ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির এক নারী সদসসহ ৩ জন সক্রীয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব ১১’র একটি আভিযানিক দল।
মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) রাতে বন্দর থানাধীন সোনাকান্দা এলাকা গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে উগ্রবাদী বই ও লিফলেট উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও অভিযানকালে মিতুর ২ বছরের শিশু সন্তান রোজা আক্তারকেও উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনরগাঁয়ের জান্নাতুল নাঈম মিতু (১৯), তার দুই সহযোগী চট্টগ্রাম জেলার রাউজার থানার মেহেদী হাসান মাসুদ (২২) ও নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থানার আকবর হোসেন সুমন (৩০)।
বুধবার (১৮ এপ্রিল) সকাল ১১টায় র্যাব ১১’এর প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, গত ২ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের নুরুল ইসলাম তার মেয়ে-জামাই জুয়েলসহ র্যাব-১১ কার্যালয়ে এসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে যে, তার মেয়ে জান্নাতুল নাঈম মিতু(১৯) জঙ্গী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত এবং সে রাষ্ট্র বিরোধী ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডে যুক্ত হওয়ার জন্য তার ২ বছরের শিশু সন্তান রোজা আক্তারসহ ৩১ মার্চ বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তারা দ্রুত তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য অনুরোধ জানায়।
এই প্রেক্ষিতে র্যাব-১১ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে একাধিক অভিযান পরিচালনা করে। এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাতে বন্দর থানাধীন সোনাকান্দা এলাকা গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জান্নাতুল নাঈম মিতু (১৯) জানায় যে, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ফেইসবুক আইডি আল্লাহর সৈনিক এর মাধ্যমে জনৈক মেহেদী হাসান মাসুদের সাথে তার পরিচয় হয়। মেহেদী তাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্যাতিত মুসলিমদের পক্ষে কাজ করার আহবান জানিয়ে জসিম উদ্দিন রাহমানির উগ্রবাদী বক্তব্য সম্বলিত বিভিন্ন বক্তব্য সরবরাহ করে। এ প্রেক্ষিতে ধীরে ধীরে সে উগ্রবাদে আকৃষ্ট হলে তাকে জেএমবির দাওয়াত দেয়।
এছাড়াও নামায আদায় না করলে ও দাঁড়ি না রাখলে তার স্বামীকে পরিত্যাগ করা উচিত বলে বিভিন্ন ফতোয়া প্রদান করে। মেহেদী হাসান মাসুদ তাকে বাংলাদেশ সরকার ও ত্বাগুত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হওয়ার আহ্বান জানালে জান্নাতুল নাঈম মিতু তাতে সাড়া দেয়। এরপর থেকে মিতু তার ফেইসবুক আইডি ‘‘এসো ইসলামের পথে’’ এবং ‘‘আলোর পথ ইসলাম’’ থেকে বিভিন্ন যুদ্ধ, অস্ত্র ও গোলাবারুদের স্থিরচিত্র এবং ভিডিও সহ বিভিন্ন উগ্রবাদী মতবাদ প্রচার করতে থাকে। সে তার কাছের বন্ধু-বান্ধবদের কথিত জিহাদের দাওয়াত দেওয়া শুরু করে।
জান্নাতুল নাঈম মিতু তার স্বামী জুয়েলকে উগ্রবাদের পথে আসার আহবান জানিয়ে ব্যর্থ হলে স্বামীকে ত্যাগ করে কথিত শহীদি মৃত্যু বরণ করার লক্ষ্যে হিযরত করার পরিকল্পনা করে। তার পরিকল্পনার কথা মেহেদী হাসান মাসুদকে জানালে সে তাকে মাহরাম ছাড়া হিযরত করা যাবে না বলে জানায় এবং তার বন্ধু আকবর হোসেন সুমনকে মাহরাম হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব দেয়। এরপর মেহেদী তার বন্ধু আকবর হোসেন সুমনের সাথে মিতুর যোগাযোগ করিয়ে দেয়।
সুমনকে মাহরাম হিসেবে পাওয়ার জন্য জান্নাতুল নাঈম মিতুু তার স্বামী জুয়েলকে ডির্ভোস দেওয়ার পরিকল্পনা করে। সুমন ও মেহেদীর পরামর্শ অনুযায়ী জান্নাতুল নাঈম মিতু গত ৩১ মার্চ সোনারগাঁয়ের তার নিজ বাড়ি থেকে চট্টগ্রামে চলে যায়। সুমন ও মেহেদী তাকে সেখানে একটি ভাড়া বাসা ঠিক করে দেয়। তারা দুজনে জান্নাতুল নাঈম মিতুকে শহীদ হওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের কৌশল ও পরামর্শ প্রদান করে এবং জান্নাতুল নাঈম মিতুুকে শহীদি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতে বলে। পরে তারা নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও ঢাকার কয়েকজন জেএমবি সদস্যের সাথে যোগাযোগ করে সংগঠনের কর্মী সংগ্রহের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে সফরের পরিকল্পনা নেয়। এ লক্ষেই তারা নারায়ণগঞ্জে একত্রিত হয়েছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
Sharing is caring!