সিলেট ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:৩৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০১৯
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সারা দেশে ফের মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার হচ্ছে। গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। নির্বাচনের সময় কিছুটা শিথিল অভিযান ফের চাঙ্গা হয়ে উঠছে। দেশের কয়েকটি অঞ্চলে নির্বাচনের নিরাপত্তার সুযোগে তালিকাভুক্ত মাদক কারবারিরা এলাকায় ফিরেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে অভিযান জোরদারের সঙ্গে সঙ্গে তারা ফের গা ঢাকা দিতে শুরু করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের শীর্ষ মাদক কারবারি চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীদ রানা টিপুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এলাকায় ফিরে টিপু নির্বাচনের সময় প্রকাশ্যে গণসংযোগ করেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। এদিকে গত দুই দিনে ফেনী, কুমিল্লা ও মেহেরপুরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চার মাদক কারবারি নিহত হয়েছে।
প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত এক বছরের মাদকবিরোধী অভিযানে এক লাখ ১৫ হাজার মামলায় প্রায় দেড় লাখ কারবারি ও সেবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বছরের মে মাস থেকে পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্ট গার্ডসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। র্যাব-পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সারা দেশে তিন শতাধিক মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। বিগত সরকারের অভিযানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গত বুধবার নির্বাচন-পরবর্তী শুভেচ্ছা গ্রহণের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকবিরোধী অভিযান জিরো টলারেন্স নীতিতে চালানোর ঘোষণা দেন। জানতে চাইলে ডিএনসির মহাপরিচালক মোহাম্মদ জামালউদ্দিন আহমেদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা বিশেষ অভিযান অব্যাহত রেখেছি। নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি অন্যান্য কার্যক্রমও চলছে।’
গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় থেকে চেয়ারম্যান ও জেলার শীর্ষ মাদক সম্রাট শাহীদ রানা টিপুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ৩ জুন কালের কণ্ঠ’র প্রথম পাতায় ‘মাদকে ফুলে কোটিপতি চেয়ারম্যান টিপু’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথমে ফেনসিডিলের কারবার করলেও পরে ইয়াবার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। উত্তরাঞ্চলে ইয়াবার প্রসারে টিপুর নাম উঠে আসে সবার আগে। এলাকার অনেকের কাছেই তিনি ‘ইয়াবা টিপু’ নামে পরিচিত। অভিযানের সময় আত্মগোপনে চলে যান তিনি। দীর্ঘদিন পর গত এক সপ্তাহ আগে জেলায় ফিরে আসেন টিপু। নির্বাচনের আগে গণসংযোগে তাকে দেখা যায় বলে জানায় স্থানীয় সূত্র। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মডেল থানার ওসি জিয়াউর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকায় পুলিশ তাকে খুঁজছিল।’
বছর শুরুর তিন দিনে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দুই শতাধিক মাদক মামলার আসামি গ্রেপ্তারের তথ্য পাওয়া গেছে।
গত বুধবার রাতে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার মনা গ্রামে পুলিশের সঙ্গে কথিত গোলাগুলিতে সাইফুল ইসলাম (২২) নামের তালিকাভুক্ত এক মাদক কারবারি নিহত হয়। এদিকে মেহেরপুর সদরের বুড়িপোতা সীমান্তে গতকাল মাদক কারবারিদের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে মুসাইদ হোসেন (৩৭) নামের একজন নিহত হয়েছেন।
সূত্র জানায়, গত বছরের ৪ মে থেকে র্যাবের বিশেষ অভিযান শুরু হয়। ১৮ মে থেকে পুলিশ এ অভিযান জোরদার করে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মাদকের এক লাখ ছয় হাজার ৭৩০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার ৩২২ মাদক কারবারি ও সেবীকে। বছরের প্রথম ১১ মাসে পুলিশ ৯৩ হাজার ৭৪৭, র্যাব পাঁচ হাজার ৩৬৯, ডিএনসি ছয় হাজার ২৯০ এবং বিজিবি এক হাজার ২৯১টি মামলা করেছে। একই সময়ে পুলিশ এক লাখ ২২ হাজার ৪৮২, র্যাব ৯ হাজার ৭৩৩, ডিএনসি ছয় হাজার ৬৪৮ এবং বিজিবি এক হাজার ৪১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ১১ মাসে সারা দেশ থেকে তিন কোটি ৪৯ লাখ এক হাজার ৪৩৫ পিস ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানে তিন শতাধিক মাদক কারবারি নিহত হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, মাদকের ভয়াল থাবা থেকে দেশকে রক্ষা করতে পুলিশের অবস্থান সব সময়ই জিরো টলারেন্স। এ লক্ষ্যে বিশেষ অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনের সময় অভিযান কিছুটা স্থগিত থাকায় অনেক এলাকায় মাদক কারবারিরা ফিরতে শুরু করে। কারা সূত্রমতে, গত এক বছরে প্রায় ২২ হাজার মাদক মামলার আসামির জামিন হয়েছে। ফের অভিযান চাঙ্গা হওয়ায় মাদক কারবারিরা আবার গা ঢাকা দিতে শুরু করেছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd