সিলেট ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:৩৪ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৭, ২০১৭
ক্রাইম ডেস্ক : পঙ্গু হাসাপাতালে এক রোগীকে দেখতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসনদের আচরণ আবারও সমালোচনার মুখে পড়েছে। গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা বলছেন,কোন ঘটনা কার আগে কে প্রকাশ করবে-এই অসুস্থ ইঁদুর দৌড়ে পড়ে সাংবাদিকতা নীতিমালার বাইরে চলে যাচ্ছে এবং সেটি খুবই বিপজ্জনক। আর সাংবাদিক নেতারা বলছেন,এসব বিষয়ে ক্যামেরা পারসনদের সতর্ক করে দিতে প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব নিতে হবে।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর)পঙ্গু হাসপাতালে আহত এক ছাত্রীকে দেখতে যান সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেসময় তার সঙ্গে কয়েকজন ক্যামেরা পারসনও সেই কক্ষে প্রবেশ করেন এবং ছবি নিতে থাকেন। মন্ত্রীর ছবি নেওয়ার জন্য তাদের কেউ কেউ জুতা-স্যাণ্ডেল পরা অবস্থায় পাশের বেডে উঠে পড়েন। ক্যামেরা পারসনদের এই দৃষ্টিকটু প্রতিযোগিতার ছবি দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন চিকিৎসক ডা. এম সি পাল। তিনি সাংবাদিকদের এই দৃশ্য দেখে হতবাক হয়েছেন। ছবি শেয়ার দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘নিটো (পঙ্গু হাসপাতাল)-এ এক ছাত্রীনেত্রী ভর্তি। তার অপারেশন হয়েছে। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসেছিলেন দেখতে। আমরা ওই সময় রাউন্ড দিচ্ছিলাম। রাউন্ডের ফাঁকে সাংবাদিকদের তামাশা দেখলাম। শ’খানেক সাংবাদিক পারলে রোগীদের ঘারের ওপর উঠে ছবি তুলে। এই ছবিই তার নমুনা। পোস্ট অপারেটিভ অর্থোপেডিক কেস!!! এই দেশে এই সাংঘাতিকদের কাছ থেকে আর কী আশা করেন…।’
সাংবাদিকদের ‘সাংঘাতিক’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে গুরু দায়িত্বটা তাদেরই পালন করতে হবে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়াৎ ফেরদৌস বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নীতিমালা মানা হচ্ছে না। রোগীর জায়গায় ক্যামেরা নিয়ে যাওয়ারই অনুমতি থাকা উচিত না।সেটুকু সংবেদনশীলতা থাকা দরকার। সেটার তোয়াক্কা করছেন না সাংবাদিকরা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি রোগীদের অপমান করার শামিল সেটিও মনে রাখা দরকার।’
রোবায়াৎ ফেরদৌস আগের এরকম একটি ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, ‘সেইবার সিসিইউ এর মধ্যে ঢুকে মশারির মধ্যে ছবি তোলা দেখেছি। কার আগে কে দেখাবে,এটি তো ক্রেডিট না। ছবি থাকলেও যে অনেক সময় দেখানো যাবে না, এই বোধই তৈরি হয়নি।’
কেন এই ইঁদুর দৌড় প্রশ্নে সিনিয়র ক্যামেরা পারসন শামসুল হুদা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রথমত ক্যামেরা পারসনরা নিজেদের কাজ সম্পর্কে না জানা, অশিক্ষিত হওয়ার কারণে, আর দ্বিতীয়ত অফিসের চাপও থাকে। এ দুয়ের কারণে স্পটে গিয়ে ক্যামেরা পারসন কী করবেন, সেটি নির্ধারণ করতে পারেন না এবং এধরনের আচরণগুলো প্রতিনিয়ত ঘটতে দেখি। আমাদের যথেষ্ট সতর্ক হওয়ার আছে।’
ঘটনাটিকে দুঃখজনক উল্লেখ করে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোগীর প্রাইভেসি ও নিরাপত্তার বিষয় আছে। তাকে জীবানু দ্রুত আক্রমণ করার শঙ্কা থাকে। সেখানে যেই যাক না কেন গণমাধ্যমে যারা কাজ করেন, তাদের সতর্ক হওয়া উচিত। যেখানে জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে, ইনফেকশন তৈরি হতে পারে, সেখানে যাওয়ার দরকার কী।’ নীতিমালা, নৈতিকতা কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি নিজেদের সতর্ক হওয়ার দিকে মনোযোগী হতে বলেন। যারা কাজ করবেন তাদের সতর্ক হতেই হবে। এবং সতর্ক করে দেওয়ার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব এখানে আছে বলেও মনে করেন ফরিদা ইয়াসমিন।
অসুবিধা সৃষ্টি না করেও অ্যাসাইনমেন্ট কাভার করা যায় উল্লেখ করে সাংবাদিক নেতা সোহেল হায়দার চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অসুস্থ মানুষমাত্র বেদনাহত। রোগীর সেবায় কেবল তার স্বজনরা নয়, আমাদের সবারই সহমর্মী হওয়া উচিত। আমরা যারা মাঠে-ঘাটে কাজ করি, তারা সংবাদ সংগ্রহে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ঠিকই, কিন্তু সেটি কখনও অন্য কারও অসুবিধা সৃষ্টি করে নয়।’
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd