জৈন্তাপুরে কোচিং ফির অজুহাতে ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ

প্রকাশিত: ৫:৪৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০১৮

জৈন্তাপুরে কোচিং ফির অজুহাতে ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ

Manual8 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : কোচিং ফির অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকার সাথে বাড়তি টাকা আদায় করছে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে না কোনো রশিদও। এতে বিপাকে পড়েছেন অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

তাদের অভিযোগ, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে এ অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ২০১৭ সালে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। আসন্ন এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণ চলাকালীন এ বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে।

ফরম পূরণে শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ফির সঙ্গে উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোচিং কিংবা অতিরিক্ত ক্লাস করানোর অজুহাত দেখিয়ে বাড়তি এক থেকে দুই হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে।

সরেজমিনে জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সময় কেন্দ্র ফি, স্কুলের উন্নয়ন ও কোচিং ফি জানুয়ারি থেকে অতিরিক্ত ৪ মাসের বেতন বাবদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকা এবং মানবিক ও ব্যবসায় বিভাগ ৩ হাজার ১০০ টাকা। এছাড়া নির্বাচনী পরীক্ষায় বিভিন্ন বিষয়ে অকৃতকার্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন হারে জামানত নেওয়া হচ্ছে। আমরা বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছি, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক ফরম পূরণ করতে হয়, ফরম পূরণের টাকা পরিশোধ করলেও রশিদ পাচ্ছি না।

শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা পরিবার থেকে টাকা নিয়ে আসি কিন্তু ফরম পূরণের টাকা জমা দিয়ে গেলেও অভিভাবকদের টাকা জমাদানের রশিদ দেখাতে পারি না। অনেক শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের টাকা পরিশোধের জন্য অভিভাবকরা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে অথবা ধার-কর্জ করে টাকা সংগ্রহ করে ফরম পূরণের টাকা পরিশোধ করছেন বলে জানান।

Manual7 Ad Code

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিভাবকরা জানান, একই উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে ফি আদায়ে লিপ্ত রয়েছে। তাদের এরকম কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে নিজেদের সন্তানদের ক্ষতি হবে। এই কারণে তারা মুখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছেন। বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর তদারকি করলে এমনটি হতো না বলে জানান সচেতন অভিভাবকরা। যদিও সরকারে উচ্চ পর্যায় থেকে বারবার কোচিং বাণিজ্য ও অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধের নির্দেশ দিলেও উপজেলা পর্যায়ে কোনভাবে তা বন্ধ হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তারা।

Manual2 Ad Code

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩ হাজার ৫ শত টাকা পর্যন্ত ফি আদায় করছে।

এছাড়া সারাদেশে এবার ফরম পূরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাড়তি টাকা আদায় বন্ধ করতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মাঠে নেমেছে। নির্ধারিত ফির বাড়তি টাকা আদায় করলেই দুদকের হটলাইন নম্বর ১০৬-এ অভিভাবকদের জানানোর জন্য বলা হয়েছে। অথচ এতো কড়াকড়ির পরও এই উপজেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই ফরম পূরণ চলাকালীন কোচিং কিংবা অতিরিক্ত ক্লাসসহ বিভিন্ন ফির অজুহাতে টাকা আদায় করছে।

Manual3 Ad Code

এ বিষয়ে জানতে হরিপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজির আলী সরকার জানান, বিজ্ঞান বিভাগে ৩ হাজার ১শ টাকা, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ফরম পূরণের ১ হাজার ৮শ ৫০ টাকা, ২ মাসের কোচিং ফি ৮শ টাকা, কেন্দ্র ফি ৩০০ টাকা ২০১৯ সনের জুন মাস পর্যন্ত মাসিক ফি আদায় করছি। ব্যবহারিক খাতার জন্য ১০০ টাকা, ইন্টারনেট খরচ ১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। আমাদের আরও বিভিন্ন খাত আছে এই কারণে আমরা রশিদ দিচ্ছি না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে রাংপানি ক্যাপ্টেন রশিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজন চন্দ্র বিশ্বাস ও জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহানা জাফরিন বলেন, বিজ্ঞান বিভাগে ৩ হাজার ২শ টাকা এবং মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে ৩ হাজার ১শ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ২ মাসের কোচিং ফি ১ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে এবং ২০১৯ সনের জুন মাস পর্যন্ত মাসিক ফি আদায় করছি, টিফিন খরচ ১০০ টাকা।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা জানান, স্কুল পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের যৌথ মতামতের ভিত্তিতে বোর্ড ফির অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে। ফরম পূরণের পাশাপাশি কোচিং ও অতিরিক্ত ক্লাসসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে শিক্ষার্থী প্রতি বাড়তি ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলেমান হোসাইনের সাথে ফোনে আলাপ করলে তিনি বলেন, ‘কোনভাবেই অতিরিক্ত ফি আদায় করা যাবে না। তারপরও কোন বিদ্যালয় অতিরিক্ত ফি আদায় করলে আমি কিছু জানি না। আমার সাথে হরিপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক আছেন উনার সাথে কথা বলেন। সরকারি নির্দেশনাটি আমি সকল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি যাতে কেউ অতিরিক্ত ফি আদায় না করে।’

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌরীন করিম বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণের নামে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে আমরা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

Manual4 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..