দুই বছরে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ ৫২ ভাগ

প্রকাশিত: ২:৩৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০১৭

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : নির্মাণ শুরুর পর গত দুই বছরে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৫২ ভাগ। এ সময়ে করতে হয়েছে কারিগরি অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা। তারপরও সংশ্নিষ্টরা আশা করছেন, আগামী বছরের মধ্যে মূল সেতুর শতভাগ নির্মাণকাজ শেষ হবে। এরপর আনুষঙ্গিক কাজের জন্য প্রয়োজন হবে আরও কয়েক মাস। তারপরই খুলে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বহু প্রতীক্ষার পদ্মা সেতু।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রথম স্প্যান স্থাপনের পর ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের অবকাঠামো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমানে চলছে ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিয়ারের ওপর স্প্যান বসানোর কাজ। দ্বিতীয় স্প্যানটি বসলেই ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে। এভাবে একটির পর একটি স্প্যান বসে পূর্ণাঙ্গ রূপ নেবে পদ্মা সেতু।

তবে মূল সেতুর নির্মাণকাজ কাঙ্ক্ষিত গতিতে চললেও ধীরগতিতে চলছে নদীশাসনের কাজ। এই কাজে এক বছরের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে চীনা কোম্পানি সিনোহাইড্রোর সময় লেগেছে দুই বছর।

যতদূর এগিয়েছে সেতুর নির্মাণকাজ : ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। এরপর দিন-রাত মিলিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞে এগিয়ে চলেছে সেতুর নির্মাণকাজ। এক বছর পর ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয় পদ্মা সেতুর।

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, দুই বছর শেষে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ৫২ শতাংশ। একই সঙ্গে নদীশাসনের কাজ শেষ হয়েছে ৩৫ শতাংশ। তিনি আরও জানান, চলতি ডিসেম্বরেই পদ্মা সেতুতে দ্বিতীয় স্প্যান বসবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বিতীয় স্প্যানটি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিয়ারের ওপর বসাতে বর্তমানে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সেইসঙ্গে সেতুর তৃতীয় স্প্যান নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে। তৃতীয় স্প্যানটি স্থাপনের জন্য দুই প্রান্তে ‘গ্যারোটিং’-এর কাজ চলছে। সামনের জানুয়ারি মাসে এটি ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিয়ারের ওপর বসানো হবে। দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, প্রতিটি স্প্যান বসানোর আগে বিশেষজ্ঞ প্যানেল সবকিছু নিখুঁতভাবে যাচাই করছে, যাতে নূ্যনতম ত্রুটিও না থাকে।

নির্মাণকাজের চ্যালেঞ্জ : সংশ্নিষ্টরা জানান, মূল সেতুর ৪২টির মধ্যে ২৬টি পিয়ারের ১৫৬টি পাইলের নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে নতুন করে নকশা পরিবর্তন করা হচ্ছে ১৪টি পিয়ারের ৮৪টি পাইলের। প্রমত্তা পদ্মার তলদেশে বৈচিত্র্যময় মাটির গঠনের কারণে পাইলের নকশার এই পরিবর্তন করতে হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিবর্তিত নকশা চূড়ান্ত হয়ে যাবে।

নির্মাণকাজে সংশ্নিষ্ট একজন প্রকৌশলী জানান, মূলত ১৪টির মধ্যে চারটি পিয়ারের নিচের মাটির নরম অংশ নিয়ে চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। সেগুলোর গভীরতা ১২৯ মিটারের পরিবর্তে ১৩৫ মিটার করতে গেলে পাইলের টিউব পরিবর্তন করতে হবে। এসব বিবেচনায় গভীরতা বাড়ানোর বিকল্প হিসেবে প্রতিটি পিয়ারে ছয়টির পরিবর্তে সাতটি পাইল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্মাণকাজ চলার সময়ে চ্যালেঞ্জ আসতে পারে- এমন বিবেচনায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে মাওয়া প্রান্তে ৬ ও ৭ নম্বর পিয়ারে প্রায় দুই বছর আগে তিনটি করে বটম পাইল রাখা হয়েছে। নদীতে মূল সেতুর ২৪০টি পাইলের মধ্যে ৯৩টি স্থাপন করা হয়েছে। নদীর দুই পাড়ে সেতুতে ওঠার ট্রানজিশন পিয়ারে ৩২টি পাইলের মধ্যে ১৬টি স্থাপনের কাজ শেষ। সব মিলিয়ে ২৭২টি পাইল থাকছে পদ্মা সেতুতে।

নদীশাসন কাজ শেষ ৩৫ ভাগ : মূল সেতু নির্মাণের পাশাপাশি নদীর দুই তীরে বাঁধ দিতে নদীশাসনের কাজও চলছে। সংশ্নিষ্টরা জানান, ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নদীশাসনের কাজ শেষ হয়েছে ৩৫ ভাগ। এর আগে ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ হয়েছিল ২৬ ভাগ। সূত্রমতে, মূল সেতুর কাজের চেয়ে নদীশাসনের কাজ কিছুটা ধীরগতিতে এগোচ্ছে। নির্মাণকাজ শুরুর প্রথম বছরেই ৩৫ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে লেগেছে দুই বছর। আর গত এক বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ৯ ভাগ। আট হাজার ৭০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার নদীশাসনের কাজ করছে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো। এর আগে চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পেও এই চীনা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কাজে অস্বাভাবিক ধীরগতির অভিযোগ উঠেছিল। তাদের ধীরগতির কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়িত হতে পারেনি।

সংশ্নিষ্টরা জানান, নদীর গতিপথ বিবেচনায় আগামী পাঁচ থেকে সাত বছর পরে কাঁঠালবাড়ী এলাকায় নদীভাঙনের আশঙ্কা থাকায় তা প্রতিরোধে সেখানে ৮০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত ড্রেজিং করে তার নিচে বালুর বস্তা দেওয়া হয়েছে। সেতুর জাজিরা প্রান্তের পাচ্চর থেকে মাঝিকান্দি পর্যন্ত নদীশাসনের কাজ শেষ। আর পুরনো ফেরিঘাটের উজানে দেড় কিলোমিটার এলাকার নদীশাসন কাজ করা হয়েছে। আগামী বছর মাওয়া প্রান্তে মূল নদীশাসনের কাজ করা হবে। এর কারণ হিসেবে তারা জানান, মাওয়ায় প্রায় ১০ কিলোমিটার চর পড়েছে। আর উজানে প্রকল্পের অধিগ্রহণ করার জায়গা না থাকায় সেখানে নদীশাসনের কাজ করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাওয়া প্রান্তে সংযোগ সড়কের এবং সার্ভিস এরিয়ার কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। জাজিরা প্রান্তের কাজও শেষ পর্যায়ে। সংযোগ সড়কের কাজ করছে আবদুল মোনেম ও মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠান এইচসিএম কনস্ট্রাকশন।

আরও যা থাকছে সেতুতে : পদ্মা সেতুতে যান চলাচল ছাড়াও থাকবে আরও কিছু সুবিধা। গ্যাস সরবরাহের জন্য থাকবে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ। ছয় ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ বসবে অপটিক্যাল ফাইবার ও টেলিযোগাযোগ স্থাপনের জন্য। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনও থাকবে সেতুতে।

পদ্মা সেতুর উপরিকাঠামো কংক্রিট ও স্টিলের অবকাঠামোর সমন্বয়ে দুই স্তরে বিন্যস্ত হচ্ছে। সেতুর ওপরে থাকছে কংক্রিটের ঢালাই। সেখান দিয়ে চলাচল করবে সড়কের মোটরযান। আর এর নিচে স্টিলের অবকাঠামোতে নির্মিত হবে রেল পথ। পাঁচটি প্যাকেজে পদ্মা সেতুর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2017
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  

সর্বশেষ খবর

………………………..