সিলেট ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৫ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ১:৫২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০১৯
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : বুধবার গভীর রাতে সিদ্ধেশ্বরীর সার্কুলার রোডে সড়ক থেকে উদ্ধার করা হয় ভার্সিটি ছাত্রী রুম্পার লাশ। তার পরিচয় নিয়ে সন্দেহটা কাটে একদিন পর। বৃহস্পতিবার দুপুরে রুম্পার স্বজনরা তার লাশ শনাক্ত করেন।
লাশটি পাওয়ার পর ধারণা করা হচ্ছিল– আশপাশের কোনো ভবন থেকে পড়ে যাওয়াই রুম্পার মৃত্যুর কারণ। কিন্তু পরে সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের ধারণা হয় রুম্পা মৃত্যুর আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।
রুম্পার রহস্যজনক মৃত্যুর চার দিন কেটে গেলেও এর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। রুম্পাকে কি খুন করা হয়েছে নাকি ভবন থেকে পড়ে মারা গেছেন, সেটি এখনও পরিষ্কার নয় পুলিশের কাছে। হত্যা না আত্মহত্যা– তা উদ্ঘাটনে পিবিআই, ডিবি ও সিআইডি আলাদাভাবে তদন্তকাজ চালাচ্ছে।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, সৈকতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে (সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডে একটি বাড়ির) সিসিটিভির ফুটেজ উদ্ধার করেছে রমনা থানা পুলিশ। ফুটেজে (বুধবার) সন্ধ্যা ৬টা ৪৭ মিনিটে ভবনে প্রবেশ এবং রাত পৌনে ১১টায় ভবন থেকে পড়ে যেতে দেখা গেছে।
রুম্পার সুরতহাল প্রতিবেদন বলছে, তার মেরুদণ্ড, বাঁ হাতের কনুই ও ডান পায়ের গোড়ালি ভাঙা। মাথা, নাক, মুখে জখম এবং রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল। বুকের ডান দিকে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে বৃহস্পতিবার রুম্পার লাশের ময়নাতদন্ত হয়। মেডিকেলের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, তরুণীর শরীরের আঘাত দেখে মনে হয়েছে ওপর থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর আগে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেলে তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করে বলা যাবে।
রমনা বিভাগের পুলিশের সহকারী কমিশনার এসএম শামীম বলেন, ‘ঘটনাস্থলের আশপাশের ভবন থেকে একটি সিসিটিভির ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে সন্ধ্যা ৬টা ৪৭ মিনিটে রুম্পাকে একটি ভবনে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তিনি আরও জানান, ফুটেজে রাত পৌনে ১১টায় ভবনের ওপর থেকে তাকে পড়ে যেতে দেখা যায়। পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, যে ভবন থেকে রুম্পা পড়েছিল ওই ভবনের তৃতীয়তলায় ছাত্রদের একটি মেস রয়েছে। ঘটনার পর পরই সেখানে গিয়ে মেসটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তিনি আরও জানান, রুম্পার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। তার মোবাইল ফোন থেকে একটি নম্বরে অনেক সময় ধরে কথা বলার প্রমাণ মিলেছে। ওই নম্বরের মালিককে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিডিয়া শাখা সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনায় রুম্পার বন্ধু স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর সাবেক ছাত্র আবদুর রহমান সৈকতকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শনিবার মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে ওই ছাত্রকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে রাজি হয়নি ডিবি পুলিশ।
এদিকে শনিবার সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডে ৬৪/২ নম্বর বাড়ির সামনে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি টিম। শনিবার সকালে তারা সেখানে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন এবং মামলার আলামত জব্দ করেন। তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে আছে বলেও জানান পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা।
এই মামলার তদন্ত করছেন রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। শিগগিরই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।
পিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সে কি সুইসাইড (আত্মহত্যা) করেছে না হোমিসাইডাল (হত্যার শিকার) হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে কাজ করছি। দ্রুত এ রহস্য উন্মোচিত হবে বলেও জানান তিনি।
রুম্পার পারিবারিক সূত্র জানায়, তিনি দুটি টিউশনি করে বুধবার সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন। পরে তিনি কাজ আছে বলে বাসা থেকে বের হন। বাসা থেকে নিচে নেমে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন ও পরা স্যান্ডেল বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে এক জোড়া পুরনো স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে তিনি বেরিয়ে যান। কিন্তু রাতে আর বাসায় ফিরেননি। স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাননি। বৃহস্পতিবার রুম্পার মাসহ স্বজনরা রমনা থানায় গিয়ে লাশের ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd