সিলেট ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:০৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটে আবারও খেলার মাঠ দখল করে বসছে আস্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। সদর উপজেলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে আজ থেকে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী সিলেট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। খেলার মাঠ ভিন্নকাজে ব্যবহারে আইনী বাধা আর স্থানীয়দের আপত্তি সত্ত্বেও এ বাণিজ্যমেলার আয়োজন করছে সিলেট চেম্বার অব কমার্স।
গত বছর মার্চেই নগরীর শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠকে সদর উপজেলা শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম হিসেবে ঘোষণা করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। গত রোববার টেলিকনফারেন্সে এই মিনি স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্টেডিয়াম হিসেবে উদ্বোধনের চারদিন পর বৃহস্পতিবার ওই মাঠে গিয়ে দেখা যায় খেলার বদলে মাঠে চলছে মেলার আয়োজন। ইট-কাঠ বাঁশ দিয়ে চলছে স্টল নির্মাণ কাজ। আজ শুক্রবার বিকেলে অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন এ বাণিজ্যমেলার।
আপত্তি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রতিবছর বছর এই মাঠে আয়োজিত হয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। গতবছর এ মাঠে বাণিজ্যমেলার আয়োজন করেছিলো সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স। গতবছর মেলা আয়োজন নিয়ে সমালোচনার মুখে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ জানিয়েছিলেন, মিনি স্টেডিয়াম হয়ে যাওয়ায় এই মাঠ আর মেলার জন্য বরাদ্ধ দেওয়া হবে না। তবে এবারও বেলার জন্য বরাদ্ধ পেয়েছে চেম্বার। এবার মেলার আয়োজন নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সিলেট চেম্বার ও মেট্রোপলিটন চেম্বার। অবশেষে অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আয়োজনের দায়িত্ব পায় সিলেট চেম্বার।
ফের খেলার মাঠে মেলার অনুমতি প্রদান প্রসঙ্গে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক বলেন, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম সদর উপজেলার জন্য নির্মিত হলেও এটি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। মেলার জন্য তারাই অনুমতি দিয়েছেন। এতে আমাদের কিছু করার নেই।
জানা যায়, শাহী ঈদগাহ এলাকার এই খেলার মাঠটি আগে সদর উপজেলা খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিত ছিলো। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের পর সদর উপজেলা এটি ব্যবহার করলেও মাঠের তত্ত্বাধানের দায়িত্বে রয়েছে জেলা প্রশাসন।
খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধারের শ্রেণী পরিবর্তনে বাধা-নিষেধ আইনের ৫ ধরায় উল্লেখ রয়েছে- ‘খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন করা যাইবে না বা উক্তরূপ জায়গা অন্য কোনভাবে ব্যবহার করা যাইবে না বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তর করা যাইবে না।’
এর ব্যতয় ঘটালে অর্থদন্ড ও কারাদন্ডের বিধান রয়েছে আইনে।
আইনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও খেলার মাঠ মেলার জন্য বরাদ্ধ প্রসঙ্গে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সন্দিপ কুমার সিংহ বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে মেলার জন্য চেম্বারকে মাঠটি বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।
আইনে খেলার মাঠ অন্যকাজে ব্যাপবহারে আপত্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইনে খেলার মাঠ অন্য কাজে ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আছে। নিশ্চয়ই মন্ত্রণালয়ে যারা আছেন তাঁরা আমাদের থেকে আরও ভালো আইন জানেন। তাদের সুপারিশ থাকায় আমরা মাঠটি বরাদ্ধ দিয়েছি।
জানা যায়, সিলেট চেম্বারকে মেলা আয়োজনের অনুমতি ও মাঠ বরাদ্ধ দিতে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়কে অনুরোধ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এই সুপারিশ পেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রনালয় সিলেট চেম্বারকে মেলা আয়োজনের অনুমতি প্রদান করে ও শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম বরাদ্ধের জন্য সিলেট জেলা প্রশাসনকে সুপারিশ করে।
স্টেডিয়াম হিসেবে উন্নীত হওয়ার পরও খেলার মাঠটি মেলার জন্য বরাদ্ধ দেওয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে।
শাহী ঈদগাহ এলাকার বাসিন্দা উস্তার আলী বলেন, শহরের মধ্যে বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য তেমন খালি জায়গা নেই। এই একটি মাঠ ছিলো, সেটিতেও সারাবছর মেলা-হাট লেগে থাকে। ফলে বাচ্চারা আর খেলাধুলা করতে পারে না।
উস্তার আলী বলেন, প্রতিবছর চেম্বার একমাসের জন্য মেলা আয়োজনের কথা বলে দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত চালায়। মেলা শেষেও ইট সুরকী, বাঁশ কাঠ বছরজুড়ে মাঠের উপর পড়ে থাকে। ফলে এটি আর খেলার উপযুক্ত থাকে না। এবার এই মাঠটি মিনি স্টেডিয়ামে পরিণত করায় ভেবেছিলাম আর মেলার জন্য বরাদ্ধ দেওয়া হবে না। তবে এবার মেলার জন্য মাঠ বরাদ্ধ দেওয়া হলো।
এ ব্যপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কীম বলেন, বাণিজ্যমেলা যেকোনো বড় হল বা কনভেনশন সেন্টারেই আয়োজন করা যেতো। এভাবে দীর্ঘদিন একটি স্টেডিয়াম দখল করে মেলার আয়োজন করা একেবারেই অনুচিত।
তবে মেলার আয়োজক সংগঠন সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্টির সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ বলেন, আইনের নিষেধাজ্ঞা কেবল স্কুলের খেলার মাঠের জন্যই বলে জানি। সিলেটে মেলা আয়োজনের জন্য আর কোনো জায়গা না থাকায় এই মাঠেই আমরা মেলার এ আয়োজন করছি। নিশ্চয়ই আইনী বিষয় জেনেই প্রশাসন আমাদের মাঠটি বরাদ্ধ দিয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd