গোলাপগঞ্জে ২০১৮ সালে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি

প্রকাশিত: ৮:৫৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০১৯

গোলাপগঞ্জে ২০১৮ সালে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি

ফাহাদ হোসাইন :: গোলাপগঞ্জে ২০১৮ সালে হত্যাকান্ডের তেমন কোন ঘটনা না ঘটলেও বেড়েছে আত্মহত্যা। উপজেলার সব শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর বেশ কয়েকটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারে আতংকের সৃষ্টি করেছিল। পুলিশ ও বিভিন্ন স‚ত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের ২তারিখে প্রিয়াংকা রানী দেব (২৪) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই গৃহবধূ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউপির দত্তরাইল গ্রামের অরুণ দেব নাথের ছেলে দোবাই প্রবাসী টিটন কুমার দেব (৩৫) এর স্ত্রী ও বিশ্বনাথ থানার সদর ইউপির জানাইয়া গ্রামের দিলিপ কুমার দেবের মেয়ে। এ মাসের ৩তারিখে সুজেনা বেগম (৫৫) নামে এক বৃদ্ধা কীটনাষক পান করে আত্মহত্যা করেন। ওই বৃদ্ধা উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউপির দক্ষিণ রায়গড় গ্রামের আলাউদ্দিন মিয়ার স্ত্রী ছিলেন। এ ঘটনায় পুলিশ দাবি করে ওই বৃদ্ধা মহিলা ঔষধ মনে করে ভুলে কীটনাষক পান করলে তার মৃত্যু ঘটে। সর্বশেষ এ মাসের ১৪তারিখ আব্দুল খালিক (৩০) নামের এক রিক্সা চালক আত্মহত্যা করেন। সে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার রণকেলী উত্তর ঘোড়ামারা গ্রামের মৃত সিকন্দর আলী উরফে চিকই আলীর ছেলে। ফেব্রæয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে কোন ঘটনা না ঘটলেও এ মাসের ৯তারিখ মুন্নি বেগম (১৯) নামে এক তরুণী রহস্যজনক কারণে আত্মহত্যা করে। সে উপজেলার উত্তর বাদেপাশা ইউপির আমকোনা মোকামবাড়ীর আখলাছ আলীর ছোট মেয়ে। এ ঘটনায় পুলিশ একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে। এ বছরে মার্চ মাসের ১৮তারিখে হৃদয় বিদারক একটি ঘটনা ঘটে। এই দিন রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় বজ্রপাত থেকে গ্যাসের রাইজারে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডের শিশু সহ ৬জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। এ ঘটনাটি উপজেলাবাসীর ক্ষতের সৃষ্ট করে। ওনদিন রাতে উপজেলার লক্ষণাবন্দ ইউপির ক্লাববাজার টিলা বাড়ী এলাকায় লয়লু মিয়ার কলোনীতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার শরিফগঞ্জ ইউনিয়নের পনাইরচক গ্রামের মছকন্দর আলীর অন্ত:সত্ত¡া স্ত্রী সেবু বেগম (২২), সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার খালেরমুখ গ্রামের বাবলু মিয়া (৩৫), তার অন্ত:সত্ত¡া স্ত্রী তাহমিনা বেগম (৩০), তাঁর শিশু সন্তান তাহসিন আহমদ (২), গোলাপগঞ্জের নোয়াই দক্ষিণভাগ এলাকার মৃত ইসরাইল আলীর পুত্র সেবুল মিয়া (১৬) ও একই এলাকার শাহাব উদ্দিনের পুত্র ইয়া উদ্দিন (১৮) নিহত হন। এ বছরে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষ দিনে (৭ইএপ্রিল) কনিকা রানি মালাকার (২৪) নামে এক গৃৃহবধ‚র আত্মহত্যা করেন। সে উপজেলার ফুলবাড়ী ইউপির হেতিমগঞ্জ মোল্লাপাড়া গ্রামের মৃত মনোচঞ্জন মালাকারের ছেলে রাজু মালাকারের স্ত্রী। ঢাকাদক্ষিণ ইউপির দত্তরাইল ফারুক মিয়ার কলোনির বাসিন্দা। এরপর এ মাসের শেষ দিকে ২৯তারিখে গোলাপগঞ্জে আফজাল হোসেন (২৩) নামে এক সিএনজি অটোরিক্সা চালক আত্মহত্যা করেন। সে উপজেলার শরিফগঞ্জ ইউপির লামা মেহেরপুর গ্রামের মৃত ছমর আলীর ছেলে। এ বছরের মে মাস ও জুন মাস গোলাপগঞ্জ উপজেলা শান্ত থাকলেও জুলাই মাসের ২৬তারিখ আবু বক্কর সিদ্দিক এহিয়া (২০) নামে এক বিদ্যুৎ মেকানিক আত্মহত্যা করে। সে উপজেলার বাঘা ইউপির রস্তমপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের পুত্র।
আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসের কোন অস্বাভাবিক ঘটনা না ঘটলেও ১২ই নভেম্বর রাশেদা আক্তার মার্জনা (২১) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থীর রহস্যজনক কারণে আত্মহত্যা করে। ওই কলেজ শিক্ষার্থী গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষণাবন্দ ইউপির নিজাম উদ্দিনের মেয়ে ও ঢাকাদক্ষিণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী ছিল।
২০১৮ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ৫টি লাশ উদ্ধারে উপজেলা জুড়ে আতংকের সৃষ্টি হয়। এ বছরের অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিনে (৮ অক্টোবর) বাঘা ইউনিয়নের রস্তমপুরে কানাইঘাটের মাওলানা মুহিবুর রহমান (৫২) নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। এর কিছুদিন পর ২৮ অক্টোবর চৌঘরীস্থ সুরমা নদী থেকে ভাসমান অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করা হয়। এই লাশের পরিচয় পুলিশ পায়নি। এর দুদিন পর ৩০অক্টোবর বাঘা ইউনিয়নের তুড়–ুগাও গ্রামের সুরমা নদীর তীরে ভাসমান অবস্থান অবস্থায় চুনু মিয়া (৫০) নামের আরেক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। নভেম্বর মাসের ৩তারিখে উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের মাইজভাগ গ্রামে আমজদ আলী নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৮নভেম্বর সকালে উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়িনের রায়গড় লেচু বাগান থেকে অজ্ঞাত যুবতীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ মাসের ১৪নভেম্বর লক্ষনাবন্দের দক্ষিণভাগে কলেজ ছাত্রী রাশেদা বেগমের (২১) গলায় উড়না পেঁচানো ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রাশেদা দক্ষিণভাগ দেওপাড়া গ্রামের নিজাম উদ্দিন কুকিল মেম্বারের মেয়ে বলে জানা যায়। মেয়েটি প্রেম সংঘঠিত কারনে হয়তো আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশের ধারণা ছিল। সে ২০১৮সালে ঢাকাদক্ষিণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কলেজকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েছিল বলে জানা যায়। তবে বছরের শেষ মাসে (ডিসেম্বর) তেমন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুনুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, ২০১৭সালের চেয়ে ২০১৮সালে উপজেলার আইনশৃঙ্খলার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে উপজেলার সচেতন জনগণের জন্য। আত্মহত্যার প্রবণতা সম্পর্কে বলেন এ র্বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..