জালিয়াতি করে ৩ বছরে ঢাবিতে ভর্তি শতাধিক

প্রকাশিত: ৪:৩৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০১৭

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : প্রশ্নফাঁস ও ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতি করে প্রশ্নের উত্তর সমাধানের মাধ্যমে গত তিন বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী। প্রত্যেকটি পরীক্ষায় লেনদেন হয়েছে ৪ থেকে ৭ লাখ টাকা। শুধু ঢাবি নয়, সরকারি ব্যাংক নিয়োগে ও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিতে বড় চক্র জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পরীক্ষায় জালিয়াতির মাধ্যমে ছাত্র ভর্তির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ দুই হোতাসহ ভর্তি হওয়া ৭ ছাত্রকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানা গেছে। গত ১৪ নভেম্বর এ চক্রের ‘হোতা’ এনামুল হক আকাশকে গাজীপুর ও নাবিদ আনজুম তনয়কে রংপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের অর্গানাইজ ক্রাইম ইউনিট (সিআইডি)। এরপর তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া ৭ ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে সিআইডির সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির ঘটনার অন্যতম মূল হোতা নাভিদ আনজুম তনয় (২৪) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।

আর উন্মুক্ত বিশ্ববিদালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী আকাশ। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে বাইরে থেকে উত্তর বলে দিয়ে এবং পরীক্ষার দিন সকালে কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে আসছিল।

তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্ত আমরা শুধু ঢাবি নয়, ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষা ও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাতেও জালিয়াতির তথ্য পেয়েছি। সে বিষয়েও তদন্ত চলছে। প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রত্যেকটি ভর্তি পরীক্ষায় ৪ থেকে ৭ লাখ করে টাকার লেনদেন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এর আগে ২০ অক্টেবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অমর একুশে হল ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে অভিযান চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মহীউদ্দিন রানা ও আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করে সিআইডি।

আদালতে এই দুজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে ডিজিটাল ডিভাইস সরবরাহ এবং প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার মূল হোতা হিসেবে নাভিদ অনজুম তনয়ের নাম আসে। এছাড়াও ওই চক্রের আরো বেশ কয়েক সদস্যের নামও জানা যায় স্বীকারোক্তিতে।

স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে গত ১ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁও থেকে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিকে আটক করা হয়। নাফির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৩ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয় চক্রের আরেক হোতা আনিন চৌধুরী। তারাও ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ১৪ নভেম্বর রংপুরের কামাল কাছনা বাজার এলাকা থেকে তনয়কে ও গাজীপুর থেকে আকাশকে আটক করা হয়। এরপর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে ডিজিটাল জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে।

তনয় জানিয়েছে, ২০১৫ সাল এবং ২০১৬ সালে টাকার বিনিময়ে ডিজিটাল ডিভাইস এবং পরীক্ষার আগে কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে অবৈধ উপায়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সহায়তা করেছে।

তনয়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয় সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইম টিম। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুমতি নিয়ে প্রক্টোরিয়াল টিমের সহায়তায় অবৈধ উপায়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭ জনকে আটক হয়।

আটককৃতরা হলেন, তানভীর আহমেদ মল্লিক, মো. বায়জিদ, নাহিদ ইফতেখার, ফারদিন আহমেদ সাব্বির. প্রসেনজিৎ দাস, রিফাত হোসাইন এবং আজিজুল হাকিম। আটককৃত শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

যোগাযোগ করা হলে সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম বলেন, যেকোনো নিয়োগ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সময় জালিয়াত চক্র সক্রিয় হয়ে উঠে।

তিনি বলেন, এসব চক্র পরীক্ষায় জালিয়াতির জন্য মাস্টারকার্ডের মত দেখতে পাতলা এক ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করছে, যার ভেতরে মোবাইলের সিম থাকে। আর পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীর কানে থাকে অতি ক্ষুদ্র লিসেনিং কিট। এই ডিভাইসের মাধ্যমে বাইরে থেকে হলের ভেতরে পরীক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে উত্তর বলে দেয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতিতে সঙ্গে থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার রয়েছে বলেও জানান তিনি।

সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০১২ সাল থেকে মূলত এই জালিয়াত চক্রটি কাজ করে আসছে। তবে ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে শতাধিক ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়েছে। এছাড়া মেডিকেল ও ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষায় বড় একটি চক্রের আমরা সন্ধান পেয়েছি। এ নিয়েও কাজ চলছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2017
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..