সিলেট ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:২৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০২১
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সুনামগঞ্জের মধ্যনগর থানা পুলিশ ২৪ ঘন্টার মধ্যে একটি চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস নির্মম হত্যা কান্ডের হত্যা রহস্য উদঘাটন পূর্বক হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
খুন হওয়া সুভাষের বাড়ি জেলার ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নের ফারুকনগর গ্রামের উত্তরপাড়ায়। গত বুধবার(১৮ই আগষ্ট) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সুভাষের বাড়ির পূর্বপাশে মনাই নদী থেকে সুভাষের মরদেহ উদ্ধার করে মধ্যনগর থানা পুলিশ। শনিবার(২১শে আগষ্ট) দুপুরে মধ্যনগর থানা পুলিশ এ হত্যা রহস্য প্রকাশ করে।
জানাযায়,ষাটোর্ধ সুভাষ চন্দ্র সরকার প্রায় রাতেই বাড়ির সামনে নদীর ঘাটে তাদের নৌকায় ঘুমায়। কিন্তু হঠাৎ এক রাতে তাকে নৌকায় পাওয়া যাচ্ছিল না। সুভাষ সরকারের ছেলে সুজিত চন্দ্র সরকার (৩২) প্রতিবেশীদের নিয়ে খোঁজতে বের হয় তার বাবাকে। নৌকার অদূরে নদীর পানিতে গলায় ও পায়ে রশি বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায় সুভাষের মরদেহ। বাবার এমন ভয়নাক পরিণতিতে সুজিতের কান্না ও চিৎকার শুনে ছুটে আসে পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ স্থানীয়রা। সুজিত সাথে পুলিশে খবর দেয়।
খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুভাষের মরদেহ উদ্ধার করে। পরদিন সুভাষের মেয়ে নীভা রানী তালুকদার স্থানীয় থানায় মামলা করেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুজিতসহ সুজিতের মা আরতী রানী সরকার ও খেলা রানী সরকারকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী, ছেলে ও পুত্রবধূ সুভাষকে হত্যার দায় স্বীকার করে। পরে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। আর এতেই বেরিয়ে আসে হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য।
যে কারণে হত্যার পরিকল্পনা-
মধ্যনগর থানার ওসি নির্মল দেবের ভাষ্যমতে, বিকৃত মানসিকতার অধিকারী ও নারী লোভী ব্যক্তি সুভাষ শারীরিকভাবে ছিল শক্তপোক্ত। সুযোগ পেলেই সে যে কোনো নারীকে যৌন হয়রানী থেকে শুরু করে ধর্ষণ করতো। যা তার পুত্রবধূ তাদের জানিয়েছে। সুভাষের বিকৃত যৌনাচার থেকে রেহাই পায়নি পুত্রবধূ, ভাগ্নীসহ কোনো কোনো নারী প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজন। বিষয়টি নিয়ে সুভাষের পরিবারের লোকজন অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল। এ নিয়ে পরিবারের ঝগড়া ঝাটিও হয়েছে বেশ। দিনদিন সুভাষের বিকৃত আচরণ বেড়েই চলেছিল। পরিবারের লোকজন চেষ্টা করেও কোনো তাকে এ কাজ থেকে ফেরাতে পারেনি। ফলে তারা এসব নীরবে সহ্য করে যাচ্ছিল। এমতাবস্থায় তারা কি করবে ভেবে উঠতে পারছিল না। লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলতেও পারছিল না তারা। ফলে সুভাষের স্ত্রী, ছেলে ও পুত্রবধূ এ হত্যাকা-ের পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
যখন পরিকল্পনা ও হত্যা করা হয়-
সুভাষ বাড়ির পূর্বপাশে নদীর ঘাটে প্রায় রাতেই নৌকায় ঘুমায়। ১৮ আগস্ট অর্থ্যাৎ গত বুধবার সন্ধ্যায় সুভাষের স্ত্রী, ছেলে ও পুত্রবধূ সুভাষকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। হত্যার উপকরণ হিসেবে নিজেদের গোয়াল ঘর থেকে সংগ্রহ করা হয় রশি। রাত সাড়ে ১২টার দিকে পরিকল্পনাকারীরা সেই রশি দিয়ে সুভাষের পা বাঁধে এবং গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। যাতে কেউ সন্দেহ না করে সেজন্য সুভাষের ছেলে প্রতিবেশীদের জানায়, তার বাবাকে পাওয়া যাচ্ছে না। সুজিত প্রতিবেশীদের নিয়ে তার বাবাকে খোঁজতে থাকে। খোঁজাখোঁজির এক পর্যায়ে নৌকার খানিক দূরে নদী থেকে সুভাষের মরদেহ পাওয়া গেলে সুজিত মায়া কান্না শুরু করে এবং রাত দেড়টার দিকে পুলিশে খবর দেয়।
মধ্যনগর পুলিশের তৎপরতা-
মধ্যনগর থানার ওসি নির্মল দেব খবর পাওয়া মাত্রই ফোর্স নিয়ে সেখানে গিয়ে রাত আড়াইটার ধর্মপাশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকারের উপস্থিতিতে সুভাষের মরদেহ উদ্ধার করা করে। পুলিশ তখন থেকেই সুভাষের পরিবারের লোকজন, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের পর্যায়ক্রমে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। এদিকে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হলেও পুলিশ কৌশলে তার তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যেতে থাকে। পরদিন সুভাষের স্ত্রী, ছেলে ও পুত্রবধূ পুলিশের কাছে হত্যার স্বীকার করলে তাদের আটক করে আদালতে পাঠানো হয়।
গত শুক্রবার সুনামগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যাকারীরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
মধ্যনগর থানার ওসি নির্মল দেব বলেন, ‘ঘটনার পরদিন সুভাষের মেয়ে নীভা রানী তালুকদার বাদী হয়ে মধ্যনগর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেছিল। কিন্তু আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছি।
পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ‘হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতরা হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে। এ ব্যাপারে হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd