দুই কোটি টাকা চেয়েছিলেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা

প্রকাশিত: ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৯, ২০১৭

ক্রাইম ডেস্ক : মাত্র আড়াই মিনিটের মিশনে বুধবার রাতে মানিকগঞ্জের নাগ জুয়েলার্স থেকে লুট করা হয়েছিল প্রায় সাতশ’ ভরি স্বর্ণ। পরে ককটেল ফাটিয়ে ও গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায় ডাকাতরা।
এর মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে মাত্র ১২ আনা স্বর্ণ। ৩ দিনেও বাকি স্বর্ণ উদ্ধার করতে না পারায় পুলিশের আন্তরিকতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এর চেয়েও বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে, স্বর্ণকারদের কাছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তার দুই কোটি টাকা চাঁদা চাওয়া।
৮ ও ৯ নভেম্বর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আবদুল আওয়াল ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সহকারী পরিচালক চৌধুরী আসিফ মনোয়ার ওই টাকা চান। শেষ পর্যন্ত তা ৭০ লাখ টাকায় রফা হয়। সে টাকা দিতে স্বর্ণকাররা দোকানপ্রতি চাঁদা তুলতেও শুরু করেন। এর মধ্যেই এ ডাকাতি হল।
জেলা স্বর্ণশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রঘুনাথ রায় যুগান্তরকে জানান, ৮ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে আবদুল আওয়াল তার কার্যালয়ে আমাকে ডেকে নেন। অবৈধ স্বর্ণের ব্যবসা করছি, চোরাই স্বর্ণ কিনছি, এসিড ব্যবসা করছি, ভারতীয় নাগরিক দিয়ে কাজ করাচ্ছি ইত্যাদি অভিযোগ তুলে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় একাধিক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন।
সভাপতি মো. আতাউর রহমান তোতা জানান, পরদিন আমাদের দু’জনকে (রঘু ও তোতা) ডেকে নেন আবদুল আওয়াল। এ সময় সেখানে আসিফ চৌধুরীও ছিলেন। তারা দু’জনে মিলেই দুই কোটি টাকা দাবি করেন। এ সময় তারা আমাদের মোবাইল ফোনও নিয়ে নেন।
তোতা জানান, আমরা টাকা কমানোর দাবি করি। কিন্তু অনড় কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে রঘুনাথ রায় ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। তা শুনে আসিফ চৌধুরী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘এটা কি ফকিন্নির ভিক্ষা?’ পরে আমরা পুলিশের ওই কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসি। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে আবারও আমাদের ডেকে নেন তারা। টাকার পরিমাণ কমিয়ে ৭০ লাখ টাকা ধার্য করে দেন।
রঘু জানান, বিষয়টি আমাদের ফোরামে আলোচনা করে জানাব বলে সেখান থেকে চলে আসি। পরে সরকারদলীয় এক নেতাকে বিষয়টি জানাই। এর মধ্যে স্বর্ণ শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে দোকান ভেদে ২ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমানের কাছে। তিনি তখন বলেছিলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। এছাড়া এনএসআইর মানিকগঞ্জে দায়িত্বরত অতিরিক্ত পরিচালককেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
মানিকগঞ্জে এনএসআইর উপপরিচালক আবদুল কাদের খান যুগান্তরকে বলেন, অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি। ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তদন্তে যদি অভিযোগের সত্যতা মেলে তাহলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আবদুল কাদের আরও বলেন, চৌধুরী আসিফ মনোয়ার এ মুহূর্তে ১০ দিনের ছুটি নিয়ে মালয়েশিয়ায় আছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল আওয়াল জানান, গোয়েন্দা সংস্থা তথ্যের ভিত্তিতে স্বর্ণ শিল্পী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অফিসে ডেকে আনা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল- এরা অবৈধভাবে ব্যবসা করেন, অনুমতি ছাড়া এসিড ব্যবহার করেন, চোরাই স্বর্ণ কেনেন। এসব বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। এ সময় এনএসআইর সহকারী পরিচালক চৌধুরী আসিফ মনোয়ার উপস্থিত ছিলেন। তাদের কাছে কোনো টাকা চাওয়া হয়নি। তবে আসিফ চৌধুরী পরে টাকা চেয়েছেন কিনা তা আমি জানি না।
নাগ জুয়েলার্সের ব্যবস্থাপক রাকিব হাসান অপু জানান, দিন যত যাচ্ছে লুট হওয়া মালামাল ফিরে পাওয়া নিয়ে আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছি।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ডাকাতি যখন হচ্ছিল সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানালেও ডাকাতি শেষ হয়ে যাওয়ার পর তারা ঘটনাস্থলে আসেন। ঘটনার ৩ দিন পার হতে যাচ্ছে অথচ আসামি ধরা নিয়ে তারা নানা ধরনের টালবাহানা করছেন। লুট হওয়া স্বর্ণালঙ্কার শিগগিরই উদ্ধার না হলে শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যাবেন ব্যবসায়ীরা।
নাগ জুয়েলার্সের আশপাশে একাধিক সিসি ক্যামেরা : নাগ জুয়েলার্সের ১০ গজের মধ্যে সরকারিভাবে লাগানো রয়েছে সিসি ক্যামেরা। তার ২০ গজের মধ্যে আরও একটি সিসি ক্যামেরা। সব মিলিয়ে ওই স্বর্ণপট্টিতে অন্তত ৫টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। ওই সব সিসি ক্যামেরা অনুসন্ধান করলে ডাকাতদের সব ধরনের তৎপরতা আর চিহ্নিত করার বিষয়টি সহজ হবে বলে জানান স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
একাধিক স্বর্ণ ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, ডাকাতি হওয়ার দু’দিন আগে কে বা কারা ওই সব সিসি ক্যামেরাস্থলে গিয়ে কি যেন একটা করেছে। আর সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নাগ জুয়েলার্সসহ বেশ কয়েকটি দোকানের ছবিও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে ছিলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা ইতিমধ্যে শনাক্ত হয়েছে। স্বর্ণ উদ্ধার ও জড়িতদের গ্রেফতার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। নাগ জুয়েলার্সের মালিক তপন নাগ জানিয়েছেন, যদি আসামিরা শনাক্ত হয়েই থাকে তাহলে কেন তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না? সূত্র -যুগান্তর

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2017
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..