সিলেট ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৪২ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৭
জানা যায়, তিনি সারা জীবন মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ও পোষনমুক্ত সমাজ গঠনের অধিকার আদায়ের লড়াই, সংগ্রাম করে গেছেন। একজন সাদা মনের মানুষ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবীদ হিসেবে ছিল তার জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট। এদেশের সব ক’টি ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে ছিল তার একনিষ্ঠ সক্রিয়তা।
১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ-অভ্যূথান ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের সাথে নেতৃত্ব দিয়ে পাক হায়েনাদের মোকাবেলা করেন তিনি। মানুষের অধিকার আদায়ে রাজপথে লড়াই করতে গিয়ে এই মহান নেতাকে দিনের পর দিন কারাবরণও করতে হয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের জন্য এমএনএ আবদুল হকের রাজনৈতিক ইতিহাস সময়ের আবর্তে বীরত্বগাথা উজ্জল ইতিহাস ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। মরহুম আবদুল হক ১৯৩০ সালে তৎকালিন সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ মহকুমার ছাতক থানাধীন ভাতগাঁও গ্রামের একটি সম্ভাবান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মৌলভী আবদুল ওয়াহিদ ও মাতা মাহেবুন নেছা। তিন ভাইয়ের মধ্যে পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান ছিলেন তিনি। তার মেজো ভাই মরহুম আবুল হাসনাত আবদুল হাই ছিলেন এই অঞ্চলের একজন গণমানুষের নেতা। স্বাধিনতা পরবর্তি সময়ে ছাতক-দোয়ারাবাজার নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৫ আসনে আবদুল হাই পরপর ৩ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এএনএ আবদুল হক ১৯৫১ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলি হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য সুনামগঞ্জ কলেজে ভর্তি হন। এইচএসসি পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। এসময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিম উল্ল্যাহ হলে জিএসও ও পরে ঢাকা হাইকোর্টে আইন পেশায়ও তিনি নিযুক্ত হন।
১৯৬৮ইং সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুলে তিনি কয়েক বছর শিক্ষকতাও করেছিলেন। সুনামগঞ্জের ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে আবদুল হক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৫৫ সালে তিনি গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ ১৩মাস কারাবরণ করেন। রাজপথের অগ্রসৈনিক আবদুল হক ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আ’লীগ থেকে বৃহত্তর (ছাতক-দোয়ারাবাজার-কোম্পানীগঞ্জ) ও জগন্নাথপুর থানা নিয়ে গঠিত পাকিস্তান আমলে জাতীয় পরিষদ আসনে এমএনএ আবদুল হক নির্বাচিত হন। ১৯৭১সালের ২৬ শে মার্চ কালোরাতে দেওয়ান ওবায়দুর রাজার বাড়িতে সুনামগঞ্জের প্রথম সারির নেতাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন আবদুল হক। পরের দিন দেওয়ান ওবায়দুর রাজাকে আহবায়ক করে গঠিত হয় ১৩ সদস্য বিশিষ্ট সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা পরিষদ। এ পরিষদের প্রথম সদস্য ছিলেন বাংলার আরেক কিংবদন্তি রাজনীতিবীদ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম আবদুস সামাদ আজাদ ও দ্বিতীয় সদস্য ছিলেন এমএনএ আবদুল হক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে ১৯৭১ সালে মরহুম আবদুল হক মহান স্বাধিনতা যুদ্ধে ৫নং সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্ঠা ও ছাতক, জগন্নাথপুর-দিরাইয়ের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মরহুম আবদুল হককে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৭২ সালে ছাতকের গোবিন্দগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করা হয় আবদুল হক স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ। ১৯৯৬ সালে আ’লীগ সরকারের আমলে এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের প্রচেষ্ঠায় মুক্তিযুদ্ধের ৫নং সেক্টর সদর দপ্তর বাঁশতলায় প্রতিষ্ঠা করা হয় এ নেতার নামে হক নগর ও একটি দৃষ্টি নন্দন স্মৃতিসৌধ। বর্তমান প্রজন্মের কাছে মরহুম আবদুল হকের গৌরব-উজ্জল ইতিহাস পৌঁছৈ দেয়া এখন সময়ের দাবি। গত ১৯ ডিসেম্বর সাবেক এমএনএ মরহুম আবদুল হকের ৪৬তম মৃত্যু বার্ষিকি উপলক্ষে গোবিন্দগঞ্জ আবদুল হক স্মৃতি কলেজ জামে মসজিদে ও মরহুমের গ্রামের বাড়ি ভাঁতগাঁওয়ে পৃথক মিলাদ-দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ দেশ প্রেমিক আবদুল হকের নামে পাঠাগার ও স্মৃতি সংসদ গঠনের মাধ্যমে, জীবন চর্চার সুযোগ করে নতূন প্রজন্মের কাছে তার গৌরব উজ্জল ইতিহাস তুলে ধরা সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন এলাকার মুক্তিকামি মানুষ।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd