সিলেট ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:৩৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৪, ২০২১
নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেটে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনস্থ নগরীর বাগবাড়িস্থ ছোটমনি নিবাসে মাত্র ২ মাসের শিশুকে খুনের ঘটনায় ঘাতক আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকাকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত।
শনিবার (১৪ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে সুলতানাকে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সাইফুর রহমানের আদালতে প্রেরণ করা হয়। এসময় তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করলে শনিবার সন্ধ্যায় তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত।
আয়া সুলতানা গত ২২ জুলাই ছোটমনি নিবাসে ২ মাস ১১ দিন বয়সের নাবিল আহমদকে প্রথমে সজোরে ছুড়ে ফেলেন এবং পরে বালিশচাপা দিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দিবাগত (১৩ আগস্ট) রাতে ঘাতক আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। শুক্রবার তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানার এস.আই মাহবুব মন্ডল বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এদিকে, অবুঝ শিশু নাবিলকে হত্যার পর ঘটনাটি গোপন রাখেন ছোটমনি নিবাসের দায়িত্বে থাকা উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এ কারণে তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধেও নেয়া হতে পারে আইনি ব্যবস্থা।
জানা গেছে, গত ২২ জুলাই দিবাগত রাত ১১টার দিকে নগরীর বাগবাড়িস্থ ছোটমনি নিবাসে মাত্র ২ মাস ১১ দিন বয়সী শিশু নাবিল আহমদ কান্নাকাটি শুরু করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সেসময় শিশুদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকা।
বিরক্ত হয়ে একপর্যায়ে নাবিলকে বিছানা থেকে তুলে সজোরে ছুড়ে ফেলেন সুলতানা। এসময় বিছানার স্টিলের রেলিঙয়ে বাড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে যায় শিশুটি। প্রচন্ড আঘাতের ফলে তৎক্ষণাৎ জ্ঞান হারায় শিশু নাবিল। এরপর নাবিলের মুখের উপরে বালিশ চেপে ধরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন পাষণ্ড আয়া সুলতানা। এরপর প্রমাণাদি লোপাটের চেষ্টা করেন তিনি। তাকে সহযোগিতার করেন ছোটমনি নিবাসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার লক্ষ্যে ২৪ জুলাই কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা (নম্বর-৪৫) দায়ের করা হয়। ময়নাতদন্তের পর নাবিলের মরদেহ দাফন করা হয়। নাবিল হত্যার বিষয়টি আর আড়ালেই থেকে যায়।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) রাতে কোতোয়ালি থানা পরিদর্শনে আসেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি উত্তর) আজবাহার আলী শেখ। এসময় শিশু নাবিলের অপমৃত্যু মামলাটি তার দৃষ্টিগোচর হয়। বিষয়টি তঁঅর কাছে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় রাত ১১টায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাহবুবসহ পুলিশ ফোর্স নিয়ে বাগবাড়ির ছোটমনি নিবাসে ছুটে যান ডিসি আজবাহার আলী শেখ।
সেখানের সিসি ক্যামেরায় শিশু নাবিল খুনের পুরো ঘটনাটি রেকর্ড হয়েছিলো। ক্যামেরায় ধারণ হয় সুলতানা কীভাবে নাবিলকে ছুড়ে ফেলে এবং বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে।
সিসি ফুটেজ দেখে আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকাকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করার নির্দেশ দেন আজবাহার আলী শেখ। পরে সুলতানাকে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমকিভাবে নাবিলকে হত্যার বিষয়টি সঈকার করেন সুলতানা।
সুলতানাকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ শনিবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় বলেন, আয়া সুলতানা শিশু নাবিলকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যার বিষয়টি পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। পরে তাকে আজ (শনিবার) বিকেলে আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালতেও তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীর মাধ্যমে স্বীকারোক্তি প্রদান করেন। পরে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন বিজ্ঞ আদালত।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd