কুলাউড়ায় ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণা

প্রকাশিত: ২:৪০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩

কুলাউড়ায় ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণা

ডেস্ক রিপোর্ট: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ঋণ দেওয়ার কথা বলে ‘নোভা ফাউন্ডেশন’ নামে একটি ভুয়া এনজিও প্রতারণা করে সাধারণ মানুষের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঋণ না দিয়ে ওই এনজিওর কর্মকর্তারা এলাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন।

 

খবর পেয়ে মঙ্গলবার শত শত ভুক্তভোগী ঋণ না পেয়ে এনজিও অফিসে জড়ো হন। এ সময় ভুক্তভোগীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিশৃঙ্খল আচরণ শুরু করলে স্থানীয় কাউন্সিলর আতাউর রহমান চৌধুরী সোহেল ও কুলাউড়া থানার এএসআই আবু তাহের ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।

 

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দেখানো হলেও তারা প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন প্রচার ও কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। পৌর শহরের বাদে মনসুর এলাকায় ইছহাক মিয়ার মালিকানাধীন বাসা থেকে কয়েক দিন ধরে প্রাতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলছিল। প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় দেখানো হয়েছে ঢাকার উত্তরার রানাভোলায়।

 

নোভা ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে মাঠপর্যায়ের কর্মী সজিব আহমদসহ তাদের লোকদের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দোকানদার, যুবক, চা শ্রমিক, গৃহকর্মী ও নিম্নআয়ের মানুষদের কাপড়ের ব্যবসা, মনোহারি, হার্ডওয়্যার, মৎস্য খামার, গরুর খামার, প্রবাসী ঋণ এবং যেকোনো বৈধ ব্যবসায় ঋণের লোভ দেখিয়ে সঞ্চয়ের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

 

ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের হিংগাজিয়া চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি মো. জামাল মিয়া বলেন, ‘আমাদের বাগানে ২৬ জনকে ঋণ দেওয়ার জন্য নোভা ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার খলিলুর রহমান সদস্য ভর্তি বাবদ প্রথমে ৬২০ টাকা করে নেন। এর মধ্যে যাদের ঋণের প্রস্তাব পাশ হয়েছে তাদের কারও কাছ থেকে প্রতি লাখে ১০ হাজার টাকা, দুই লাখে ২০ হাজার টাকা, ৫০ হাজারে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঋণ নেওয়ার জন্য অফিসে এসে দেখি কর্মকর্তারা অফিস তালাবদ্ধ রেখে পালিয়ে গেছে। আমরা এখন আমাদের টাকাগুলো কিভাবে পাব।’

 

পৌরসভার বিহালা গ্রামের বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজ অফিসে এসে দেখি তারা কেউই নেই। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, যাতে ওই প্রতারক চক্রকে ধরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং আমাদের প্রাপ্ত টাকাগুলো যেন ফিরে পাই।’

 

সরেজমিন দেখা গেছে, ওই প্রতিষ্ঠানের অফিস তালাবদ্ধ। অফিসের সামনে শত শত লোক তাদের ঋণ নেওয়ার জন্য ভিড় করেছেন; কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন উধাও। জানালা দিয়ে দেখা যায় অফিসের টেবিলে ঋণ দেওয়ার পাশ বই, রেজিস্টার খাতাসহ চেয়ার রয়েছে। এ সময় অফিসের সামনে থাকা প্রায় শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সঞ্চয় ও ঋণের পাশ বই পাওয়া গেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রায় ৫ শতাধিক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১৫-২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

 

বাসার মালিক ইছহাক মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রয়ারি) ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার খলিলুর রহমান আমার বাসার একটি ইউনিট ৫ হাজার টাকা মাসিক হিসেবে ভাড়া নেন। পরদিন তারা ভোরে বাসায় উঠেন। শনিবার আমার সঙ্গে বাসা ভাড়ার চূড়ান্ত চুক্তি করার কথা ছিল; কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি তারা বাসা তালাবদ্ধ করে পালিয়ে গেছে। ওই প্রতিষ্ঠান তার বাসা ভাড়া নেওয়ার আগে কুলাউড়ায় পাঁচ মাস ধরে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

 

এ বিষয়ে নোভা ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার খলিলুর রহমান ও মাঠকর্মী সজিব আহমদের মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

 

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতাউর রহমান চৌধুরী সোহেল বলেন, ‘আমার এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি থাকা সত্ত্বেও আমি বিষয়টি জানতাম না। এটি একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান। কুলাউড়ার বিভিন্ন এলাকার শত শত সাধারণ মানুষকে ঋণ না দিয়ে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আজ কুলাউড়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভুক্তভোগীরা ওই প্রতিষ্ঠানের অফিসের সামনে এসে জড়ো হলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি না হওয়ার জন্য আমি বিষয়টি পুলিশকে জানাই।’

 

তাছাড়া বাসা ভাড়া দেওয়ার সময় মালিককে ওই প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাগজপত্রাদি যাচাই করা উচিত ছিল বলে জানান তিনি।

 

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুছ ছালেক বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখা হয়। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজনদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2023
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728  

সর্বশেষ খবর

………………………..