সিলেট ১৬ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৫৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭
জৈন্তাপুর প্রতিনিধি : জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ তৈল, গ্যাস ও বালু পাথর। উপজেলার শ্রীপুর পাথর কোয়ারিও সারী নদীর বালু দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ও অবকাঠামোগত কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শ্রীপুর এবং সারী ও বড়গাং বালু মহাল থেকে সরকার প্রতি বছর প্রায় তিন কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে। এই উপজেলায় সরকারি রাজস্ব আয়ের বড় ৩টি খাত হচ্ছে হরিপুর এলাকার তৈল গ্যাস, আর শ্রীপুর পাথর কোয়ারি, সারী ও বড়গাং নদীর প্রাকৃতিক বালু মহাল। সম্প্রতি জৈন্তাপুর উপজেলার নলজুরী এলাকায় খাসি হাওর খালে নতুন করে পাথর কোয়ারির সন্ধান পাওয়া গেছে। স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, জৈন্তাপুর উপজেলায় সরকারি রাজস্ব আয়ের একটি নতুন ক্ষেত্র তৈরির সুযোগ হওয়ার সম্ভাবনা হয়েছে। পাথর কোয়ারি নিয়ে যদিও বিভিন্ন এলাকায় বহুমুখী জটিলতা রয়েছে, তার পরও নতুন পাথর কোয়ারি আবিষ্কার হওয়াতে স্থানীয় জনসাধারণ, উৎপাদনমুখী ব্যবসায়ী ও উপজেলা প্রশাসনের মধ্যে অনেকটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। এই উপজেলায় সরকারি রাজস্ব আয় বৃদ্ধির একটি নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। সিলেটের সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার বেশিরভাগ হতদারিদ্র মানুষ দিনমজুর এবং কৃষি কাজ করে তারা জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন। শীত মৌসুমে কয়েক হাজার মানুষ শ্রীপুর পাথর কোয়ারি এবং সারী নদী বালু মহালে বারকি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে পরিবার পরিজন চালান। সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত সংলগ্ন নলজুরী খাসি হাওর খালে খনিজ সম্পদ পাথর কোয়ারি আবিষ্কার হওয়াতে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় সচেতন বাসিন্দাগণ মনে করেন বৈধভাবে পাথর উত্তোলন করা হলে শ্রমিকদের নতুন কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ সৃষ্টিতে ব্যাপক সম্ভবনা রয়েছে। জানা গেছে, চলিত বছরের গত নভেম্বর মাস থেকে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সাপ্তাহ পর্যন্ত নলজুরী খাসি হাওর খালে স্থানীয় ৪০০-৫০০ শ্রমিক বিচ্ছিন্নভাবে অন্তত ২০-৩০টা গর্ত তৈরি করে সেচ মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের কাজ চালিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসার পর গত ৭ই ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌরীন করীমের নেতৃত্বে দ্রুত টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। ইতিমধ্যে স্থানীয় শ্রমিকরা কয়েকদিনে অন্তত ১০-১৫ হাজার গণফুট পাথর উত্তোলন করে মজুদ করেছেন। এসব মজুদকৃত পাথর থেকে খাস আদায় করা হলে অন্তত সরকারের লক্ষাধিক টাকা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।
সরজমিনে পরিদর্শন করে এবং ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মোকামবড়ি মৌজায় সরকারি ১নং খতিয়ানে ৪.০৪ (একর) জায়গা নদী হিসাবে রেকর্ডভুক্ত রয়েছে। এছাড়া খাসি খালের তীরবর্তী অনেক সরকারি খাস জায়গা, কিছু অপিত্ত সম্পত্তি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা রয়েছে। ভারতের নলজুরী বস্তির ছড়া থেকে বাংলাদেশের নলজুরী মোকামবাড়ি মৌজা হয়ে খাসি হাওর খালের অবস্থান। আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার থেকে অন্তত ২ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে নদীর দীর্ঘ রয়েছে। ভারতীয় ছড়ার পানির প্রবল স্রোতের কারনে নদীর বেশির ভাগ অংশ ভরাট গেছে। যার ফলে এখানে প্রচুর খনিজ সম্পদ পাথর মজুদ রয়েছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় নদী খনন করে নাব্য বাড়ালে ভারত থেকে বর্ষা মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে পাথর বাংলাদেশ অংশে চলে আসবে। এতে স্থানীয় কৃষকদের কৃষি উন্নয়ন কাজে সুবিধাসহ পানির চাহিদা পূরণ করা যেতে পারে। এছাড়া বৈধভাবে পাথর উত্তোলন করার অনুমতি দেয়া হলে এলাকার জনসাধারণ অর্থনৈতিক অনেকটা লাভবান হবেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী আতাউর রহমান বাবুল জানান, সরকারি রাজস্ব আয় বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে সরজমিনে খাসি হাওর খাল পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে জেলা প্রশাসক মহোদয় চাইলে বৈধভাবে পাথর উত্তোলন করার পরবর্তী ব্যবস্থা করতে পারেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, সরকারি ব্যবস্থাপনায় বৈধ ভাবে নলজুরী খাসি হাওর থেকে পাথর উত্তোলন করার অনুমতি দেয়া হলে এবং সনাতন পদ্ধতিতে শ্রমিক দিয়ে খনন কাজ করলে নদীর গভীরতা বাড়বে এবং সরকার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। এতে করে স্থানীয় শ্রমিকদের কর্মসংস্থান তৈরির একটি সুযোগ তৈরি হবে। স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা আবদুস ছাত্তার বলেন, নলজুরী খাসি হাওর খালে প্রচুর পরিমাণ পাথর রয়েছে। সরকারি রাজস্ব আয় বৃদ্ধির স্বার্থে এবং শ্রমিকদের কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ করে দিতে প্রশাসনিকভাবে বৈধভাবে পাথর উত্তোলন করলে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এলাকা আরো এগিয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌরীন করীম বলেন, জৈন্তাপুর উপজেলার প্রতিটি এলাকায় প্রচুর পরিমাণে খনিজ সম্পদ পাথর বালুসহ অনেক কিছু রয়েছে। নলজুরী খাসি হাওর খালে কিছু শ্রমিকরা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে আসছিলেন। প্রশাসন বিষয়টি জানার পর টাস্কফোর্সের যৌথ অভিযান চালিয়ে কোয়ারির যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd