সিলেট ২৪শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:৩৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০২২
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক: টানা ১৫ দিন চা শ্রমিকদের টানা কর্মবিরতি পালনের পর তাদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২৭ আগস্ট) চা বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শনিবার বিকেল ৪টার পরপরই গণভবনে এ বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা ৭টায়। ১৩ জন বাগানমালিক এ বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আহমেদ কায়কাউস এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, সবকিছু আলোচনার পর যেটি হয়েছে- সেটি হলো শ্রমিকদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করে দিয়েছেন ১৭০ টাকা।
এদিকে, নতুন মজুরি নির্ধারণের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে ও আগামীকাল (রবিবার- ২৮ আগস্ট) থেকে সিলেটের চা শ্রমিকরা কাজে ফিরবেন কি না এ বিষয়ে জানতে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেহেতু চা শ্রমিকরা আন্দোলনের সময় বলেছিলেন- প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিবেন সেটি তারা মেনে নিবেন। কথা অনুযায়ী তো তাদের কাল থেকেই কাজে ফেরার কথা।
তবে একটু ভিন্ন বক্তব্য দিলেন সিলেটে চলমান আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী চা শ্রমিক নেতা অজিত রায় ওরফে অজিত বারাইক। তিনি শনিবার চা বাগান মালিকদের সঙ্গে প্রধামন্ত্রীর বৈঠকের পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন- নতুন মজুরির বিষয়টি তো জানলাম। কিন্তু কাল সকাল থেকেই আমরা কাজে ফিরবো কি না সেটি এখনই বলতে পারছি না। কাল সকালে আমাদের সিলেটের সকল বাগানের চা শ্রমিকরা বৈঠকে বসবো। বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত সে অনুযায়ী আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে।
উল্লেখ্য, ১২০ থেকে ৩০০ টাকায় দৈনিক মজুরি উন্নীতকরণের দাবিতে সিলেটসহ সারা দেশের চা শ্রমিক গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলনে নামেন। ৯ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত তারা ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালনের পর গত ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন। সংকট নিরসনে শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হলেও সমাধান আসেনি।
গত ২০ আগস্ট মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দফতর অফিসে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেণ পাল বৈঠকে বসেন। তিনপক্ষীয় ওই বৈঠকে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে নেতারা এ সিদ্ধান্ত মেনে আসলেও শ্রমিকরা তা প্রত্যাখ্যান করে ৩শ’ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এ অবস্থায় ওই দিন রাতে সিলেট ভ্যালির শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসক। বৈঠকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখার আহ্বান জানানো হয় চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের প্রতি। সে আহ্বান মেনেও নেন স্থানীয় চা শ্রমিক নেতারা। কিন্তু সাধারণ চা শ্রমিকরা বেঁকে বসেন এবং সিলেটে পরদিন (২১ আগস্ট) দিনভর কর্মবিরতি পালন অব্যাহত রাখেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২১ আগস্ট শ্রীমঙ্গলে ফের মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন, শ্রমদপ্তরের প্রতিনিধি ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ১২০ টাকা মজুরি রেখেই কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এসময় আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চা শ্রমিক নেতারা। কিন্তু এ বৈঠকের পর সাধারণ চা শ্রমিকদের মাঝে দ্বিধা-বিভক্তির সৃষ্টি হয়। পরদিন নেতৃবৃন্দের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে সিলেটে শ্রমিকদের একাংশ কাজে ফেরেন, আর কর্মবিরতি অব্যাহত রাখেন একাংশ।
এ অবস্থায় গত ২১ আগস্ট (রোববার) রাতে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ফের চা শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। এ বৈঠকে চা শ্রমিকদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার আগ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখার ফের আহ্বান জানানো হলেও সে আহ্বানও প্রত্যাখ্যান করেন বৈঠকে উপস্থিত বিভিন্ন চা শ্রমিক ইউনিট এবং পঞ্চায়েত প্রধানরা। তবে পরদিন (সোমবার) কয়েকটি বাগানের চা শ্রমিক কাজে যোগ দিলেও মঙ্গলবার থেকে ফের সকল শ্রমিক কর্মবিরতি পালন করেন। সেই থেকে শনিবার পর্যন্ত টানা আন্দোলন চলে তাদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন- এবার ভরা মৌসুমে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে টানা ১৭ দিনের শ্রমিক আন্দোলনের ফলে কয়েক শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে চা-শিল্পে। টানা শ্রমিক আন্দোলনের প্রথম দিকে সব চা-বাগানে উত্তোলন করা কাঁচা চায়ের পাতা প্রক্রিয়াজাত করতে না পারায় পচে ও শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া চা প্ল্যান্টেশন এলাকা থেকে কচি চা-পাতা তুলতে না পারায় সেগুলোও এক থেকে দেড় ফুট লম্বা হয়ে গেছে। এ পাতার গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চায়ের জন্য প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব নয়।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd