শাশুড়ির প্ররোচনায় ভায়রা খুন করেন কানাইঘাটের মুহিবুলকে!

প্রকাশিত: ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০১৮

শাশুড়ির প্ররোচনায় ভায়রা খুন করেন কানাইঘাটের মুহিবুলকে!

Manual2 Ad Code

গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি :: সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাঘায় কানাইঘাটের মাওলানা মুহিবুর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার নিহতের ভায়রা রিয়াজ উদ্দিনকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

জবানবন্দিতে রিয়াজ উদ্দিন এ হত্যাকাণ্ডের সাথে পিয়ারা বেগম ছালেহা, জামাল উদ্দিন ও তাজ উদ্দিন জড়িত বলে দাবি করেছেন।

Manual4 Ad Code

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, কানাইঘাট উপজেলার বাউরভাগ গ্রামের রইছ উদ্দিনের স্ত্রী (নিহতের শাশুড়ি) পিয়ারা বেগম ছালেহা (৬০), একই উপজেলার (নিহতের ভায়রা) ধলখিরাই গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের পুত্র রিয়াজ উদ্দিন (২৮), নিজ চাউরা দক্ষিণ গ্রামের মৃত এবাদুর রহমানের পুত্র জামাল উদ্দিন (২৬)।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই শংকর জানান, মুহিবুর রহমান হত্যার ঘটনায় রিয়াজ উদ্দিন গত মঙ্গলবার আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে। রিয়াজ উদ্দিন স্বীকারোক্তিতে সেসহ আরও কয়েকজন মিলে মুহিবুর রহমানকে হত্যা করেছে বলে জানায়।

রিয়া উদ্দিনের জবানবন্দির বরাত দিয়ে এসআই শঙ্কর জানান, আসামী সালেহা বেগম (নিহতের শাশুড়ি) তার পাগল প্রায় একটি মেয়েকে মুহিবুর রহমানের সাথে বিবাহ দেওয়ার চেষ্টা করলে মুহিবুর রহমান অস্বীকৃতি জানান। এরই মধ্যে মুহিবুর রহমান বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার বিষয়টি তার শাশুড়ি সালেহা বেগম ভালভাবে নেন নি। এজন্য আসামী রিয়াজ উদ্দিনসহ অন্যরা মিলে পরিকল্পিতভাবে মুহিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। পরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থলে ফেলে যাওয়া হয়।

Manual4 Ad Code

তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও বলেন, রিয়াজ উদ্দিনের দেওয়া তথ্য মতে গত ৩০ অক্টোবর শাহপরান থানা পুলিশের সহায়তায় মেজরটিলা পুরাতন র্যাব অফিসের সামনে থেকে জামাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয় স্বীকার করে এবং তার সহযোগী আসামীর বিষয়ে তথ্য প্রদান করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হলেও অপর আসামী তাজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ৮ অক্টোবর ভোরে গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বাঘা ইউপির রস্তমপুর এলাকার একটি ব্রিজের নিচ থেকে ভাসমান অবস্থায় পুলিশ মুহিবুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে। তার কোন পরিচয় না পাওয়ায় ময়না তদন্ত শেষে ওইদিন রাতেই বেওয়ারিশ হিসেবে সিলেট নগরীর মানিকপিরের টিলায় দাফন করা হয়। খুন হওয়া মুহিবুর রহমান (৫০) কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের গোরকপুর গ্রামের ফয়জুর রহমানের ছেলে। লাশের স্বজনদের কোন সন্ধান না পাওয়ায় ঘটনার দিন অজ্ঞাত লোককে আসামী করে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন এসআই মহিবুর রহমান। মামলা নং-১০। লাশ উদ্ধারের বিষয়টি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

Manual6 Ad Code

মুহিবুর রহমানের কোন সন্ধান না পেয়ে ২৪ অক্টোবর তার ভাই সাহাব উদ্দিন কানাইঘাট থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রি করেন। গত ২৮ অক্টোবর সকালে কানাইঘাট থানা পুলিশ গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে। পুলিশ এরই সূত্র ধরে নিহত মুহিবুর রহমানের পরিচয় সনাক্তের পর বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার ভায়রা রিয়াজ উদ্দিন ও শাশুড়ি পিয়ারা বেগম ছালেহাকে আটক করে।

Manual2 Ad Code

নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মুহিবুর রহমান ৪ অক্টোবর তার নিজ বাড়ী গোরকপুর গ্রাম থেকে সকাল ৯টার দিকে সিলেট শহরে তার ভায়রা রিয়াজ উদ্দিনের বাসায় যাওয়ার জন্য ফুফা শফিকুল হককে সাথে নিয়ে বের হন। দুপুরে মুহিবুর রহমান তার ফুফা শফিকুল হক নিয়ে ভায়রার বাসায় শাশুড়ি পিয়ারা বেগমের উপস্থিতিতে খাওয়া দাওয়া করেন। এর পর ঐ দিন ফুফা শফিকুল হক তার নিজ বাড়ীতে ফিরে আসলে ও মুহিবুর রহমান ভায়রার বাসায় থেকে যান। এর পর থেকে তার কোন সন্ধান না পেয়ে পরিবারের লোকজন মুহিবুর রহমানের শাশুড়ি পিয়ারা বেগম, ভায়রা রিয়াজ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, মুহিবুর রহমান ৪ অক্টোবর বিকেলের দিকে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন। মুহিবুর রহমানের কোন সন্ধান না পেয়ে ২৪ অক্টোবর তার ভাই সাহাবউদ্দিন কানাইঘাট থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রি করেন। মুহিবুর রহমানের স্ত্রী কানাইঘাট মহিলা কলেজের অফিস সহকারী সাবানা ইয়াসমিন শাম্মী ৯ মাস পূর্বে মারা যান। নিহত মুহিবুর রহমান ৩ সন্তানের জনক বলে জানা যায়।

এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি (প্রশাসন) একে এম ফজলুল হক শিবলি জানান, মুহিবুর রহমান হত্যার রহস্য অল্প সময়ে পুলিশ উদঘাটন করেছে। ঘটনার সাথে জড়িত তাজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..