সিলেট ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৬ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:২৪ অপরাহ্ণ, জুন ১৩, ২০২২
আব্দুল হালিম সাগর :: সিলেট নগরীতে সরকারি জমি নিয়ে মোখামুখি সিলেট সিটি ও কারাকর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে একাধিক উন্নয়নযজ্ঞ হয়েছে ভারত সরকারের অর্থায়নে। দৃষ্টিনন্দন এই ওয়াকওয়ে সহ একাধিক স্থাপনা উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী। তবে সিসিকের ইচ্ছে ছিলো, ধোপাদিঘীর পশ্চিমপাড়ে সিলেট পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিত্যক্ত জায়গায় একটি উদ্যান তৈরি করার। জায়গাটি পার্কের মতো করে তৈরি করে দিলে খোলা হওয়ায় কিছুক্ষণ অবকাশ যাপনের সুযোগ পাবেন নগরবাসী। কিন্তু এতে বাঁধ সেধেছেন সিলেটের কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামাল হোসেন। এমন অভিযোগ সিলেট সিটি করপোশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর। আর কারা কর্তৃপক্ষ বলছে কোন রকম নিয়ম নিতি না মেনেই কারাকর্তৃপক্ষে ভুমি নিতে তৎপরতা চালাচ্ছে সিলেট সিটি কর্তৃপক্ষ। মেয়র আরিফের অভিযোগ সাবেক অর্থমন্ত্রী সদ্য মরহুম আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ কে আব্দুল মোমেনসহ শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ ধোপাদিঘীর পশ্চিমপাড়ে উদ্যান করার সম্মতি দিলেও সিলেটের ডিআইজি প্রিজন কিছুতেই এ জায়গা ছাড়তে রাজি নন। এমনকি দিঘীর পশ্চিম পাড়ের ওয়াকওয়ের কয়েকটি বৈদ্যুতিক খুঁটিও তিনি ওই জায়গায় স্থাপন করতে দেননি। এছাড়া কিছুদিনের মধ্যে সেখানে মো. কামাল হোসেন দেওয়াল নির্মাণ করবেন বলে সিসিককে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে গত শনিবার ওয়াকওয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে কামাল হোসেনের প্রতি ক্ষোভ ঝাড়ার পাশাপাশি একাধিক অভিযোগ করেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। পুরাতন কারাগারের বাউন্ডারির বাইরে থাকা এ জায়গাটিতে উদ্যান করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলো সিসিক। মরহুম সাবেক অর্থমন্ত্রী মহোদয়ও এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ জায়গাটি কোনোভাবেই ছাড়তে চাচ্ছে না। আমরা মনে করি, এতে সিলেটের মানুষের অনুভুতিতে আঘাত করা হচ্ছে। মেয়র আরিফ আরও বলেন, মারা যাওয়ার আগে আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রী নিজে এসে জায়গাটি পরিদর্শন করে নির্দেশ দিয়ে গেছেন এটা করার জন্য। তিনি এসময় বলেছিলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এর অনুমতি নিয়ে এসেছি।’ এছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রসচিব মহোদয় জায়গাটি পরিদর্শন করে উদ্যান করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন, তারপরও সিলেটের ডিআইজি প্রিজন মো.কামাল হোসেন জায়গাটি ছাড়তে চাচ্ছেন না। এমনকি তিনি হুমকি দিয়েছেন-ওয়াকওয়ে উদ্বোধনের পরেই তিনি এখানে দেওয়াল নির্মাণ করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মহোদয়রা আসবেন এ জন্য ওই জায়গায় একটু বালি ফেলতে চেয়েছিলো সিটি কর্পোরেশন। এতেও বাধা প্রদান করেছেন সিলেটের ডিআইজি প্রিজন। তবে গত শনিবারের অনুষ্টানের পরপরই কারাকর্তৃপক্ষ সিটি কর্পোরেশনের নির্মিত কাষ্টঘর মোখি রাস্তাটি খুটি মেরে টিন দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। সেখান দিয়ে সাধারণ মানুষসহ সুইপার কলোনির সকল ধরণের মানুষের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে।
সূত্র জানায়, ধোপাদিঘীর পশ্চিমপাড়ে কারা কর্তৃপক্ষের প্রায় ৮ শতক জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সিলেট শহরতলির বাদাঘাটে কারাগার রিত হওয়ায় পুরাতন কারাগারের ওই জায়গা সহসাই কারা কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন পড়ছেনা তাই সেই প্রায় ৮ শতক জায়গায় উদ্যান করার উদ্যোগ নিয়েছিলো সিসিক। কিন্তু কিছুতেই জায়গাটি ছাড়তে রাজি নন সিলেটের ডিআইজি প্রিজন মো. কামাল হোসেন। কারা কর্তৃপক্ষের সেই ভুমিতে থাকা পরিত্যক্ত ঘরগুলো এখন সিলেটের নানা রকম অপরাধিদের নিরাপদ আস্থানায় পরিনত হয়েছে। সিলেটের সকল ছিনতাকারি ও মাদক সেবীদের নিরাপদ আস্থানায় পরিনত হয়েছে কারাকর্তৃপক্ষের পরিত্যক্ত ঘরগুলো যা নিয়ে অভিযোগের অন্তনেই নগরবাসীর।
তবে এ বিষয়ে সিলেটের ডিআইজি প্রিজন মো.কামাল হোসেন বলেন, নিয়ম এবং আইনের বাইরে যাওয়ার আমাদের আসলে সুযোগ নেই। আমরা বার বার সিলেটে সিটি কর্পোরেশনকে অনুরোধ করেছি,সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতিসাপেক্ষে সিটি কর্পোরেশন যতটুকু জায়গা নিতে চায় নিবে, তাতে তো আমাদের বাধা দেওয়ার কিছু নেই। কিন্তু নিয়ম ভঙ্গ করে এ জায়গা এভাবে দিয়ে দেওয়া আমার এখতিয়ারে নেই। বর্তমানে তো আমিও সিলেট নগরের বাসিন্দা। এই শহরে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বাড়লে আমিও তা ভোগ করবো। কিন্তু নিয়মের বাইরে গিয়ে এই জায়গায় সিসিককে কিছু করার অনুমতি দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেলে সিসিক যতটুকু জায়গা নিতে চায় নিবেন, কারণ, সিটি কর্পোরেশন কাজ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে, আর আমাদের কাজ এবং সম্পত্তি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাই এ বিষয়ে আমি ব্যক্তি গতভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd