সিলেট পাসপোর্ট অফিস ও দুর্নীতি আঞ্চলিক অভিধানে সমার্থক

প্রকাশিত: ১১:৪৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৪, ২০২১

সিলেট পাসপোর্ট অফিস ও দুর্নীতি আঞ্চলিক অভিধানে সমার্থক

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে অনিয়ম-দুর্নীতি নিতদিনের কান্ড কারখানা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আঞ্চলিক অভিধানে দুর্নীতি ও পাসপোর্ট অফিস এখন সমার্থক। একটি বলতে অন্যটিই বুঝায়। তাই সর্ব ক্ষেত্রেই ভোগান্তি আর ভোগান্তি। দালালদের খপ্পর ও ট্রাভেলস এজেন্সির দৌরাত্ম তো আছেই। দালাল ও মার্কা ছাড়া ফাইল দাখিল করলেই ভুল আর ভুল। কিন্তু মার্কার যুক্ত থাকলে ভুলটাই হয়ে যায় অটো শুদ্ধ।
সূত্রে প্রকাশ, সিলেট পাসপোর্ট অফিসের দালালদের দৌরাত্ম চরমে। সত্যায়িত করার সিলসহ সবই আছে দালাল এজেন্সির কাছে। দরকার শুধু টাকা। দালালদের কাছে পকেট ভর্তি টাকা দিলেই নিমিষে হয়ে যায় কাজ। না হয়- ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েও ফাইল জমা দেওয়া যায় না। বেলা ২টার পর ফাইল গ্রহণ এমেনকি অফিস কম্পাউন্ডে প্রভলেম বন্ধ হয়ে গেলেও গাদা গাদা ফাইল নিয়ে দালাল এজেন্সির লোকদের প্রবেশে কোন বাধা নেই।
নিয়মানুসারে আবেদন করে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পাওয়া রা যায় না পাসপোর্ট। প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় সিলেটে পাসর্পোট অফিসে দালালদের ব্যবসাও রমরমা। প্রবাস ফেরত নাগরিকরা জামেলা করতে চান না, তাই দালালরা যাই বলে তাই করতে বাধ্য হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাসপোর্ট জমা দিতে যাওয়া জনৈক ব্যক্তি জানান, সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। প্রথমে গেইটের বাইরে প্রায় ১ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি। পরে গেইট খুলে দিলে ফাইল চেক আপ, রোহিঙ্গা পরীক্ষা দিতেও আরো ২ ঘন্টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি। পাসপোর্ট আবেদন জমাগ্রহণকারীরা বলছেন, এখানে জনবল সংকট। প্রতিটি লাইনে ৪০০-৫০০ জন লোক দাঁড়িয়ে আছেন কিন্তু তাদেরকে মাত্র এক জন লোক সেবা দিচ্ছেন। যার কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়াতে হয়। গত ৩১ এপ্রিল পুরানো দুইটি পাসপোর্টের আদলে পাসপোর্ট নবায়ন করতে আবেদন দাখিল করেন সিলেটের একজন সিনিয়র সাংবাদিক। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে দালাল এজেন্সির মার্কা নেননি তিনি। দালালদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টরা তার কাছে মোটা অংকের টাকা চাইলে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন। ফলে আজ চার মাস ধরে তার আবেদন এপ্রেুাভ প্যান্ডিং করে রাখা হয়েছে। ফেন ম্যাসেজ কোনটাই গ্রেহণ করছেন না পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ। এমনকি কয়েকজন সাংবাদিকের আনুরোধও কাজে আসেনি। ফলে শিক্ষার্থী মেয়ের প্রেন্ট ভিজিট ভিসায় কানাডা যাওয়া হচ্ছে না সিনিয়র এ সাংবাদিকের।
জানা যায়, পাসপোর্ট অফিসে সরাসরি ফাইল জমা দেয়া যায় না। নানা অজুহাতে ফাইল ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ভূল না থাকা স্বত্ত্বেও ভূলের অজুহাতে ফাইল ফিরিয়ে দেওয়া চেকআপ সেক্টর থেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ট্রাভেল ব্যবসায়ী বলছেন, কতিপয় ট্রাভেলস এজেন্টদের সাথে আঁতাত করায় পাসপোর্ট অফিসে সরাসরি ফাইল জমা দেয়া যায় না। দালাল এজেন্টদের পৃথক পৃথক কোড আছে। এ কোড ফাইলের উপর লেখা না থাকলে, ফাইল ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে সাধারণ ভোগান্তিতে পড়েন। ধরনা দিতে হয় দালাল ট্রাভেল এজেন্টদের কাছে। সম্প্রতি একজন ফটো সাংবাদিক পাসপোর্ট আবেদন জমা দিতে গেলে কোড মার্ক না থাকায় তার আবেদন ফিরিয়ে সরাসরি দালাল এজেন্সির কোড নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে কোড গ্রহণ কওে নিয়েঢ গেলে মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যেই তার পাসপোর্ট ডেলিভারী দিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় গেল ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সিলেট পাসপোর্ট অফিসে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযানের পর দুদক জানায়- পাসপোর্ট অফিসের কর্তাব্যক্তিদের যোগসাজশে দালাল চক্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অফিসে নানা দুর্নীতির প্রমাণ পায় দুদক।
এরপরও থেমে নেই পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
সব চেযে বড় কথা এই ডিজিটাল যোগে পাসপোর্ট অফিসের ডিডিসহ কর্তাব্যক্তিদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে সাংবাদিক এমনকি সরকারের কোন সংস্থার ফোন রিসিভ করেন না তারা। ফলে অভিযোগের ব্যাপারে সিলেট আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্তাব্যক্তিদের বক্তব্য নেওয়া এ প্রতিবেদকের পক্ষে সম্ভব হয়নি।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..