যেভাবে সাংবাদিককে ইয়াবা ও ফেনসিডিল দিয়ে ফাঁসানো হলো

প্রকাশিত: ৪:০২ পূর্বাহ্ণ, জুন ৭, ২০১৮

যেভাবে সাংবাদিককে ইয়াবা ও ফেনসিডিল দিয়ে ফাঁসানো হলো

ক্রাইম ডেস্ক :: পুলিশের বিরুদ্ধে মাদক ও মামলা ‘বাণিজ্য’, তল্লাশির নামে হয়রানি এবং লুটপাটসহ বিভিন্ন অনিয়মের খবর প্রকাশ করায় রাজশাহী চারঘাটের যুগান্তর প্রতিনিধিকে ইয়াবা ও ফেনসিডিল দিয়ে ফাঁসিয়েছে পুলিশ।

বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে চারঘাট থানা পুলিশের একটি দল এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

ঘটনার শিকার মিজানুর রহমান দৈনিক যুগান্তর ও সানশাইনের চারঘাট প্রতিনিধি।

সাংবাদিক মিজানের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে মনে করছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। পুলিশের এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ এবং অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক নেতারা।

চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, সাংবাদিক মিজান এ সময়ের সাহসী সন্তান। তিনি দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম সৈনিক হিসেবে অত্যন্ত সোচ্চার। পুলিশ যে ‘অপকর্মটি’ করেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমি এ ধরনের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি সাংবাদিক মিজানের নামে যেন মামলা না দেয়া হয় তার দাবি জানাচ্ছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে চারঘাট পৌরসভার সামনে দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে রাজশাহী নগরীতে ফিরছিলেন সাংবাদিক মিজান। এ সময় চারঘাট থানা পুলিশের এসআই শরিফুল ইসলামসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তার পথরোধ করেন। এরপর মিজানকে জোরপূর্বক থানায় নিয়ে যান।

থানায় নেয়ার পর এসআই শরিফুল, ওসি নজরুল ইসলামসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা চিৎকার করে একটি ব্যাগ দেখিয়ে বলেন ফেনসিডিল ও ইয়াবা পাওয়া গেছে। এ সময় ব্যাগে ২২ বোতল ফেনসিডিল ও ৭০ পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে এসআই শরিফুল উল্লেখ করেন। এরপর মিজানকে ওসির কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনা জানার পর চারঘাট প্রেসক্লাবের সভাপতি মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে সাবাদিকরা ঘটনাস্থলে যান।

মিজান বলেন, ইতিপূর্বে চারঘাট থানায় কর্মরত এসআই উৎপল ও শরিফুলসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, মামলা দিয়ে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোসহ বিভিন্ন অনিয়মের সংবাদ পরিবেশন করায় আমাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। বুধবার রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় সাংবাদিক মিজান চারঘাট থানায় ওসির কক্ষে আটক ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ২৮ জানুয়ারি ‘তল্লাশির নামে লুটপাট!’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তর এবং সানশাইনে একটি সংবাদ পরিবেশন করেন সাংবাদিক মিজান।

সংবাদটি যুগান্তর ও সানশাইন ছাড়াও অন্যান্য গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশ পেলে তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) মোয়াজ্জেম হোসেন ভুঁইয়া সদ্য বদলিকৃত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমিত চৌধুরীকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেলে এসআই উৎপলকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়। আর অন্য তিন এসআই শরিফুল ইসলাম, মামুনুর রশিদ ও তরিকুল ইসলাম বর্তমানে চারঘাট থানায় কর্মরত আছেন। অভিযোগ রয়েছে, এরপর থেকেই সাংবাদিক মিজানকে ফাঁসানোর জন্য উঠেপড়ে লাগে এ চার পুলিশ কর্মকর্তা।

সাংবাদিক মিজানকে হয়রানির ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী শাহেদ বলেন, মাদকবিরোধী অভিযান সরকারের মহৎ উদ্যোগ। এ ধরনের উদ্যোগকে বিতর্কিত করতে এবং কতিপয় পুলিশ সদস্য নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে গণমাধ্যমকর্মীদের কণ্ঠরোধ করতে চাইছেন।

আর এরই ধারাবাহিকতায় সাংবাদিক মিজানকে মাদকদ্রব্য দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি সাংবাদিক মিজানের মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় গণমাধ্যমকর্মীরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলে মন্তব্য করেন এ সাংবাদিক নেতা।

অভিযোগ অস্বীকার করে চারঘাট থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক মিজানের ব্যাগ থেকে ফেনসিডিল ও ইয়াবা পাওয়া গেছে। তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানোর অভিযোগ সঠিক না বলে দাবি করেন ওসি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

June 2018
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  

সর্বশেষ খবর

………………………..