সিলেট ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৬ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:১৭ অপরাহ্ণ, জুন ৭, ২০১৮
ক্রাইম ডেস্ক :: সিলেট অঞ্চলের একজন সংসদ সদস্যকে খুন করার জন্য লন্ডনে এক ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন মো. জাহিদুল আলম কাদির নামের এক চিকিৎসক। লন্ডনে অবস্থানরত সেই ব্যক্তি কিংবা সিলেটের কোন সংসদ সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা হয়েছিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তাদের নাম-পরিচয় বের করতে পুলিশ কাজ করছে। এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, বিদেশি ১৫টি অিগ্নেয়াস্ত্রসহ এক চিকিৎসক ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের একটি টিম। গ্রেফতাররা হলেন- ডা. মো. জাহিদুল আলম কাদির ও তার স্ত্রী মাসুমা আক্তার।
মনিরুল ইসলাম জানান, তাদের কাছ থেকে ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১ হাজার ৬২২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে .২২ বোরের রাইফেল ৩টি, .৩০৩ রাইফেল ১টি, .৩২ বোর রিভলবার ৪টি, .২২ রিভলবার ১টি, ৭.৬৫ পিস্তল ৫টি ও .২৫ পিস্তল ১টি। উদ্ধারকৃত গুলির মধ্যে .৩০৩ রাইফেলের ১১০ রাউন্ড, .২২ রাইফেলের ১১০০ রাউন্ড, .৩২ রিভলবার ৩৫৮ রাউন্ড ও .২৫ পিস্তলের ৫৪ রাউন্ড রয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া ডা. জাহিদুল সিলেট অঞ্চলের একজন সংসদ সদস্যকে খুন করার জন্য চুক্তি করেছিলেন। এর আগেও তিনি বেশ কিছু কিলিংয়ে অংশ নিয়েছেন। পেশাদার খুনিদের কাছে যেসব অস্ত্র পাওয়া যায় সেই অস্ত্রগুলো তার কাছে পাওয়া গেছে। তবে লন্ডেনে কার সঙ্গে তার চুক্তি হয়েছে বা সিলেটে কোন এমপিকে খুনের চুক্তি করা হয়েছিল, সেটা জানার জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১৫ মে ডা. জাহিদুল আলমকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে দুটি পিস্তল এবং আট রাউন্ড গুলিসহ আটক করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় গত ৩ জুন গাবতলী এলাকা থেকে তার স্ত্রী মাসুমা আক্তারকে একটি বিদেশি পিস্তল ও চার রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়। পরে গ্রেফতারকৃত মাসুমা আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার স্বামী ডা. জাহিদুল আলমের কাছে আরো অবৈধ বিদেশি অস্ত্রের মজুদের তথ্য জানা যায়। পুনরায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ডা. জাহিদুল আলমের স্বীকারোক্তি অনুয়ায়ী আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে ময়মনসিংহ জেলার বাঘমারা এলাকার ডা. জাহিদুলের ফ্ল্যাট থেকে ১২ টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১৬১০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গুলি তার নিজ বাসায় বিশেষভাবে তৈরী একটি স্টিল কেবিনেটের পেছনে লুকানো ছিল।’
পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল জানান, ডা. জাহিদুল আলম ২০০২ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করার পর সরকারি বা স্থায়ী কোনো চাকরি করতেন না। তিনি গ্রামের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চাকরি করতেন। চিকিৎসা পেশার অন্তরালে বিভিন্ন উৎস থেকে অবৈধভাবে লাইসেন্সবিহীন বিদেশি অস্ত্র সংগ্রহ করে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করতেন। বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র তৈরী ও মেরামতে বিশেষভাবে পারদর্শী তিনি। এছাড়া বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে অস্ত্রের আকার আকৃতি পরিবর্তন এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও তিনি দক্ষ। পেশাদার কিলার হিসেবে বেশ কয়েক জায়গায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আগেই তাকে গত মাসে গ্রেফতার করা হয়। ডা. জাহিদুল আলমের সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সন্ত্রাসী এবং পেশাদার খুনিদের সখ্য রয়েছে।
তিনি আরো জানান, ডা. জাহিদুল বেশ কিছু অস্ত্র বৈধ অস্ত্র বিক্রেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। যেসব বৈধ অস্ত্র বিক্রেতা তার কাছে অবৈধভাবে অস্ত্র বিক্রি করেছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd