ব্যাটারিচালিত রিকশা ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া : বিপাকে ক্রেতারা

প্রকাশিত: ১১:৫৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৪, ২০২১

ব্যাটারিচালিত রিকশা ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া : বিপাকে ক্রেতারা

বিশেষ প্রতিবেদক :: ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকদের সাথে প্রতিনিয়ত ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ লেগেই আছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) কর্মচারী ও পুলিশের মধ্যে। গত সপ্তাহেও নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল থেকে সিসিকের কয়েকটি মোটরযানের উপর হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকরা। সম্প্রতি ৩শ’ জনকে আসামী করে এসএমপি’র কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করে সিসিক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এতো কিছুরপরও নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা বিক্রি বন্ধ হচ্ছে না। বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ব্যাটারিচালিত রিকশা ব্যবসায়ীরা। দেদারসে বিক্রি হচ্ছে এসব রিকশা।
সিলেট মহানগরীতে ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও সিসিক ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে এসব যান দেদারসে বিক্রি হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শেখঘাটস্থ জিতুমিয়ার পয়েন্ট থেকে খোলিয়াটুলা, কুয়ারপার পয়েন্ট পর্যন্ত ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে সড়কে নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত রিকশা।
সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, উচ্চ আদালতে ২ বছরের সময় চেয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যবসায়ীরা আপিল করেছে। ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে-তাই ২ বছর পর তারা এই যান বিক্রি বন্ধ করে দেবে মর্মে আদালতে বলেছে। মহামারি করোনার জন্য আপিল শুনানী এখনো হয়নি। শুনানি হয়ে গেলে এর নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। আপাতত আইনি জটিলতায় এগুলো বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর শেখঘাট ও লামাবাজারে জনতা এন্টারপ্রাইজ, সাফা এন্টারপ্রাইজ, এসএ অটো, মেসার্স আমিনা টেডার্স, সিটি এন্টারপ্রাইজ, গরম দেওয়ান অটো, শাহপরান (রহ.) অটো, খুশী এন্টারপ্রাইজ, মা অটো ও সততা এন্টারপ্রাইজ নামের ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যাটারিচালিত মিশুক বা রিকশা, ইজিবাইক ও টমটম বিক্রি করছে। এছাড়াও দক্ষিণ সুরমায় শরীফ এন্টারপ্রাইজ ও জায়ান মটরসহ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করছে একই ধরনের যান। ৩ চাকার রিকশাকে বলা হয় মিশুক। ১২ ভোল্টের ব্যাটারিসহ একটি মিশুক বা রিকশার দাম ৭৫ হাজার টাকা। ব্যাটারি ছাড়া শুধু রিকশার দাম ৪৫ হাজার টাকা। প্রতিটি রিকশায় ৪টি ব্যাটারি থাকে। এই রিকশায় দু’জন যাত্রী বসতে পারেন। ৪ জন যাত্রী বসার রিকশার দাম ১ লাখ টাকা। ব্যাটারি ছাড়া এর দাম ৬০ হাজার টাকা। টমটম বা ইজিবাইকের দাম সর্বনিম্ন ১ লাখ ৬০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ১২ ভোল্টের টমটমের মধ্যে ৫টি ব্যাটারি থাকে। প্রতিদিন একটি রিকশা, টমটম বা ইজিবাইককে অন্তত ৭ থেকে ১০ ঘণ্টা বৈদ্যুতিক চার্জ দিতে হয়। পুরাতন হওয়ার পর একই যানকে প্রতিদিন ২ বার চার্জ দিতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোন ধরনের অনুমোদন ছাড়াই শুধুমাত্র সিসিকের ট্রেড লাইসেন্স-এর দোহাই দিয়ে এ সকল প্রতিষ্ঠান অবৈধ এই যান কোন বাঁধা ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার উত্তরা ও গাজীপুর থেকে নিয়ে আসা হয় এ সকল যান। সেখানকার আমদানিকারক চীন থেকে সরাসরি এই যান আমদানি করে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। আমদানিকারক এগুলো দেশের বিভিন্ন এলাকায় শো-রুম এর মালিকদের নিকট বিক্রি করেন। চীন থেকে ফিটিংস হয়ে আসে এই যান।
জানা গেছে, ২০১২ সালে সর্বপ্রথম সিলেট নগরীর সড়কে নামে এ সকল যান। কিছুদিন চলার পর এই যান নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা। চলার মধ্যে হঠাৎ উল্টে গিয়ে যাত্রীরা আহত হওয়া, চোরাই পথে চার্জ দেয়া, সড়কে যানজট সৃষ্টিসহ নানা কারণে এক সময় নগরীর সড়কে এ সকল যান নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
সূত্র জানায়, নগরীতে বৈধ রিকশার সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। এর বাইরে ১৫ থেকে ২০ হাজার অবৈধ রিকশা চলাচল করছে। এই অবৈধ রিকশার মধ্যে ৩ হাজারেরও বেশি হল ব্যাটারিচালিত রিকশা। দিনের বেলা নগরীর পাড়া-মহল্লার সড়কে এ সকল যান চলাচল করলেও সন্ধ্যার পরই তাদের অবস্থান পাল্টে যায়। রাত ১০টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত নগরীর প্রধান সড়কে এ সকল যান নির্বিঘ্নেই চলাচল করে। ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে চলাচল করে ব্যাটারিচালিত রিকশা। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটারি চালিত রিকশার উপস্থিতি ছিল নগরীর সকল সড়কে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর লাইসেন্স বা অনুমতি ছাড়া এই তিন চাকার যান্ত্রিক যান সড়কে চলাচল করতে পারে না। সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভাও এই যান্ত্রিক যানের পারমিট দিতে পারে না।
বিআরটিএ সিলেটের সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সানাউল হক জানিয়েছেন, টমটম বা ইজিবাইক, মিশুক বা রিকশা এগুলো সড়কে চলাচলের জন্য বৈধ যানবাহন নয়। এগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ যানবাহন। বিভিন্ন সময় বিআরটিএ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়ে এগুলো বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেছে। মাঝে মধ্যে অবৈধ এই যানের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ অভিযানও চালানো হয়। করোনার কারণে সম্প্রতি অভিযান হয়নি। অভিযান পুনরায় চালুর জন্যে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সিলেট অটোবাইক থ্রি হুইলার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ইফতেখার আহমদ সুমন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স নিয়ে ও সরকারকে প্যাকেজ ট্যাক্স দিয়ে আমরা ব্যবসা করছি। সিলেট নগরীতে এগুলো চলাচল করতে আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে ২০১৯ সালে একটি আপিল করা হয়। এ বিষয়ে এখনো উচ্চ আদালতের কোন আদেশ আসেনি।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..