অসৎ কর্মচারীদের দ্বিগুণ উপার্জনের পথ খুলে দিয়েছে এই প্রি-পেইড মিটার পদ্ধতি।’
চুরি রোধ ও সিস্টেম লস কমানোসহ বিদ্যুৎ খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গ্রাহক পর্যায়ে প্রি-পেইড মিটার চালু করে সরকার। ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যমান ও নতুন মিলিয়ে ২ কোটি ২০ লাখ গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পিডিবির বিতরণ এলাকাগুলোর মধ্যে সিলেট ছাড়াও চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ শহরে প্রি-পেইড মিটার চালু রয়েছে। এই পদ্ধতিতে ভূতুড়ে বিল রোধ, সহজে টাকা রিচার্জ করার সুবিধা ও জামানতবিহীন সংযোগের খবর শুনে খুশি হয়েছিলেন গ্রাহকরা।
বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী পারভেজ আহমদ জানান, এ পর্যন্ত সিলেটে ৫৯ হাজার প্রি-পেইড মিটার চালু করা হয়েছে। রিচার্জের জন্য একটি বিদ্যুৎ ক্রয় কেন্দ্র বা ভেন্ডিং স্টেশন এবং ৯টি ব্যাংক রয়েছে ।
গত শনিবার উপশহরের বিদ্যুৎ ক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়- গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন। চতুর্থ তলার অফিসে দুটি কক্ষে এসি রুমে বসে ৫টি বুথে সেবা দেয়া হচ্ছে। গ্রাহকদের অভিযোগ- প্রতি মাসে ২৫ টাকা চার্জ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। সমান টাকায় রিচার্জ করে গতমাস থেকে এ মাসে ১০ থেকে ২০ ইউনিট কম পাচ্ছেন তারা। অসাধু কর্মচারীরা স্টেশনের কম্পিউটার থেকে ইচ্ছে করে মিটার লক করে দেয়। এরপর সচল করাতে গেলে তাদের ৮শ’ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। এছাড়া, প্রি-পেইড মিটারে বিল দিতে দিন মাটি হচ্ছে তাদের। লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বিল দিতে গিয়ে দিনের আর কোন কাজ করা যাচ্ছে না। সার্ভিস চার্জ, ডিমান্ড চার্জ, মিটার ভাড়া, ভ্যাটসহ কত কিছু দিতে হচ্ছে। পোস্ট পেইড থেকে প্রি-পেইড পদ্ধতিতে দ্বিগুণ বিল দিতে হচ্ছে।
শিবগঞ্জের বাসিন্দা আহমদ রাফি নামে এক গ্রাহক জানান, ব্যাংকগুলো শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকে। তাছাড়া তারা সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত টাকা নেয়। অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘন্টা দাঁিড়য়ে থাকার পর জানানো হয়; রিচার্জ করে গ্রাহককে দেওয়ার ‘রিসিট’ নেই। এটা বলে টাকা নেওয়া বন্ধ করে দেয় তারা। তিনি বলেন, এসব ব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রি-পেইড মিটারের বিল নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। তাদের সার্ভিস দেখলে মনে হয়; এ কাজ জোরপূর্বক কেউ তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। তাদের সাথে কোনো কথাও বলা যায় না। তিনি বলেন, শুধু রিচার্জ করে করার হয়রানি নয়, প্রথমবার রিচার্জ করার পর কোরবানীর ঈদে গ্রামের বাড়ি থেকে এসে তিনি দ্বিতীয়বার রিচার্জ বাসায় গিয়ে দেখেন বিদ্যুৎ নাই। পরে অনেক চেষ্টার পর তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। তার বাসায় যে দুটি ছেলে পাঠানো হয়, তারা মিটার দেখে বলে ‘লক’ হয়ে গেছে। ‘লক’ খুলতে তাদের ১ হাজার টাকা দেওয়া লাগবে। তা না হলে তারা চলে যাবে। পরে নিরূপায় হয়ে তাদেরকে ৬শ টাকা দিয়ে ‘লক’ খুলাই।
যতরপুরের বাসিন্দা শামীম আহমদ বলেন, জুলাই মাসে তিনি ৫শ’ টাকা রিচার্জ করে ৮৭. ৪ ইউনিট বিদ্যুৎ পেয়েছিলেন। এ মাসে সমান টাকা রিচার্জ করে তাকে ৫১. ৫ ইউনিট দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগে যে মিটারে বিদ্যুৎ বিল আসতো প্রতিমাসে ৭ থেকে ৮শ’ টাকা এখন প্রি-পেইড করার পর প্রতিমাসে বিল আসে ১৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকা।
বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী পারভেজ আহমদ বলেন, গ্রাহক ভোগান্তি দূর করার জন্য সরকার গ্রামীণ ফোন কোম্পানীর সাথে একটা চুক্তিতে গেছে। আশা করি এ মাসের শেষের দিকে এ কার্যক্রম শুরু হবে। তখন থেকে গ্রাহকরা মোবাইলের মাধ্যমে রিচার্জ করতে পারবেন। এছাড়া তিনি বলেন,, মিটার খুলে নাড়াচাড়া করার কারণে ‘লক’ হয়, এর জন্য একটা জরিমানা করা হয়। কিন্তু ‘লক’ খুলতে গিয়ে কোন কর্মচারী টাকা চাইলে সাথে সাথে তাকে জানালে তিনি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। তিনি জানান, বর্তমানে ভেন্ডিং স্টেশন ছাড়াও ৯টি ব্যাংকে রিচার্জ করা যায়। তবে ভেন্ডিং স্টেশনের দেয়ালে রাখা তালিকায় ৮টি ব্যাংকের নাম দেওয়া আছে। ব্যাংক গুলো হলো- স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক নয়াসড়ক, ন্যাশনাল ব্যাংক মিরাবাজার, এন.সি.সি ব্যাংক লাল দিঘীরপাড়, ইউ.সি.বি.এল ব্যাংক শিবগঞ্জ, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংক ইসলামপুর, এন.আর.বি.সি ব্যাংক বটেশ^র, এন.সি.সি ব্যাংক কুমার পাড়া ও ইউ.সি.বি. এল ব্যাংক উপশহর শাখা।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd